(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখনই দেশে ফেরানোর জন্য পদক্ষেপ করতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ফিনানশিয়াল টাইম্স’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছেড়েছেন হাসিনা। সাময়িক ভাবে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। বিদেশ মন্ত্রকও দু’সপ্তাহ আগে জানিয়েছে, হাসিনা ভারতেই রয়েছেন।
ওই সাক্ষাৎকারে ইউনূস জানিয়েছেন, হাসিনাকে ফেরানোর জন্য এখনই তারা ভারতের কাছে আবেদন জানাতে চায় না। বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে এখনই হাসিনাকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে বললে, তা কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন ও পার বাংলার অন্তর্বর্তী শাসক।
বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের সরকারের পতনের পর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। রয়েছে খুনের মামলাও। সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনা-সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে হাসিনা এবং বাকি অভিযুক্তদের ট্রাইবুনালে হাজির করানোরও নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের আদালত।
তবে ‘ফিনানশিয়াল টাইম্স’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস জানিয়েছেন, হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় আদালতের রায় আসার পরই তাঁকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, “তাঁর (হাসিনার) বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব। আমার মতে, আদালতের রায় ঘোষণার আগে তাঁকে দেশে ফেরানোর কোনও পদক্ষেপ করা হবে না।”
হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর গত ১৭ অক্টোবর ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ভারতে এসেছেন। তিনি এখনও ভারতেই রয়েছেন। তবে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি বিদেশ মন্ত্রক।
বাংলাদেশে হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে সাবধানী ইউনূসের সরকার। ও পার বাংলার রাজনীতিতে আপাতত হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লিগের কোনও জায়গা নেই বলেই মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ইউনূসের কথায়, “স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, হাসিনা এবং আওয়ামী লিগের বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনও জায়গা নেই।”
হাসিনার সরকার পতন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। এই আবহে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের হাসিনাকে দেশে ফেরানো নিয়ে এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বিদ্যুৎ, জল, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ অনেকাংশে ভারতের উপর নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলতে চান না ইউনূস। তাঁর কথায়, “আমরা উভয়েই প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং উভয়েরই উভয়কে প্রয়োজন। যে কোনও দু’টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো আমাদেরও সুসম্পর্ক থাকা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy