নতুন পরমাণু চুক্তিতে রাজি না হলে ইরানের উপর আমেরিকা বোমা ফেলবে বলে রবিবার হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তার জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনেই বললেন, ‘‘আমেরিকা আমাদের উপর একটাও বোমা ফেললে তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর।’’
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে খামেনেই বলেন, ‘‘আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের সঙ্গে আমাদের বরাবরই শত্রুতা রয়েছে। তারা আমাদের ওপর প্রায়শই হামলার হুমকি দেয়। আমরা তাতে বিশেষ গুরুত্ব দিই না। তবে যদি তারা কোনও দুষ্কর্ম করার চেষ্টা করে, তবে অবশ্যই সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’’ আর ওয়াশিংটনের মদতে ইরানের অন্দরে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হলে দেশের জনগণ তাকর মোকাবিলা করবে বলেও জানান খামেনেই।
নতুন পরমাণু চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ইরানকে দু’মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প। চলতি মাসের গোড়ায় হোয়াইট হাউস থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনেইকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ট্রাম্পের সেই ‘হুমকি চিঠি’র জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েকশিয়ানের সরকার জানিয়েছিল, তেহরান সম্পর্কে কিছু ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন অবস্থান না-বদলালে সরাসরি আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।
গত শনিবার ট্রাম্পের ওই চিঠির প্রসঙ্গে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরকচি বলেন, ‘‘জবাবি চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। চাপ ও সামরিক হুমকির আবহে আমরা সরাসরি কোনও আলোচনায় যুক্ত হব না। তবে অতীতের মতোই পরোক্ষ আলোচনা চালানো যেতে পারে।’’ এর পরেই রবিবার আমেরিকায় একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, পরমাণু চুক্তি না করলে বাড়তি শুল্ক, আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পেন্টাগনের বোমা হামলারও নিশানা হতে পারে তেহরান!
ঘটনাচক্রে, ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ওয়াশিংটনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করেছিল! ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল আমেরিকা-সহ ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি এবং চিন। চুক্তির নাম ছিল ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ)। তাতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা এবং অন্য কয়েকটি দেশ। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হয়েছিল।
কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ওই পরমাণু চুক্তি ওবামার ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের। ২০১৮ সালে তাঁর নির্দেশে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে আমেরিকা। বলা হয়, ‘‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি।’’ এর পর জো বাইডেনের জমানায় ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু সমঝোতার পথ খুলেছিল আমেরিকা। ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর আবার কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। তাঁর বোমা হামলার হুমকির পরে ইরানও পাল্টা আমেরিকার মিত্র দেশগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে খবর।