ঢেউয়ের পরে ঢেউ তুলে ক্লান্ত কর্ণফুলি। তার প্রতি দিনের প্রতিবাদে কান পাতেনি কেউ। বন্ধু বঙ্গোপসাগর, অসহায় চোখে দেখেছে, এমন এক উত্তাল নদীর বেতাল অবস্থা। সবাই ব্যস্ত পদ্মা-মেঘনা-যমুনাকে নিয়ে। তাদের আদরের শেষ নেই। অনাদরে শুধু চট্টগ্রামের প্রাণভোমরা কর্ণফুলি। নদী বিশেষজ্ঞরা এসেছেন, চিন্তা-ভাবনা করেছেন। ব্যস্, সেখানেই শেষ। সব পরিকল্পনাই কল্পনার পরী হয়ে আকাশে উড়েছে, মাটি ছোঁওয়ার ইচ্ছে দেখায়নি। শেষ পর্যন্ত অবহেলার পালা মিটল। নেকনজরে পড়ে গেল কর্ণফুলি। তাকে ঘিরেই বদলে যাবে চট্টগ্রাম। ধীরে ধীরে হয়ে উঠবে সাংহাই। ‘হাই-ফাই’ সিটি। সেকেলে খোলস ছেড়ে চমকে ওঠার চটক দেখাবে চট্টগ্রাম। দাম-নাম দুই-ই বাড়বে। এমনিতে ঢাকা ‘সুয়োরানি’। ‘দুয়োরানি’ চট্টগ্রাম। সেটা আর হচ্ছে না। ‘মহারানি’ হবে চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, কর্ণফুলির নীচে টানেল বানানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে চিনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ গড়ে উঠবে। আর তা আন্তর্জাতিক উৎকর্ষের উজ্জ্বলতায় নজর কাড়বে বিশ্বের।
এ কথায় আশ্বস্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের মানুষ। তাঁদের অভিমান দীর্ঘ দিনের। মুখে বলা হয়, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। কিন্তু, সরকারি ভাবে তার কোনও স্বীকৃতি নেই। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর, বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রামে নৌ-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনও ‘উইং’ বা ‘ডেস্ক’ নেই। ব্যঙ্ক-বিমার কোনও হেড অফিসও চট্টগ্রামে জায়গা পায়নি। নদী, পাহাড়, সমুদ্র ঘেরা, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরা চট্টগ্রাম এক কথায়, তুলনাহীন। তার আদরের নাম অনেক। ‘প্রাচ্যের সৌন্দর্যরানি’, ‘অর্থনীতির সিংহদুয়ার’, ‘প্রকৃতি-কন্যা’- আরও কত কী! নাম আছে, মান নেই!
আরও পড়ুন- আমার ছেলের মাংস খাচ্ছি! দু’দিন পর খেতে বসে ডুকরে উঠলেন মা
দেখুন গ্যালারি- চলুন, চট্টগ্রাম বেরিয়ে আসি
এখন বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ আমদানি, রফতানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ৬৫ শতাংশ রাজস্ব আসে সেখান থেকেই। বন্দরের পাশেই বিশাল তৈলাধার। এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন। সীতাকুন্ড, কালুরঘাট, মোহরা ভারী শিল্পাঞ্চল। আছে দু’টি গ্যাস ফিল্ড, ২২টি চা বাগান, চায়ের প্রধান নিলাম কেন্দ্র। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার বৃহত্তম শিল্প ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ, বেশ কয়েকটি রফতানিকারক শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজও চট্টগ্রামেই।
প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের পর, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, সমুদ্রতলে বিপুল খনিজ সম্পদ সংগ্রহের কাজও দ্রুত গতিতে এগচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম সুযোগ এটাই। এত কিছু দিয়েও কী পাচ্ছে চট্টগ্রাম? এ বার ধীরে ধীরে সেই পাওয়ার পর্ব শুরু্ হল। উদ্বোধন করা হয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের। পাঁচ হাজার কোটি টাকার ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের মুখে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল বা সমুদ্রপোত বানানোর কাজ চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে হবে আট লেনের। এই রাস্তাটা তেমন চওড়া নয় বলে জ্যামজট বেশি। তাই দু’টি শহরের মধ্যে দুরত্ব সামান্য হলেও, তা পেরোতে অনেক সময় লাগে। আট লেনের রাস্তা হলে সেটা আর হবে না। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সত্যি-সত্যিই গতি পাবে।
চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায় গভীর বন্দর-নির্মাণের কাজ কিছুটা আলগা হয়েছিল। প্রকল্পটা দ্রুত শেষ করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। মহেশখালিতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছাড়াও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। শহরের উন্নয়নে পুঁজি বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম উঠে দাঁড়ালে ঢাকারও লাভ। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ধরার মতো একটা শক্ত হাত পাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy