ফাইল ছবি।
নিছকই কোনও দুর্ঘটনা নয়। বেইরুট বন্দরে পরিকল্পিত ভাবেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন মার্কিন সেনাকর্তাদের ধারণা, ওটা ছিল বড় রকমের সন্ত্রাসবাদী হামলা। তাঁরা সে কথা তাঁকে জানিয়েছেন।
বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাকে সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, বেইরুটে সম্ভবত সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয়েছে।’’
মঙ্গলবার বিকেলে বেইরুট বন্দরে পর পর দু’টি অসম্ভব জোরালো বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। জখমের সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। বুধবার লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এক বিবৃতিতে জানান, বন্দর এলাকার একটি গুদামে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত ছিল গত ছয় বছর ধরে। তাতেই হয়তো বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরে একই ইঙ্গিত দেন লেবাননের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মহম্মদ ফাহমিও।
লেবানন সরকার যখন বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে, তখন ওই ঘটনাকে কেন সন্ত্রাসবাদী হামলা মনে করছেন, জানতে চাওয়া হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘খুব মনে হচ্ছে, বিস্ফোরণই ঘটানো হয়েছে বেইরুটে। আমি মার্কিন সেনাকর্তাদের সঙ্গে কতা বলেছি। ওঁরা আমাকে জানিয়েছেন, ওঁদের ধারণা, এটা সন্ত্রাসবাদী হামলা। এটা নিছকই কোনও দুর্ঘটনা নয়। একটা হানাদারি। পরিকল্পিত। খুব শক্তিশালী বোমা ছিল। বড় রকমের সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে সম্ভবত।’’
দীর্ঘ পনেরো বছরের গৃহযুদ্ধে এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেখেনি লেবাননের রাজধানী। এর আগেও বহু মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে বেইরুট। কিন্তু একসঙ্গে এত রক্তাক্ত মুখ বহু বছর দেখেনি এই শহর। বেইরুটের রাজপথ আজ কার্যত ধ্বংসস্তূপ হয়ে দাঁড়িয়ে। অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গুঁড়িয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি আর রক্তের দাগ।
আরও পড়ুন: ‘রামজন্মভূমি মুক্ত হল’, ১৫ অগস্টের সঙ্গে তুলনা টানলেন মোদী
আরও পড়ুন: নবযুগের শুরু, বললেন মোহন ভাগবত, রুপোর ইট গেঁথে সূচনা রামমন্দিরের
মঙ্গলবার বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল বেইরুটের বন্দর সংলগ্ন এলাকা। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাসের মানুষও সেই ভয়ানক শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় প্রথমে দেখা গিয়েছে, ভয়ঙ্কর শব্দে কিছু একটা ফাটতেই ছাই রঙা ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে চারপাশ। মুহূর্তে সেই ধোঁয়া রং পাল্টে কমলা হয়ে যাচ্ছে। বিস্ফোরণের জেরে প্রথমে কাঁপতে শুরু করে আশপাশের বাড়ি দরজা-জানলা। তার পরের কয়েক মিনিটে প্রচুর বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। বাদ পড়েনি বহুতলও। ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়েছে দূর-দূরান্তের বাড়িঘর-দোকানের কাচ। বন্দর সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রচুর গাড়িও দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে গিয়েছে। আর্থিক মন্দায় বিধ্বস্ত লেবানন এখন নতুন সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। গত এক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এখানকার মানুষ। তার উপর এই বিস্ফোরণে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ গৃহহীন।
লেবাননের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মহম্মদ ফাহমি জানিয়েছেন, বন্দর চত্বরের একটি গুদামঘরে প্রায় ২৭০০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমা করা ছিল ২০১৪ সাল থেকে। জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকগামী একটি জাহাজ আইনি জটিলতায় বেইরুট আটকে পড়েছিল, সেই জাহাজেই ছিল এত রাসায়নিক। কোনও ভাবে সেই গুদামে আগুন লেগে যায়। যার পরিণতি এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। রাসায়নিক বিশেষজ্ঞেরাও প্রায় একই কথা বলেছেন। তাঁদের অবশ্য দাবি, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে আশপাশে কোথাও মজুত রাখা বাজির একসঙ্গে বিস্ফোরণ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy