লিউ শিয়াওবো
বন্দি অসুস্থ নোবেলজয়ীর চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বেশ কয়েকটি দেশ। কিন্তু আবেদনে সাড়া দেয়নি নিজের দেশই। অখ্যাত এক শহরের হাসপাতালে চলেছে চিকিৎসা। ক্যানসারের কাছে হার মেনেছেন লিউ শিয়াওবো। ৬১ বছরের শান্তির নোবেল জয়ীর মৃত্যুর জন্য সরাসরি তাঁর দেশ, চিনকে দায়ী করেছে নোবেল কমিটি। একই সঙ্গে বেজিংকে এক হাত নিয়েছে পশ্চিমী দেশগুলি, সরব হয়েছেন সেখানকার মানবাধিকার কর্মীরা।
১৯৩৮ সালে জার্মানির শান্তিকামী নেতা নোবেলজয়ী কার্ল ভন ওসিয়েৎস্কির মৃত্যু হয়েছিল নাৎসি বাহিনীর হাতে বন্দি থাকার সময়। তার পর থেকে আর কোনও নোবেলজয়ীর রাষ্ট্রের হাতে বন্দি থাকাকালীন মৃত্যু হয়নি। লিউ হলেন দ্বিতীয়।
চিনে বহুদলীয় রাজনীতি আর গণতন্ত্রের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চিনে আন্দোলন করে এসেছেন লিউ। ১৯৮৯-এর তিয়েনআনমেন স্কোয়ার প্রতিবাদেরও অন্যতম মুখ ছিলেন এই লেখক, অধ্যাপক তথা মানবাধিকার কর্মী। কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে লাগাতার মুখ খোলার ফলও মেলে অবশেষে। দেশদ্রোহের অভিযোগে ২০০৮ সালে তাঁকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয় চিন। দু’বছরের মাথায়, ২০১০-এ শান্তির নোবেল পান লিউ। দেশে তিনিই প্রথম। শিয়াওবোকে কেন নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বেজিং। দেশের সার্বভৌমত্ব এতে ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে তখন দাবি করেছিল কমিউনিস্ট সরকার। লিউয়ের মৃত্যুর পরে এ বার চিন সরকারকে এক হাত নিয়েছে নোবেল কমিটি। একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘লিউয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির আগে তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি জেনে আমরা মর্মাহত। তাঁর অকালে চলে যাওয়ার পিছনে চিনের সরকারই মূলত দায়ী।’’ যে হাসপাতালে লিউয়ের চিকিৎসা চলছিল, সেখানাকর চিকিৎসকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে তাঁকে অন্যত্র সরানো কার্যত অসম্ভব ছিল। যদিও পশ্চিমী দেশগুলি এই ব্যাখ্যায় খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। তাদের বক্তব্য, শেষ দু’মাস লিউয়ের অবস্থা এতটা খারাপ হতো না, যদি চিন সরকার তাঁর চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করত।
লিউকে ‘নায়ক’ হিসেবে সম্বোধন করেছে আঙ্গেলা মের্কেলের সরকার। লিউয়ের চিকিৎসা করানোর বার্তা দিয়েছিল জার্মানি। কিন্তু চিন বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ মামলা বলে এড়িয়ে গিয়েছিল। কাল প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রঁ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প লিউয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তবে নোবেলজয়ীর চিকিৎসায় অবহেলা নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছেন দু’জনেই। বেজিংয়ের সমালোচনায় সরব হংকং আর তাইওয়ান সরকার। প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে বিপজ্জনক আখ্যা দিয়েছে চিনের বিদেশ মন্ত্রক। দেশেও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বেজিংকে। লিউয়ের চিকিৎসা বিদেশে করানোয় রাজি না-হওয়ায় সরকারকে এক হাত নিয়েছেন দেশের মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে লেখক সম্প্রদায়। তাঁদের এখন দাবি, মুক্তি দেওয়া হোক লেখক পত্নী শিয়াকে। মার্কিন বিদেশ সচিব টিলারসনও একই আর্জি জানিয়েছেন বেজিংয়ের কাছে।
লিউ নোবেল পাওয়ার পরেই গৃহবন্দি করা হয়েছিল লিউয়ের স্ত্রী লিউ শিয়াকে। মাসে এক বার কারাগারে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন তিনি। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অবশ্য আজ জানিয়েছেন, শিয়ার মুক্তি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। তাঁর সংযোজন, ‘‘যা হবে আইনের পথ ধরেই হবে।’’ লিউয়ের আইনজীবী অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় শিয়ার গতিবিধি নিয়ে কিছুই জানা যায়নি। বিষয়টি যে উদ্বেগের, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বামীর পাশেই ছিলেন শিয়া। ‘‘ভাল থেকো’’, স্ত্রীকে বলে গিয়েছেন লিউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy