ঢাকা আদালত চত্বরে মহম্মদ ইউনুস। সোমবার। ছবি: এএফপি।
শান্তি নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসকে দোষী সাব্যস্ত করল বাংলাদেশের আদালত। অশীতিপর নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম-আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। সোমবার সেই মামলাতেই ইউনুসকে দোষী সাব্যস্ত করল ঢাকার আদালত সেই সঙ্গে ছ’মাসের জেলের সাজাও দেওয়া হল তাঁকে।
বাংলাদেশর সমাজকর্মী তথা একমাত্র নোবেলজয়ী ইউনুসের বয়স এখন ৮৩। তাঁর সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘন করে বেআইনি ভাবে কাজ চালানোর মামলা চলছিল। সোমবার সেই মামলায় ইউসুফ-সহ তাঁর সংস্থার চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকা আদালত। আর তার পরই আন্তর্জাতিক মহল থেকে আসতে শুরু করে তীব্র প্রতিক্রিয়া। ইউনুসের মামলায় আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেন তাঁর অনুগামীরা। সোমবার ঢাকা আদালতে হাজির ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের এক প্রতিনিধিও। রায় ঘোষণার পর তিনিও এই রায়ের সমালোচনা করেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি স্পষ্ট বলেন, ‘‘এই নির্দেশ বিচারের নামে প্রহসন। ঢাকা আদালত আদতে বাংলাদেশ সরকারের ইচ্ছা এবং সিদ্ধান্তে আইনি ছাপ দিল। শ্রম আইনের অপপ্রয়োগ করে হেনস্তা করা হল সেই নোবেলজয়ীকে, যিনি তাঁর দেশকে গর্বিত করেছেন।’’
সোমবার তাঁর মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির ছিলেন শান্তি নোবেলজয়ী বাংলাদেশী সমাজকর্মী ইউনুস। আদালত তাঁকে হাজতবাসের সাজা দিলেও অবশ্য তাঁকে জেলে যেতে হয়নি। তিনি এবং তাঁর সংস্থার চার কর্মী অবিলম্বে জামিনও পেয়ে যান। তবে ইউনুসকে এ ভাবে অপদস্থ করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁর অনুরাগীরা।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউসুফ। তাঁকে ওই সম্মান দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর তৈরি মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাঙ্কের জন্য। ওই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইউনুস বাংলাদেশের লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে টেনে তুলেছেন বলে মনে করেছিল নোবেল প্রদানকারী সংস্থা। যদিও তাঁর নিজের দেশের সরকারের মনোভাব ছিল অন্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই ইউসুফের সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে। এমনকি, ইউসুফ গরীবের রক্ত শুষছেন বলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন হাসিনা।
এর মধ্যেই ইউসুফের সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী যেকোনও সংস্থায় কর্মীদের কল্যাণমূলক তহবিল তৈরি করতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমে ওই তহবিলের ব্যবস্থা ছিল না। এ ব্যাপারে ইউসুফকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশে যে সংস্থা চালান। তার কোনওটিই লাভের অর্থের জন্য করেননি। তাই তাঁর সংস্থার ক্ষেত্রে ওই নিয়ম খাটে না। এর পরেই ইউসুফ-সহ তাঁর সংস্থার চার কর্মীর বিরুদ্ধে শ্রম-আইন ভাঙার অভিযোগে মামলা হয়। যদিও সেই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই মনে করছেন ইউনুসপন্থীরা।
নোবেলজয়ী ইউনুসের এই ‘হেনস্থা’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন স্বয়ং বারাক ওবামা। গত অগস্টে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামার পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি মুন-সহ ১৬০ জন বিশিষ্ট এ ব্যাপারে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। যাতে সই করেছিলেন গোটা বিশ্বের ১০০ জনের বেশি নোবেলজয়ী। বিচার বিভাগের হাতে ইউনুসের নিরন্তর হেনস্থা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাঁরা। এ-ও লিখেছিলেন যে, শান্তি নোবেলজয়ীর নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন তাঁরা।
সোমবার ঢাকা আদালতের নির্দেশের পর ইউনুস নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। আইনজীবী আবদাল্লা আল মামুনও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, আদালতে তাঁরা সুবিচার পাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy