—প্রতীকী ছবি
বর্ষশেষের উপহার! অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার তৈরি কোভিড টিকাকে ছাড়পত্র দিল ব্রিটেন। তাদের পথে হেঁটে এ বার ভারত-সহ বহু দেশেই ‘চ্যাডক্স১’-কে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে খবর। ভারতে টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট এই ভ্যাকসিন তৈরির দায়িত্বে। ভারতকে তৈরি টিকার ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে বলে কথা দিয়েছেন কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা।
ব্রিটেনে অবশ্য ফাইজ়ার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে আগেই। ব্রিটেনই প্রথম কোনও কোভিড টিকায় জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু তার পরপরই ভাইরাসটির নতুন স্ট্রেনের আবির্ভাব। অতিসংক্রামক স্ট্রেনটির ভয়ে কড়াকড়ি আরও বাড়ানো হয়েছে দেশজুড়ে। গোটা উৎসবের মরসুমই লকডাউন অবস্থায় কাটছে। কিন্তু লকডাউন ও টিকাকরণ শুরু হওয়া সত্ত্বেও সংক্রমণ হার বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুও। এর জন্য নতুন স্ট্রেনটিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। মারণ ক্ষমতা অন্যদের মতো একই রকম হলেও সংক্রমণ ক্ষমতা ৭০ শতাংশ বেশি স্ট্রেনটির। পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার্স’-এর হিসেব অনুযায়ী, ২৩ লক্ষের উপরে করোনা-সংক্রমণ ব্রিটেনে। ৭১ হাজারের বেশি মৃত্যু। এই অবস্থায় অক্সফোর্ডের দেশজ ভ্যাকসিনটির উপরে আস্থা রাখছেন অনেকেই।
ভ্যাকসিনটির অন্যতম বিশেষত্ব হল, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সহজ। কারণ, ফাইজ়ারের টিকার মতো মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন নেই। সংরক্ষণ সহজ, তাই দাম কম। আবার ব্রিটেন ছাড়া ভারত, ব্রাজিল-সহ বিভিন্ন দেশে এর উৎপাদন ব্যবস্থা রয়েছে বলে পৃথিবীর সর্বত্র সহজলভ্য হবে। এবং সর্বশেষ বিশেষত্ব, অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন করোনা-স্ট্রেনটিকেও কাবু করতে সক্ষম তাঁদের ভ্যাকসিন।
আশার দাওয়াই
টিকার নাম: এজ়েডডি১২২২ বা চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯
পিছনে যারা: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা
কী ধরনের টিকা: অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন। মডিফায়ে়ড বা পরিবর্তিত অ্যাডিনোভাইরাসকে (ক্ষতিকর নয়) বাহক করে মানবদেহে স্পাইক প্রোটিন ঢুকিয়ে করোনা-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়।
কী ভাবে দেওয়া হবে: ইন্ট্রামাসকুলার ইঞ্জেকশন। অর্থাৎ পেশিতে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দু’টি ডোজ় নিতে হবে।
কেন সকলের নজর
• ফাইজ়ার বা মডার্নার টিকার মতো এর সংরক্ষণে মেরুপ্রদেশীয় ঠান্ডার দরকার নেই। ফাইজ়ারের টিকা সংরক্ষণে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন। অক্সফোর্ডের টিকা সাধারণ রেফ্রিজারেটরেও ভাল থাকবে।
• সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই দাম কম। ডোজ় প্রতি দাম ৩-৪ ডলার।
• ব্রিটেনের পাশাপাশি ভারত, ব্রাজ়িল-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটির উৎপাদন ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে সর্বত্র সহজলভ্য হবে। ভারতে টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট এই ভ্যাকসিন তৈরির দায়িত্বে। ভারতকে তৈরি টিকার ৫০% দেওয়া হবে বলে কথা দিয়েছেন কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা।
• অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন অতিসংক্রামক করোনা-স্ট্রেনকেও কাবু করতে সক্ষম এই টিকা।
দিনের খবর: বুধবার ভ্যাকসিনটিকে ছাড়পত্র দিল ব্রিটেন। ৪ জানুয়ারি থেকে ব্রিটেনে এর টিকাকরণ শুরু। এ বার ভারতও ছাড়পত্র দেয় কি না, নজর সে দিকে।
আরও পড়ুন: নতুন স্ট্রেনের মধ্যেই অক্সফোর্ডের টিকা ব্যবহারে অনুমতি দিল ব্রিটেন
সকাল ৭টা নাগাদ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে সুখবর ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককের কথায়, ‘‘এ হল ব্রিটেনের সাফল্যের কাহিনি। ২০২১ আশার আলো দেখাবে, সুস্থ করে তুলবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ৪ জানুয়ারি থেকে অক্সফোর্ডের টিকা দেওয়া শুরু হবে। ১ লক্ষ ইঞ্জেকশন ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সরকারের ঘরে। আগে বয়স্ক ও ঝুঁকি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের দেওয়া হবে। তবে গোটা প্রক্রিয়াই দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। যত দ্রুত সম্ভব, যত বেশি সংখ্যক লোককে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়ার কথা ভাবছে তারা। সম্প্রতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর পরামর্শই অনুসরণ করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। ব্লেয়ারের মতে, যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে প্রথম ডোজ় দিয়ে দেওয়া হোক। পরের দফায় আরও ভ্যাকসিন সরকারের ঘরে এলে, তখন দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া শুরু করা হবে। তবে অবশ্যই সেটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মজুত করতে হবে। স্বাস্থ্য ও সমাজব্যবস্থা বিভাগের এক কর্তাও বলেছেন: ‘‘আগেভাগে এক জনকে দু’টো ডোজ় দেওয়ার থেকে, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সকলকে প্রথম ডোজ়টি দিয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’ তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘প্রথম ডোজ় নিয়ে এই লক্ষ্য স্থির করা হলেও দ্বিতীয় ডোজ়টি নিয়ে দেরি করা হবে না। ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হবে। কারণ দ্বিতীয় ডোজ়ের পরেই টিকাকরণ সম্পূর্ণ হবে। দীর্ঘমেয়াদি করোনা-প্রতিরোধের জন্য দু’টো ডোজ় নিতেই হবে।’’ ব্রিটেন সরকার ইতিমধ্যেই অক্সফোর্ড-অ্যা্স্ট্রাজ়েনেকা জুটির কাছে ১০ কোটি ডোজ় কেনার জন্য আবেদন সেরে রেখেছে। ৫ কোটি মানুষের জন্য যা বরাদ্দ।
আরও পড়ুন: অপুষ্টিতে মৃত্যুই কি ভবিষ্যৎ শামিমদের
অক্সফোর্ডের জেনার ইনস্টিটিউটে তৈরি করা হয়েছে চ্যাডক্স১। ২০২০-এর জানুয়ারি মাসে গবেষণা শুরু। এপ্রিলে প্রথম হিউম্যান ট্রায়াল, প্রথম স্বেচ্ছাসেবককে প্রয়োগ। রেকর্ড গতিতে চলেছে গবেষণা। ব্রিটেনে ফাইজ়ারের টিকার পরে দ্বিতীয় প্রতিষেধক হিসেবে ছাড়পত্র পেল চ্যাডক্স১। ফাইজ়ার সবুজ সঙ্কেত পায় ডিসেম্বরের গোড়ায়। প্রথম টিকা নেন মার্গারেট কিনান নামে এক মহিলা। গত কাল ফাইজ়ারের টিকার দ্বিতীয় ডোজ়টিও নিয়ে ফেলেছেন তিনি। মার্গারেটের পরে এ পর্যন্ত ব্রিটেনে অন্তত ৬ লক্ষ বাসিন্দাকে ফাইজ়ার-টিকা দেওয়া হয়েছে।
অক্সফোর্ড তাদের ঘোষণাপত্রে টিকার গড় ৭০ শতাংশ কার্যকারিতার কথা জানিয়েছিল। টিকার ডোজ় নিয়েও বিতর্ক বেধেছিল। টিকার দু’টি ফুল ডোজ় মাত্র ৬২ শতাংশ কাজ দেখিয়েছিল। সে দিক থেকে ফাইজ়ার এগিয়ে। ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা দাবি করেছিল তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির ‘বিতর্কিত দু’টি ফুল ডোজ়’-কেই ছাড়পত্র দিয়েছে ‘মেডিসিন অ্যান্ড হেল্থকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি’ (এমএইচআরএ)। কারণ পরে অক্সফোর্ড তাদের চূড়ান্ত রিপোর্টে দাবি করেছে, দু’টি ডোজ় দেওয়ার মাঝের সময়ের ব্যবধান বাড়াতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিন্তু এত প্রশ্ন সত্ত্বেও জরুরি ভিত্তিতে অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়পত্র পেল কেন? প্রশাসনের বক্তব্য, এর অন্যতম কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি। গত কাল এক দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ৫১ হাজার মানুষ। হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা নেই। বেশ কিছু হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব দেখা দিয়েছে। ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য পরিষেবার এক কর্তার কথায়, ‘‘অকল্পনীয় পরিস্থিতি। এ অবস্থায় একমাত্র গতি টিকাই।’’ তা ছাড়া, অক্সফোর্ডের চূড়ান্ত রিপোর্ট ভরসা বাড়িয়েছে অনেকটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy