ARK 2: Man builds a nuclear bunker with 42 school buses at Horning Mills dgtl
ARK 2: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে বাঁচবেন কী ভাবে? ব্রুস বিচের এই আস্তানায় আপনাকে স্বাগত
মাটির অনেকটা গভীরে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় আস্তানা এটিই।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১ ১৬:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
পৃথিবী নাকি ক্রমে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। সেই ধ্বংসের প্রক্রিয়া নাকি শুরুও হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মানুষের যত্রতত্র বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রবণতা নাকি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, এমন একটা সময় আসবে যখন মানব সভ্যতার ৮০ শতাংশই পৃথিবী থেকে মুছে যাবে।
০২১৯
বাকি ২০ শতাংশ দিয়েই শুরু হবে নতুন পৃথিবী। এই এক চিন্তা সবসময় ব্রুস বিচের মাথায় ঘুরপাক খায়। ব্রুসের বিশ্বাস ধ্বংসের সেই দিন আসতে বেশি দেরি নেই। এমনকি ব্রুসের নিশ্চিত মানুষ প্রজাতি ধ্বংসের জন্য দায়ী হতে চলেছে মানুষই। খুব শীঘ্রই নাকি হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
০৩১৯
দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকা ব্রুস নিজের প্রজাতিকে রক্ষা করতে পারমাণবিক বোমার আঘাত সহ্যক্ষমতাসম্পন্ন একটি আস্তানাও বানিয়ে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। মাটির অনেকটা গভীরে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় আস্তানা এটিই। যেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
০৪১৯
১৯৩৪ সালে আমেরিকার কানসাসে জন্ম ব্রুসের। যৌবনের অনেকটা সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়ের আবহে কেটেছে তাঁর। ব্রুসের তখন মনে হতো যে কোনও সময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। মানুষের প্রজাতিই ধ্বংস হয়ে যাবে সেই যুদ্ধের ফলে।
০৫১৯
সেই তখন থেকেই পৃথিবীতে মানুষের প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটি নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের খোঁজ শুরু করেন। কানসাস ছেড়ে সস্ত্রীক চলে আসেন কানাডায়। কিন্তু কানাডায় চলে আসাটাই যথেষ্ট ছিল না। নিশ্চিন্ত জীবনের জন্য আরও কিছু দরকার ছিল তাঁদের।
০৬১৯
শেষে মাটির নীচে আস্তানা বানানো শুরু করলেন ব্রুস। ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে স্ত্রীর জন্মস্থান হর্নিং মিলস-এ চলে গেলেন। ১৯৮০ সাল থেকেই কাজ শুরু দিলেন ওই নিরাপদ আস্তানার।
০৭১৯
ব্রুস তাঁর পরিকল্পনা সফল করতে পুরনো স্কুল বাস কিনতে শুরু করলেন। এক একটির দাম পড়েছিল ৩০০ ডলারের মতো। বাসের ইঞ্জিন বা সেটি কতটা সক্রিয় তা নিয়ে বিন্দুমাত্র কৌতূহল ছিল না ব্রুসের। তিনি শুধু যাচাই করে নিতেন বাস মজবুত কতটা।
০৮১৯
এই ভাবে মোট ৪২টি স্কুল বাস কেনেন তিনি। এটা ছিল তাঁর পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। ১৯৮৫ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। এই স্কুল বাসগুলিকেই তিনি পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে বাঁচার আস্তানা হিসাবে তৈরি করে ফেললেন।
০৯১৯
এমন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য ব্রুস কেন স্কুল বাস বেছে নিয়েছিলেন? এর মজবুত অংশের জন্য। স্কুল বাসের ছাদে কংক্রিকেট কাঠামো তৈরি করেছেন ব্রুস। তার উপর মাটি দিয়ে ঢাকা দিয়েছেন। এই বিপুল ভার বহন করার ক্ষমতা রাখে ওই সব স্কুল বাস।
১০১৯
বাচ্চাদের সুরক্ষার কথা ভেবে স্কুল বাসের ছাদে স্টিলের কাঠামো করাই ছিল। ব্রুসের মতে আরও একটি কারণ হল স্কুল বাসের ভিতরে অনেকটা জায়গা। ফলে বাসগুলিকে থাকার জায়গা বানাতে বেশি কসরত করতে হয়নি তাঁকে।
১১১৯
১২.৫ একর জমিতে মাটি খুঁড়ে অনেকটা নীচ থেকে বাসের কাঠামোগুলিকে পর পর সাজিয়ে ওই আস্তানা তৈরির কাজ শুরু হয়। বাসের মাথায় কংক্রিটের ছাদ দেওয়া হয়। তার উপর মাটি চাপা দেওয়া হয়। ফলে বাইরে থেকে আস্তানার সন্ধান কারও পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। বাইরে শুধু একটিমাত্র দরজা দেখতে পাওয়া যায়।
১২১৯
এই দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে হয়। ব্রুস তাঁর এই আস্তানার নাম দেন ‘আর্ক ২’। ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেই যে ‘আর্ক ২’-এ পৌঁছে যাবেন তেমনটা নয়। এর পিছনে অনেকগুলি আলাদা প্রকোষ্ঠ রয়েছে। একটি প্রকোষ্ঠে যেমন জেনারেটর রয়েছে। এখান থেকেই পুরো ‘আর্ক ২’-তে বিদ্যুতের সরবরাহ হয়।
১৩১৯
তার ঠিক পিছনের অংশে রয়েছে জীবাণুনাশক প্রকোষ্ঠ। ভূগর্ভের বদ্ধ জায়গায় প্রাণঘাতী জীবাণু আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে জন্যই বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশের আগে সকললেই ওই জীবানুনাশক প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করতে হয়।
১৪১৯
ব্রুসের এই অভিনব উদ্যোগের কথা জানতে পেয়ে অনেকেই তাঁর পরিকল্পনার অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। হর্নিং মিলের ৫০ জন মানুষ এবং সার্ভাইভাল কমিউনিটির অনেক সদস্য তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু তাঁর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করেন।
১৫১৯
এই ভূগর্ভস্থ আস্তানায় অন্তত ৫০০ জন থাকতে পারবেন। তাঁদের জন্য জল, অক্সিজেন, খাবার, বিদ্যুতের ব্যবস্থাও রয়েছে। সঙ্গে কঠিন সময়ে এখানে থাকা মানুষগুলো কী অবস্থায় রয়েছেন এবং বাইরের পরিস্থিতিই বা কী রকম তা জানার জন্য রেডিয়ো সেন্টারও রয়েছে। যার মাধ্যমে কানাডা এবং আমেরিকার রে়ডিয়ো সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন তাঁরা।
১৬১৯
ব্রুস মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে এটি বানিয়েছেন। তাই বিনোদনের ব্যবস্থা রাখেননি। তবে বাচ্চাদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের কথা ভেবেছেন তিনি। তাই এর ভিতরে বাচ্চাদের খেলাধুলোর ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি বাইরের জগতের দুর্যোগের সময়েও ‘আর্ক ২’-র বাচ্চারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে, এমনই ব্যবস্থা করে রেখেছেন ব্রুস। ভিতরে বাচ্চাদের জন্য একটি স্কুলও রয়েছে।
১৭১৯
পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কেউ এই আস্তানায় থাকতে পারেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সমস্ত মানুষকেই এই আস্তানায় স্বাগত জানিয়েছেন ব্রুস। এর জন্য টাকাও নেবেন না তিনি।
১৮১৯
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে ব্রুসের একটি সাক্ষাৎকারে ‘আর্ক ২’ দেখানো হয়েছিল। ‘সোসাইটি আফটার ডুমসডে’ এবং ‘ট্রায়াড ইন্ডিভিজুয়াল নেটওয়ার্কিং: প্রিপেয়ার্ডনেস ফর ডিজাসট্রাস টাইমস’ নামে দু’টি বইও লিখেছেন ব্রুস।
১৯১৯
এখনও নিয়মিত এই আস্তানার রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছেন ব্রুস এবং তাঁর সহযোগীরা। সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন সেই কঠিন সময়ের জন্য।