Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Serum Institute of India

সিরাম প্রসঙ্গে বিনয়ী বরিস

ব্রিটেনের প্রশাসনের দাবি, এপ্রিলের মধ্যে প্রতিষেধকের এক কোটি ডোজ় সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও আপাতত ৫০ লক্ষের বেশি দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে সিরাম।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৫
Share: Save:

সতর্ক ভাবে বিতর্ক এড়িয়ে গেলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

ভারতের চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ব্রিটেনের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ফর্মুলায় তৈরি করোনা প্রতিষেধকের সরবরাহে রাশ টানায় ভারতীয় সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না তিনি। ‘টিকা জাতীয়তাবাদ’— ফাইজ়ারের প্রতিষেধক সরবরাহ সংক্রান্ত বিতর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিরুদ্ধে এই শব্দ প্রয়োগ করলেও ভারতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি বরিস। বরং ভারতীয় এই সংস্থার কাজের বেশ প্রশংসাই শোনা গেল তাঁর গলায়! গত কাল যা দেখে যথেষ্ট অবাকই হলেন তাঁর বাসভবনে উপস্থিত সাংবাদিকেরা।

ব্রিটেনের প্রশাসনের দাবি, এপ্রিলের মধ্যে প্রতিষেধকের এক কোটি ডোজ় সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও আপাতত ৫০ লক্ষের বেশি দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে সিরাম। বাকিটা পাঠানো হবে মাসখানেকের বিরতির পর। উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার সঙ্গে বছরে ভ্যাকসিনের ২০০ কোটি ডোজ় তৈরি করায় চুক্তিবদ্ধ সিরাম। যা উন্নত দেশগুলির পাশাপাশি গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যেও সরবরাহ করার কথা তাদের। তবে আপাতত ভারতের প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচিতে ভ্যাকসিনটির চাহিদা বাড়ায় দেশের বাইরে টিকা পাঠানোয় খানিকটা রাশ টেনেছে সংস্থাটি। মনে করা হচ্ছে, দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই এই নির্দেশ এসেছে ভারত সরকারের তরফে। যে সূত্রেই ব্রিটেনের ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুনাওয়ালা।

প্রশ্ন উঠেছে, সংস্থাটির ভ্যাকসিন উৎপাদন ক্ষমতায় কি কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে? যার উত্তরে পুনাওয়ালা সাফ জানান, ‘‘না। দেশের বাইরে কতটা ডোজ় যাবে তা ঠিক করে সরকার।’’ ফলে তাদের ভ্যাকসিনের জোগানে টান পড়েনি আশ্বস্ত করেই তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘মনে রাখা দরকার, আমরা ব্রিটেনকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলাম শুধু। ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য কোনও বাঁধাধরা সময়সীমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি কখনও। ভারতের চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ ডোজ় পৌঁছে গিয়েছে ব্রিটেনে। আমরা তো বিশেষত গরিব দেশগুলিকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করছি। তারাই এখনও ভ্যাকসিন ডোজ় পায়নি। ফলে ব্রিটেনের তরফে দেরির যে তত্ত্ব তার কোনও ভিত্তিই নেই।’’

এ দিকে তাদের থেকে প্রয়োজন মতো অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ভ্যাকসিনের সরবরাহ না-পেলে ফাইজ়ারের টিকা সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে ইইউ। এই প্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ফুঁসছেন ব্রিটেনবাসীদের একাংশের। তবে তার কোনও প্রতিফলন বরিসের গলায় অন্তত শোনা যায়নি এ দিন। যা খানিক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে অনেকের মনে। ইইউ ‘ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তাবাদ’ করছে বলে তোপ দাগলেও ভারতের প্রসঙ্গে সুর চড়াননি তিনি। সামনের মাসের শেষ দিকে ভারতে আসার কথা বরিসের। সে সময়ে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটেও আসার কথা রয়েছে তাঁর। মনে করা হচ্ছে, তখনই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের সন্ধান করতে পারেন তিনি। বরিস সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের বিদেশনীতির নিরিখে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে। এই ভ্যাকসিন বিতর্কে ভারতের তরফে বরিসের এ হেন নরম মনোভাব তারই প্রতিফলন, মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

অন্য দিকে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় শুক্রবার রাত থেকে প্যারিস-সহ ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি শহর জুড়ে মাসখানেকের জন্য আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এ সময়ে অত্যাবশ্যক পরিষেবার পাশাপাশি শুধুমাত্র স্কুল খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জার্মানিতেও হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে সংক্রমিত ১৭,৪৮২ জন। এই পরিপ্রেক্ষিতে টিকাকরণের গতি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ দেখা দিলে তার মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত প্রতিষেধকের জোগান তাদের নেই বলেও এ দিন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের প্রশাসন।

অন্য বিষয়গুলি:

Boris Johnson Serum Institute of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy