বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
একসঙ্গে এক ছাদের তলায় বসে দেশ শাসন করেছেন। নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে সামলে দিয়েছেন নানা রাজনৈতিক টালমাটাল আর দুঃসময়। অথচ সেই নেত্রীই দুঃসময়ে তাঁদের ছেড়ে পালালেন! দলের সহকর্মীদের বিপদে ফেলে কেবল আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে ছাড়লেন দেশ। বিন্দুমাত্র আঁচ পেতে দিলেন না সর্ব ক্ষণের ছায়াসঙ্গীদেরও। জানলে হয়তো নিজেদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ পেতেন তাঁরা! সে কথা ভেবেই এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন আওয়ামী লীগের নেতা মন্ত্রীরা। দুষছেন নেত্রী শেখ হাসিনাকেই। বলছেন, ‘‘পদত্যাগই যদি করবেন, দেশ ছেড়ে যদি যাবেনই, তা হলে দলের নেতা-কর্মীদের ওই আন্দোলনের মুখোমুখি কেন দাঁড় করালেন?’’
বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, হাসিনা যে সোমবারই পদত্যাগ করবেন এবং দেশ ছাড়বেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁর সরকারের মন্ত্রিসভার ছয় সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ নেতা নিজেরাই এ কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, হাসিনা যে দেশ ছাড়বেন, তা সোমবার দুপুরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পারেন তাঁরা। সেই খবর পাওয়ার পরেই তাঁরা খানিক হতভম্ব হয়ে যান। তার পরেই হাসিনার মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এবং নেতা-কর্মীরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেন। অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টাও শুরু করেন। ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, বহু মন্ত্রীর মোবাইল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকলেও রাতের দিকে অনেককেই আর ফোনে পাওয়া যায়নি। এঁদের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে বা দেশের বাইরে গিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, জনরোষের মুখে সবাইকে ফেলে রেখে হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনায় তাঁরা হতাশ, বিপর্যস্ত এবং ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘হাসিনার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং জেদের কারণে দলের নেতা-কর্মীরা বিপদে পড়ছেন। নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও বাকিদের তিনি বিপদে ফেলে চলে গিয়েছেন।’’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসিনার মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন, তাঁরা গত রবিবারই হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেন। মন্ত্রিসভার আরও এক সদস্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আন্দাজ করে পরিবারের সদস্যদের আগেই বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজে থেকে গিয়েছিলেন। তবে হাসিনা চলে যাবেন জানলে অন্য ভাবে ভাবতেন। হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তাঁর মন্ত্রিসভার আর এক ‘প্রভাবশালী’ সদস্যও। তিনি বলেছেন, ‘‘কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকেই সরকারের প্রধান হিসাবে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসিনা। বার বার তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। তাই এখন যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আরও পাঁচ সদস্য ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন, ‘‘শেখ হাসিনা দেশে থেকে যদি জেলে যেতেন, তা হলে হয়তো তাঁর দলের কর্মীরা এতটা বিপদে পড়তেন না।’’ বাংলাদেশের প্রাক্তন এবং প্রয়াত সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের উদাহরণ টেনে তাঁরা বলেছেন, এরশাদ স্বৈরাচারী ছিলেন। কিন্তু গণ অভ্যুত্থানে যখন তাঁর সরকারের পতন হয়, তখন তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি। বরং জেলে গিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেই উদাহরণ টেনে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের নেত্রী এমন করবেন, তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy