বিবাহ-বন্ধনে স্টিফেন ও লরা।
লরার পরনে দুধসাদা গাউন। মাথায় সাদা ওড়না। মুখোমুখি বসে স্টিভেন। তিনিও বিয়ের পোশাকে। নববিবাহিত বর-কনের মুখে হাসি। চোখে তবু... বিচ্ছেদের জল।
দু’জনের বন্ধুত্ব সেই স্কুল-জীবনের। পরে সেই সম্পর্ক পরিণতি পায় প্রেমে। ২০১৩ থেকে দু’জনে ‘লিভ-ইন’ শুরু করেন। চলে আসে মেয়ে লিডিয়া-ও। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু তাঁরা আনুষ্ঠানিক বিয়ের পরিকল্পনাটা করে উঠতে পারছিলেন না কিছুতেই। অনেক খরচ। তা ছাড়া বিয়ের আগে নিজেদের একটা বাড়িও চাই। ভাড়া বাড়ির খরচ টানা তাঁদের পক্ষে চাপ হয়ে উঠেছিল। তাই ঠিক করেছিলেন বছর তিনেকের মধ্যে মাথার উপর ছাদ একটা তৈরি করবেনই। কিন্তু সময়টাই যে হঠাৎ নাটকীয় ভাবে ‘ভিলেন’ হয়ে উঠল।
‘‘তিন বছর! আর তিন মাসও অপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ল...’’, কান্না ভেজা গলায় বললেন লরা। কেন? হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন স্টিভেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ধরা পড়ল লিভার ক্যানসার। চূড়ান্ত পর্যায়ের। হাতে আর সময় বলতে মেরেকেটে তিন মাস।
‘‘খরচ বাঁচাতে এত দিনে এক বারই বেড়াতে গিয়েছি। একটু একটু করে অর্থ জমিয়ে ছিলাম। কোনও প্রাসাদ নয়, থাকার মতো একটা বাড়ি হলেই হবে। তার পরেই গাঁটছড়া বাঁধব দু’জনে। কিন্তু এমন কিছুর জন্য একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না,’’ বললেন লরা। ক্যানসারের ধাক্কাটা সামলাতেই বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল দু’জনের। তবু এ সত্যি না মেনে উপায় কী? তার পরেই ঠিক করেন বিয়েটা করবেনই। স্টিভেনের কথায়, ‘‘না হলে জীবনটা অপূর্ণই থেকে যেত।’’ কিন্তু সাধ থাকলেও তো সাধ্য নেই।
এ সময় কিছুটা উপহারের মতোই ধরা দেয় ‘গিফ্ট অব এ ওয়েডিং’। স্টিভেনকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আলাপ হয় এক নার্সের সঙ্গে। তিনি সন্ধান দেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির। লরা-স্টিভেনের মতো মানুষদের ইচ্ছাপূরণই যাদের লক্ষ্য। বিয়ের আগেই যে এমন কোনও ‘উপহার’ মিলতে পারে, কল্পনাও করেননি লরা। ‘গিফ্ট অব এ ওয়েডিং’ তাঁদের ফেসবুক পেজ-এ লরাদের কথা লেখে। আর তার পরই ছুটে আসে একের পর এক সাহায্য-বার্তা। কেউ লিখেছেন, বিয়ের কেকটা তিনিই অর্ডার দেবেন। কেউ বা আমন্ত্রণপত্র আর চিত্রগ্রাহকের ব্যবস্থা করতে চান। নিমন্ত্রিতদের খাবার, মেক আপ, লরার পোশাক— এক এক জন এক এক উপহার পাঠাতে শুরু করেন। গত শুক্রবার সকলের পাঠানো উপহার দিয়ে সাজানো হয় বর-কনেকে। শহরের একটি হোটেলে প্রথা মেনে বিয়ে করলেন দু’জনে। মায়ের ওড়না ধরে দাঁড়িয়েছিল ছোট্ট লিডিয়া। সামনের মাসেই তিন-এ পা দেবে সে। ‘‘এটাই হয়তো মেয়ের সঙ্গে শেষ জন্মদিন’’— বিয়ের দিনেও বিচ্ছেদের সুরশোনা গেল স্টিভেনের গলায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy