Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিশুর জিনের ‘দরজি’ জেলে

চিকিৎসাবিদ্যার বেআইনি প্রয়োগের অভিযোগে সেই চিকিৎসক হে জিয়ানকুইকে সোমবার তিন বছরের কারাদণ্ড দিল চিনের এক আদালত।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:২৪
Share: Save:

বিশ্বে প্রথম জিন পরিবর্তন করে শিশুর জন্ম দেওয়ার কৃতিত্বের দাবিদার হয়ে গত বছর শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। তবে চিকিৎসাবিদ্যার বেআইনি প্রয়োগের অভিযোগে সেই চিকিৎসক হে জিয়ানকুইকে সোমবার তিন বছরের কারাদণ্ড দিল চিনের এক আদালত। একই সঙ্গে তিন কোটি ইউয়ান (৪.৩ লক্ষ ডলার) জরিমানাও করা হয়েছে তাঁকে। রেহাই পাননি তাঁর দুই সহকারীও। তাঁদের মধ্যে এক জনকে দু’বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি ইউয়ান এবং দ্বিতীয় জনকে আঠারো মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ লক্ষ ইউয়ান জরিমানা করা হয়েছে।

গত বছর নভেম্বরে জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে তিনটি শিশু ভূমিষ্ঠ করিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল সাদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সের অধ্যাপক হে। শিশুগুলির মধ্যে দু’টি যমজ। হে দাবি করেছিলেন, ‘সিআরআইএসপিআর’ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিশেষ একটি জিন তাঁরা ‘ডিলিট’ করেছেন অর্থাৎ বাদ দিয়েছেন, যার ফলে বাবাদের শরীরে এইচআইভি থাকলেও তাঁদের সন্তানদের শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ হবে না।

তবে মানব ভ্রূণের জিনে এমন বদল ঘটানো বেআইনি বলে এ দিন ঘোষণা করেছে সেনজ়েনের এক আদালত। আদালতের রায়ে এ-ও বলা হয়েছে যে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার যোগ্যতাও নেই ওই তিন অভিযুক্তের। তাঁরা জেনেশুনেই চিনের নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করেছেন। ‘খ্যাতি ও ব্যক্তিগত লাভের আশাতেই’ তাঁরা ওই বেআইনি কাজ করেছেন বলেও উল্লেখ করে আদালত। বিষয়টির সঙ্গে অনেকের ব্যক্তিগত এবং গোপন তথ্য জড়িত থাকায় এই মামলার রুদ্ধদ্বার শুনানি চালানো হয়েছিল।

এই গবেষণা চালাতে আট জোড়া দম্পতিকে ‘ভলান্টিয়ার’ বা স্বেচ্ছেসেবক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন হে। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেক পুরুষই ছিল এইচআইভি আক্রান্ত। বিশেষ জিন বাদ দিয়ে মহিলাদের গর্ভে রাখা হয় ভ্রণ। আট মহলার মধ্যে সন্তানের জন্ম দেন দু’জন। জন্ম হয় মোট তিনটি শিশু। যমজ শিশুকন্যা ছাড়াও আরও তৃতীয় শিশুটির জন্মের কথা হে বিশ্বের কাছে লুকিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে আদালত।

গত বছরই হংকংয়ের বায়োমেডিক্যাল কনফারেন্সে দাঁড়িয়ে নিজের ওই গবেষণার কথা জানিয়েছিলেন ‘গর্বিত’ হে। কিন্তু তাঁর ঘোষণার হতভম্ব হয়ে যান বিশ্বের বিজ্ঞানী সমাজ। চিকিৎসার নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে অনেকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করায় চিনকে। বে যে ‘সিআরআইএসপিআর’ পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বলেছেন তা একেবারেই নিরাপদ নয় বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার জেনেটিক্সের অধ্যাপক কিরন মুসুনুরু। অধিকাংশ সময়েই যে জিনটি ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করা হয়, তার জায়গায় তার পাশের জিনের উপরে কোপ পড়ে। যাতে জিনের অপ্রত্যাশিত বদল তথা ‘মিউটেশন’ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে ভয়ের বিশেষ একটি কারণ হল, খুব বেশি কিছু না শিখেও সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ ‘সিআরআইএসপিআর’ পদ্ধতি ব্যবহার করে জিনের-দর্জি হয়ে উঠতে পারে। মানুষের জিনে এমন কাটছাঁট করতে গিয়ে গোটা মানব সমাজই বিপন্ন হতে পারে। এমনকি মানুষ নামে প্রজাতিটিই লোপ পেতে পারে। এই সব আশঙ্কায় প্রবল সমালোচনা শুরু হয় বিশ্ব জুড়ে। অবশেষে হে ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে বেজিং। এই ধরনের গবেষণার উপরে জারি হয় স্থগিতাদেশ। সাদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স থেকেও বরখাস্ত করা হয় হে-কে।

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই মানব-জিনে পরিবর্তন ঘটানো বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। চিনে ২০০৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রজননের কারণে জিনে বদল ঘটানো বেআইনি। যদিও অন্যান্য প্রয়োজনে তা করার ছাড়পত্র মিলতে পারে। চলতি মাসের গোড়ায় হে-র মূল গবেষণাপত্রটি প্রথম বার প্রকাশের পর বিজ্ঞানীরা জানান, ওই যমজ কন্যাসন্তানের জিনে যে পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন হে, একটু নড়চড় হলেই বড় বিপদ হতে পারত।

শাস্তির খাড়া নেমে আসবে জেনে হে কাজ করেছেন, তাতে তাঁর উদ্দেশ্যটি পূরণ হয়ছে কি না, অর্থাৎ ওই শিশু তিনটির শরীরে সত্যিই এইচআইভি-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না, তার প্রমাণ এখনও মেলেনি। ভবিষ্যতেও কি মিলবে এর উত্তর? জানেন না কেউ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy