Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Brexit

‘ব্রিটেনে নয়া ভোর’

বরিস জনসন বলবেন, তিন বছর টানাপড়েনের পরে নতুন ভোরের সূচনা হতে চলেছে।

উৎসব। ছবি: রয়টার্স।

উৎসব। ছবি: রয়টার্স।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪১
Share: Save:

দীর্ঘ ৪৭ বছর পরে ইউরোপীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন। ইউরোপ জুড়ে যৌথ ভাবে স্বাধীন ভাবে সফর, বাণিজ্য এবং কাজ করার দিন এ বার ফুরোল। ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন ‘ইউরোপীয় ইকনমিক কমিউনিটি’-তে যোগ দিয়েছিল ব্রিটেন। যা ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর চেহারা নেয়।

আজ রাতে এক ভিডিয়ো বার্তায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলবেন, তিন বছর টানাপড়েনের পরে নতুন ভোরের সূচনা হতে চলেছে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের ডিজিটাল ঘড়ি রাত ১১টা ছোঁয়ার (যা ব্রেক্সিট ঘণ্টার সূচক) এক ঘণ্টা আগে বক্তৃতা দেবেন বরিস। আশাবাদী, তবে বিজয়ীর সুর সরিয়ে রেখে বরিস বোঝাতে চাইবেন, তিনি জানেন জনতার একটি বড় অংশ ব্রেক্সিটের পক্ষে নন। তবু বলবেন, ‘‘আজ যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— কোনও কিছুর শেষ হচ্ছে না। বরং সূচনা হতে চলেছে। এমন একটা মুহূর্ত, যখন ভোর আসছে। পর্দা সরিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন কাজের দিন। প্রকৃত জাতীয় পরিবর্তনের মুহূর্ত।’’

বক্তৃতা দেওয়ার আগে ডাউনিং স্ট্রিটে ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বরিস। মন্ত্রীরা ছাড়াও থাকবেন অনেকে। মেনুতে থাকছে স্পার্কলিং ওয়াইন, ইয়র্কশায়ার পুডিং, হর্সর‌্যাডিশ সস, মাশরুম টার্ট-সহ নানা উপাদেয় পদ।

হোয়াইটহল সংলগ্ন ভবনগুলিও আলোকিত থাকবে। পার্লামেন্ট স্কোয়ারে উড়বে ইউনিয়ন ফ্ল্যাগ। ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার স্মারক হিসেবে সূচনা করা হবে একটি নতুন কয়েনের। ব্রেক্সিটপন্থী এবং ইইউ সমর্থক— দু’তরফই আয়োজন করছে মোমবাতি হাতে বেশ কিছু মিছিলের। ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে ঘড়িতে ব্রেক্সিট সময় ছুঁলেই ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে পার্লামেন্ট স্কোয়ারে পার্টিতে মজবেন ব্রেক্সিটপন্থীরা। আগামিকাল বিকেল তিনটে নাগাদ হোয়াইটহলের কাছে মিছিল করবেন ইইউ সমর্থকেরা। তাঁরা বিদায়-অভ্যর্থনা জানাবেন এ ভাবেই।

আজ নর্থ ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ডে ক্যাবিনেট বৈঠক করে দিন শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভোটের ফল বেরনোর পরে এই শহরই প্রথম ব্রেক্সিটের পক্ষে সওয়াল করেছিল। নর্থ ইংল্যান্ডের লেবার-অধ্যুষিত এই এলাকা গত ডিসেম্বরের ভোটের পরে কনজ়ারভেটিভদের কাছে গিয়েছে। তাই বরিস আজ এখানকার জনতাকে অন্তর্ভুক্ত করার বার্তা দিয়ে দিন শুরু করেছেন। জনসনের সামনে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ। নর্থের মানুষদের হাতে রাখা, যাঁরা ইইউ ছাড়ারই পক্ষে ছিলেন এবং ভাল ভাবে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সংবাদমাধ্যমে এখন বলা হচ্ছে, এ বার আর জনসন কারও ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারবেন না। যা-ই করুন, পুরো দায় তাঁর উপরেই বর্তাবে। তবে ইইউ ছেড়ে যাওয়ার অন্তর্বর্তিকালীন সময়ে অর্তাৎ এই মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন বোঝা যাবে, এমন নয়।

আপাতত ইইউ-এর অধিকাংশ আইন চালু থাকবে। যেমন এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াতে কোনও ছেদ পড়ছে না। তত দিনে ইইউ-এর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে চিরস্থায়ী চুক্তি সেরে ফেলা যাবে বলে মনে করছে বরিসের প্রশাসন। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বোঝাপড়া শুরু হবে আগামী মার্চ থেকেই। এর পরের দশ মাস গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যে জনসন যদি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে মীমাংসা করতে না পারেন, তা হলে আর সময় পাবে না ব্রিটেন। তখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শর্ত মেনে ইইউ-এর সঙ্গে বাণিজ্য চালাতে হবে ব্রিটেনকে।

বিরোধী নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ‘‘ব্রেক্সিটের পরে দেশ এগিয়ে যাবে, তবে ইইউ-এর সঙ্গে যেন ভাল সম্পর্ক বজায় থাকে।’’ ইইউ-এ থেকে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের জন্য বিরাট দিন। আমার বিশ্বাস, আমরা যা বেছে নিয়েছি, তা নিয়ে ব্রিটেন সফল হবে।’’ ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজের মন্তব্য, ‘‘সেই দিনটা এল, যে দিন আমরা স্বাধীন হলাম। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের কাছে বিরাট জয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Brexit Boris Johnson
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy