যেন দ্বৈরথ!
কেউ নিয়ে আসে যুদ্ধজাহাজ। কেউ বা উৎক্ষেপণ করে সুপারসনিক স্ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পাশাপাশি চলে আলাপ আলোচনায় সমস্যার জট খোলার চেষ্টা।
দক্ষিণ চিন সাগরে জলসীমার দখল নিয়ে আমেরিকা আর চিনের অস্ত্রে শান দেওয়ার আবহেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং আলোচনায় বসতে চলেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইং-জেয়ুর সঙ্গে। দুই দেশের মধ্যে যা প্রথম ঘটতে চলেছে। যে তাইওয়ানকে মজা করে আমেরিকার ‘৫১তম প্রদেশ’ নামেও অনেকে ডাকেন।
জন্মের পর থেকেই আলাদা দেশ হিসেবে যে তাইওয়ানকে মানতে চায়নি কমিউনিস্ট চিন। করবেই বা কেন, মাওয়ের নেতৃত্বে চিনে কমিউনিস্ট সরকার আসার সময়ে চিয়াং কাইশেকের দলবল পালিয়ে এসে ঘাঁটি গাড়েন তাইওয়ান দ্বীপপুঞ্জে। তার পরে মূলত আমেরিকার সাহায্যে এখনও টিঁকে আছে পৃথক তাইওয়ান। নইলে কবেই চিনের প্রবল সামরিক শক্তির কাছে নতি স্বীকার করতে হত তাকে। মাঝেমধ্যেই তাইওয়ানকে দখলে নেওয়ার হুমকি দেয় চিন। পাল্টা আসে আমেরিকার আশ্বাস। তবে শত আশ্বাস সত্ত্বেও রাষ্ট্রপুঞ্জে তাইওয়ানের আসনটি ধরে রাখা যায়নি। সেই ১৯৭১-এ আসনটি চিনের কাছে হারিয়েছে তাইওয়ান। এখন রাষ্ট্রপুঞ্জের মাত্র ২১টি দেশের সঙ্গে তাইওয়ানের বৈদেশিক সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্ক আরও গুলিয়েছে ২০০৫-এ। আইন এনে চিন তাইওয়ানের স্বাধীনতার চেষ্টাকে বেআইনি আখ্যা দেয়। তাইওয়ান এমন চেষ্টা চালালে সামরিক অভিযানের কথাও সেই আইনে আছে।
চিন আর তাইওয়ানের এই ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ পরিস্থিতি পাল্টায় ২০০৮-এ। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মা ইং-জেয়ু। ২০০৯-এ দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রথম সরাসরি কথা হয়। তার পরে জল অনেক গড়িয়েছে। সেই সূত্র ধরেই এ বার মুখোমুখি আলোচনায় বসছেন দু’দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারী।
কিন্তু কেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে তাইওয়ানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর নজর দিতে হয়। সামনেই তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এখনও পর্যন্ত করা সমীক্ষা বলছে, এগিয়ে আছেন তসাই ইং-ওয়েন। যাঁর দল তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে। আর এখানেই ভয় চিনের। কারণ, তসাই জিতলে স্বাধীনতার ঘোষণার দিকে এগিয়ে যেতে পারে তাইওয়ান। আর সে ক্ষেত্রে অনিবার্য হয়ে উঠবে সামরিক সঙ্ঘাত। আসতে হবে আমেরিকাকে। সেখানে আবার যুযুধান হয়ে উঠবে চিন আর আমেরিকা। তসাই এর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখতেই আগ্রহী নয় চিন। তসাই-কে ঠেকাতে আরও বেশি করে মা-এর দিকেই ঝুঁকছে চিন।
মা-এর দিকে চিনের ঝোঁক কতটা, তা বোঝাতেই এই শীর্ষ সম্মেলন। তা ছাড়া মা-এর চিন-নৈকট্য নিয়ে কোনও লুকোছাপা নেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই চিনের কাছাকাছি গিয়েছেন মা। স্থিতাবস্থা বজায় রেখেই চিনের সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে আরও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে তিনি আগ্রহী। আর নির্বাচনে মা-এর দল সেটাই তুলে ধরতে চাইছে। এই শীর্ষ বৈঠক যেন মা-এর নীতিতে চিনের সিলমোহর। তাইওয়ানে স্থিতাবস্থাই আপাতত চিনের কাম্য। কারণ, এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি ময়দানে আমেরিকার সঙ্গে পেশি আস্ফালনে নামা কাম্য তো নয়ই, কার্যত বেশ কঠিন।
কিন্তু শীর্ষ বৈঠকের ফল উল্টোও হতে পারে। মা-এর চিন নীতিই তার দলের জনপ্রিয়তা হারানোর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। এই শীর্ষ বৈঠক চিন-বিরোধীদের পালে আরও হাওয়া দেবে। ফলে নির্বাচনী বৈতরণী পার করা আরও সহজ হবে। আর সঙ্কট ঘনাবে। যাতে বিপদ আমেরিকারও।
নানা ক্ষেত্রে নানা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে মার্কিন সেনা। তার উপরে তাইওয়ান যুক্ত হলে মুশকিল। কারণ, সঙ্কটে পড়লে তাইওয়ানকে না বলা আমেরিকার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে বিষয়টি হয়ে দাঁড়াবে গোদের উপরে বিষ ফোঁড়ার মতো। ফলে এই শীর্ষ বৈঠকের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে দুই মহাশক্তিধরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy