দুর্গামূর্তিটি এসেছে কলকাতা থেকে। টেকনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কাগজ দিয়ে তৈরি করেছেন। ছবি বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে।
নৌকায় সওয়ার দুর্গা। সঙ্গে বাজছে ঢাক-কাঁসর। বাংলা বা ভারতের কোনও নদী নয়। সুদূর লন্ডনের টেমস নদীতে ভাসল এমনই নৌকা। যে নৌকা চলার জন্য দু’ভাগ হল এ শহরের ঐতিহাসিক টাওয়ার ব্রিজ।
গত কাল দুপুরে ‘হেরিটেজ বেঙ্গল গ্লোবাল’ নামে এক সংগঠন আয়োজন করেছিল ‘দ্য টেমস দুর্গা প্যারেড’ নামে এক অনুষ্ঠানের। সঙ্গে ছিল ‘ক্যালকাটা এবং লন্ডন রোয়িং ক্লাব’-এর যৌথ সহায়তা। বর্ণাঢ্য সেই অনুষ্ঠানেই যেন এক টুকরো বাংলা উঠে এসেছিল লন্ডনের বুকে। এর আগেও দু’বছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় জানালেন, আগের দু’বারের তুলনায় এ বারের অনুষ্ঠান যেন আরও বড় করে আর ভাল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ‘লন্ডন রোয়িং ক্লাব’-এর সঙ্গে এই অনুষ্ঠানের সম্পর্কও যেন আরও মজবুত হচ্ছে বলে জানালেন অনির্বাণ। গত বার একটি মাত্র নৌকাতেই ক্লাবের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তবে এ বার মূল নৌকার পাশে ছিল আরও দু’টি নৌকা। যেটা চালিয়েছেন ক্লাবের প্রতিনিধিরা।
দুর্গামূর্তিটি এ বার এসেছে কলকাতা থেকে। টেকনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সম্পূর্ণ কাগজ দিয়ে তৈরি করেছেন এই অপূর্ব সৃষ্টি। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এই মূর্তিটি লন্ডনে পৌঁছনোর কাজ করেছে এক কুরিয়র সংস্থা। অনুষ্ঠান দেখতে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন শহরের বিশিষ্টজন। ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাই কমিশনার সুজিত ঘোষ যেমন ছিলেন, তেমনই লন্ডন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এসেছিলেন প্রতিনিধিরা। ছিলেন স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ়-এর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও। এসেছিলেন ‘রয়্যাল এয়ার ফোর্স’-এর কিছু সদস্যও।
ঠিক দুপুর ১২টায় মধ্য লন্ডন থেকে যাত্রা শুরু করে মূল নৌকাটি। আধ ঘণ্টা পরে ‘লন্ডন রোয়িং ক্লাব’-এর আরও দু’টি নৌকা যোগ দেয় নদীতে। সাড়ে ৩টে নাগাদ নৌকাগুলি পৌঁছয় টাওয়ার ব্রিজের কাছে। লম্বা নৌকাগুলিকে যাওয়ার পথ করে দিতে ঠিক ওই সময়েই দু’ভাগ হয়ে যায় টাওয়ার ব্রিজ।
এ বারের অনুষ্ঠানের থিম ছিল, ‘সাত সমুদ্র তেরো নদী’। অর্থাৎ বিশ্বের সাতটি সমুদ্র এবং ভারতের বারোটি নদীর জল এনে কাল সেগুলি মেশানো হয়েছে টেমসের জলে। ভারত থেকে সেই জল আনার কাজটাই করেছেন কৌশিক রায় এবং তাঁর দলবল। টাওয়ার ব্রিজ ভাগ হওয়ার সময়েই সাত সমুদ্র আর বারো নদীর জল মেশানো হয় টেমসে। এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল বলে মনে করছেন লন্ডনের বাঙালিনি লায়লি টমসন। কলকাতায় কুমোরটুলি থেকে আহিরীটোলা ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১.২ কিলোমিটার গঙ্গা তীরবর্তী এলাকা সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন তিনি। প্রকল্পের নাম ‘ও নদী রে’। বললেন, ‘‘কলকাতায় পুজো হলে যেমন সাজতাম, ঠিক তেমনই সেজেগুজে এসেছিলাম আমরা। অন্য নৌকা থেকে লোকজন আমাদের দেখে হাত নেড়েছেন। আমারও হাত নেড়েছি। সাত সমুদ্র আর তেরো নদীর জল একসঙ্গে মিশে যাওয়ার একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। আমি মনে করি এটা সেই কথাকে মনে করিয়ে দেয় যে, বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষ যেন একটাই সূত্রে গাঁথা।’’
ঢাক বাজলেও স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত কড়া সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে নৌকায় করা যায়নি ধুনুচি নাচের অনুষ্ঠান। সেই আক্ষেপ রয়েছে উদ্যোক্তা অনির্বাণের। হালকা হেসে বললেন, ‘‘দেখি সামনের বছর আর কী কী করা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy