সেই ‘কোয়রান্টিন ক্যাম্প’
ছোট্ট একফালি ঘর। তাতে রয়েছে একজনের কোনও মতে শোওয়ার জন্য একটা কাঠের খাট। একেবারে ছোট একটা টেবিল, চেয়ার খাওয়ার জন্য। আর দুই বাক্স জলের বোতল, ২১টা দিনের জলপিপাসা মেটাতে। ঘরের মধ্যেই আছে শৌচাগার। এক জনের ২১ দিন একা থাকতে ন্যূনতম যা যা লাগতে পারে।
না, কোনও গারদের বর্ণনা নয়। এই বিশেষ ‘কারাবাস’ বিনামূল্যেও নয়। ২১ দিনের খাওয়া-থাকা মিলিয়ে সরকারকে গুনে গুনে দিতে হচ্ছে ৭৭৩ ডলার বা ৫৭,১০২ টাকা। কিন্তু খরচের ইচ্ছা না-থাকলেও এই কয়েদে থাকতেই হবে। তার জন্য কোভিডও হতে হবে না। কোনও এলাকাতে সংক্রমণ ধরা পড়লেই বাসিন্দাদের এই ‘শাস্তি’ দেওয়া হচ্ছে চিনে।
প্রথম খবরটি ফাঁস করেছিল একটি ব্রিটিশ দৈনিক। তারা দাবি করে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে এ ভাবে ‘বন্দি’ করা হয়েছে। অন্তত ২ কোটি মানুষ চিন সরকারের তৈরি ‘কোয়রান্টিন ক্যাম্পে’ বন্দি রয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিকর এ খবর ফাঁসের পরেই একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভেসে উঠেছে চিনের খবর। দেশকে কোভিড-শূন্য করতে মরিয়া চিন বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে তুলে এনে ‘কোয়রান্টিন ক্যাম্পে’ বন্দি রাখছে। কোনও এলাকায় সংক্রমণ ধরা পড়লেই সে অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হচ্ছে— ব্যাগপত্র গুছিয়ে তৈরি থাকুন। এর পর বাস পাঠাচ্ছে প্রশাসন। বাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই সব ক্যাম্পে। তার পর ২১ দিন নিভৃতবাস। যাকে হাজতবাস বলাই সঠিক হবে।
একটি প্রথম সারির আমেরিকান দৈনিকের চিন-বিষয়ক সাংবাদিক তাঁর রিপোর্টে লিখেছেন, দেশকে কোভিড-শূন্য করতে মানুষকে শূলে চড়াতেও রাজি সরকার। এমন এমন নিয়ম জারি করেছে তারা, বহু মানুষ কোভিড নয়, সাধারণ রোগে চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এ দেশে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে আরটি-পিসিআর রিপোর্ট নেগেটিভ থাকা আবশ্যিক। এক ব্যক্তি বুকে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়নি। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। শিয়ানের ঘটনা। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলার আচমকা প্রসব বেদনা শুরু হয়েছিল। কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকায় তাঁকে ভর্তি করা হয়নি। গর্ভপাত হয়ে যায় তাঁর। পৃথিবীর আলো দেখা হয়নি তাঁর সন্তানের।
কোনও এলাকায় সংক্রমণ সামান্য আশঙ্কা থাকলেই বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করছে সরকার। শিয়ানে যেমন কোনও অগ্রিম ঘোষণা ছাড়াই ডিসেম্বর থেকে লকডাউন জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি এক যুবক বাড়ি থেকে বেরোতে তাঁকে নিরাপত্তা রক্ষীরা ধরেন। যুবক জানান, তাঁর বাড়িতে একফোঁটা খাবার নেই। নিরাপত্তা রক্ষীরা জানিয়ে দেন, খাবার নেই তাতে তাঁদের কিছু যায় আসে না। নিয়ম ভাঙার শাস্তি হিসেবে যুবককে মারধর করা হয়।
চিনা সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবো-তে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘‘কেউ নিন্দা করতেই পারেন এই বলে যে, কেন এই অশুভ শক্তিকে মেনে নেওয়া হচ্ছে। যদি আমি এবং তুমি একটা বিশাল যন্ত্রের স্ক্রু হই, তা হলে যন্ত্রটি আমাদের হেঁচকা দিয়ে টানলে, তা আটকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।’’ অ্যাকাউন্টে ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় দেওয়া নেই। তাঁর ওয়েইবো প্রোফাইলের নাম ‘আইউইলনটরেজ়িস্ট’। অর্থাৎ ‘আমি বাধা দেব না’।
আর বাধা দিলে? শোনা গিয়েছে, করোনা-বিধি ভাঙার অপরাধে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে চার যুবকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy