Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Protest in Bangladesh

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দিতে হবে! ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশ জুড়ে

২০১৮-তেও সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল।

Protest in Bangladesh

বাংলাদেশে আন্দোলন। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৯:১৬
Share: Save:

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ব্যবস্থা উচ্ছেদের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে ছাত্ররা অবরোধ সৃষ্টি করায় রাজধানীর অন্তত ৫০টি রাস্তা যেমন এই নিয়ে তিন দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা যানজটে স্তব্ধ ছিল, ঢাকার সঙ্গে গোটা দেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ চাকরিতে সংরক্ষণ বা কোটা ব্যবস্থার উপরে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে পড়ুয়াদের রাস্তা ছাড়তে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু নিয়োগে কোটা উচ্ছেদের দাবিতে আন্দোলনকারীরা তাতে কর্ণপাত না করে আগামী কাল এবং সরকার তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত একটানা রেল ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা করেছেন।

২০১৮-তেও সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮-য় কোটা-বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। তখনকার মতো আন্দোলনে ইতি টানেন ছাত্ররা।

কিন্তু ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, এই নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তাঁরা দাবি করেন, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার গোটা বিষয়টির উপরে এক মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছে, হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পরে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে শীর্ষ আদালত। পরবর্তী শুনানি হবে ৭ অগস্ট। তত দিন কোটা নিয়ে কোনও কথাই হবে না। আন্দোলনকারীরা চাইলে এই মামলায় অংশ নিতে পারেন। কিন্তু অবিলম্বে তাঁদের রাস্তা ছেড়ে ক্লাসে ফিরতে হবে, জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের রায়-সহ গোটা বিষয়টিতে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় অর্থ, ২০১৮-এ সরকারের নির্দেশ বহাল রইল। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন-সহ তিন ধরনের সংরক্ষণ সরকারি চাকরিতে রাইল না। এর পরে আন্দোলনও অর্থহীন। কিন্তু সন্ধ্যায় সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, সংরক্ষণ উচ্ছেদের বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত। আদালতের সঙ্গে সংরক্ষণের কোনও সম্পর্ক নেই। সরকার যত ক্ষণ না স্থায়ী ভাবে কোটা ব্যবস্থা উচ্ছেদ করছে, অবরোধ আন্দোলন চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE