Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Protest in China

হয় স্বাধীনতা দাও, না হলে মৃত্যু! চিনের বিক্ষোভে তরুণদের স্লোগানে সেই তিয়েনআনমেনের সুর

শেষ কয়েক দশকে এই প্রথম বারের মতো চিনের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। চিনা কর্তৃপক্ষকে অস্বীকার করে মানুষ প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে ‘গদি ছাড়া’র দাবিও তুলেছে।

চিনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে পথ দেখাচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম।

চিনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে পথ দেখাচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম। ফাইল চিত্র ।

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১২:০৪
Share: Save:

হয় স্বাধীনতা দাও, না হলে মৃত্যু!

চিনের জিনজিয়াং-এ সরকার বিরোধী মিছিলে উঠেছে এমনই রব। বৃহস্পতিবার উরুমকি শহরে ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছেন ১০ জন। আর এই ঘটনার জন্য জিনপিং সরকারের কঠোর করোনা বিধিনিষেধকেই দায়ী করেছেন সে দেশের সাধারণ মানুষ। উরুমকি অগ্নিকাণ্ডের পর দিন থেকেই প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছে চিনের আপামর জনতা। শুক্রবার এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল জিনজিয়াং-এও। এই সমাবেশে শহরের কেন্দ্রে একটি রাস্তায় জমা হয়ে শ’য়ে শ’য়ে মানুষকে সমস্বরে একটাই স্লোগান দিতে দেখা গেল—‘হয় স্বাধীনতা দাও, না হলে মৃত্যু’!

শেষ কয়েক দশকে এই প্রথম বারের মতো চিনের কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে রাস্তায় নেমেছে কাতারে কাতারে মানুষ। চিনের হাজার হাজার মানুষ চিনা কর্তৃপক্ষকে অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে ‘গদি ছাড়া’র দাবি তুলেছে। তাঁদের দাবি একটাই, স্বাধীনতা। নিয়মিত কোভিড পরীক্ষা, কড়া লকডাউন বিধির ভার, কঠোর সেন্সরশিপ এবং সব কিছুর উপর কমিউনিস্ট পার্টির হস্তক্ষেপ—এই সব থেকেই মুক্তির দাবি তুলেছেন সে দেশের মানুষ। এদের মধ্যে তরুণ-যুব পড়ুয়াদের সংখ্যাই বেশি। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাওয়ার দাবিতে যেন অনেকটা সাহস বুকে ভর করে রাস্তায় নেমেছেন সে দেশের তরুণ প্রজন্ম। চিনা সরকারের চোখরাঙানিও তাঁদের বাড়িতে আটকে রাখতে চাইছে না। সে দেশ জুড়ে এখন একটাই স্লোগান—‘স্বাধীনতা চাই।’

ইতিমধ্যেই সে দেশের সমস্ত বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে শুরু করেছে পড়ুয়ারা। তারা এ-ও জানে যে, জিনপিং সরকার যদি এক বার বিক্ষোভ দমনে পথে নামে, তা হলে পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।

চিনের এই প্রতিবাদ ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন বিক্ষোভের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে বলেও অনেকের দাবি। ১৯৮৯ সালের এপ্রিলে কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সংঘবদ্ধতার স্বাধীনতা, সামাজিক সাম্য, অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন সাধারণ মানুষ। সেই প্রতিবাদেও তরুণ-যুব-পড়ুয়াদের ভিড়ই ছিল বেশি। তিয়েনআনমেনের বিক্ষোভকে নির্মম ভাবে দমন করেছিল তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার। সরকারের চালানো গুলিতে মারা গিয়েছিলেন হাজারেরও বেশি মানুষ।

চিনে বড় শহরগুলিতে প্রতিবাদ করতে নেমেছেন হাজারো মানুষ।

চিনে বড় শহরগুলিতে প্রতিবাদ করতে নেমেছেন হাজারো মানুষ। ফাইল চিত্র।

চিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সে দেশে আবার হু-হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বাড়ছে আক্রান্ত এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা। আড়াই বছর আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য চিন যেন একটু বেশি সতর্ক। সে জন্যই করোনার সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে ‘কোভিড-শূন্য নীতি’র পথে হাঁটছে চিনের কমিউনিস্ট সরকার। দেশ জুড়ে কড়া কোভিড বিধির জন্য ঘরবন্দি সে দেশের বহু মানুষ। দৈনন্দিন কাজ করতেও অনুমতি নিতে হচ্ছে মানুষকে। কখনও অনুমতি মিললেও কখনও স্রেফ ‘না’ বলে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ নিভৃতবাস এবং কোভিড পরীক্ষার করানোর ঝক্কি। মূলত এর থেকেই সে দেশে আন্দোলনের সূত্রপাত। কিন্তু সেই আন্দোলন দিনে দিনে চরিত্র বদলাতে শুরু করেছে। করোনার বিধিনিষেধ থেকে মুক্তির আন্দোলনে স্লোগান উঠছে স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকারের।

কিছু বিক্ষোভকারী বাক্‌স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শাসন ব্যবস্থা, মানবাধিকারের দাবিও তুলছেন। সাংহাই থেকে রাজধানী বেজিং সর্বত্রই রাস্তায় নামছেন সাধারণ মানুষ। এখনও পর্যন্ত চিনের ১৫টি শহরে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সরকার। ধিক ধিক করে জ্বলা আগুন যাতে দাবানলে পরিণত না হয়ে যায়, তার ব্যবস্থাও করতে শুরু করেছে জিনপিঙের পুলিশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy