ছবি: সংগৃহীত।
৭৮ বছরের অ্যান্ড্রু ক্যাপলান এক বর্ণময় মানুষ। ইজ়রায়েলি সেনার হয়ে যুদ্ধে যাওয়া এই বৃদ্ধ যৌবনে ছিলেন ভূপর্যট ও দুঁদে সাংবাদিক। পরে লিখেছেন বহু রহস্য উপন্যাস ও চিত্রনাট্য। মোট কথা একই জীবনে বহু চরিত্রে বেঁচেছেন তিনি। দীর্ঘ ৩৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের শেষে ক্যালিফর্নিয়ার এই বাসিন্দা এখন চান, তাঁর জীবনের গল্প জানুক তাঁর উত্তরসূরিরা। তাঁর নিজের মুখ থেকে। আজ থেকে একশো, হাজার বছর বাদেও।
ক্যাপলান তাই দ্বারস্থ হয়েছেন ‘হিয়ারআফটার’ নামে একটি সংস্থার। যারা বলে, ‘‘ভালবাসার কারওকে কখনও হারাতে দিয়ো না।’’ যাদের সাহায্যে বাস্তবে না হলেও, ভার্চুয়াল জগতে হাজার, সহস্র বছর যাবৎ বেঁচে থাকতে চান ক্যাপলান। সব কিছু পরিকল্পনামতো চললে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারবে আমাজন অ্যালেক্সার মতো মোবাইল ‘ডিভাইস’ ব্যবহার করে। তাঁকে প্রশ্ন করতে পারবে, গল্প শুনতে পারবে, এমনকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে পরামর্শও চাইতে পারবে। ক্যাপলান জানাচ্ছেন, এখন তিনি ‘গিনিপিগ’ হলেও ভবিষ্যতে পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল-নাগরিক হিসেবে স্মরণ করা হবে তাঁকে।
ক্যাপলানের মতো ভার্চুয়াল অমরত্বের সন্ধানী এমন অনেককেই পথ দেখাচ্ছে এ যুগের কিছু সংস্থা। যারা বলছে, দেহের খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাবে শুধু প্রাণটুকু, তার পরে স্মৃতিতে নয়, অন্তর্জালে ‘বেঁচে’ থাকবেন এক জন মানুষ। এমনই এক সংস্থা ‘এটারনাইম’ জানিয়েছে, ভাচুর্য়াল অমরত্বের স্বাদ পেতে তাদের সংস্থায় নাম লিখিয়েছেন ৪৪ হাজার মানুষ। তাঁদের স্মৃতি, চিন্তা-ভাবনা, সৃষ্টি ও জীবনের গল্পকে অমর করে দেওয়ার ‘দুঃসাহসিক লক্ষ্য’-এ পৌঁছতে চায় সংস্থাটি। স্মৃতি সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা চালানো সংস্থা ‘নেটকম’ও রয়েছে এই তালিকায়।
মানুষের মৃত্যুর পরে সংস্কৃতি ভেদে বদলে যায় শেষকৃত্যের রীতিনীতি। কিন্তু প্রিয়জনকে জীবনে জড়িয়ে রাখার প্রক্রিয়াটি আদি-অকৃত্রিম। দেওয়ালে ঝোলে তাঁর বাঁধানো ছবি। জমিয়ে রাখা হয় পুরনো অ্যালবাম বা ভিডিয়ো। আজকাল চালু রাখা যায় মৃতের ফেসবুক প্রোফাইলও। ভবিষ্যৎ-বাদীরা (ফিউচারিস্ট) বলছেন, এটাই বদলের পথে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যদি উন্নত প্রযুক্তিতে সংবেদনশীল ও বুদ্ধিমান ‘ডিজিটাল মানব’ সৃষ্টি হতে পারে, তা হলেই বদলে যাবে জীবন্ত মানুষের আর যন্ত্রের সম্পর্কের রসায়ন। ‘হিয়ারআফটার’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা জেমস লাওস তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে তৈরি করেন সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ‘ড্যাডবট’। ওই প্রোগ্রামের সাহায্যে প্রয়াত বাবার ‘কম্পিউটারাইজড অবতার’-এর সঙ্গে টেক্সট বা অডিয়ো মেসেজ করতে পারেন তিনি, তাঁরা জীবন নিয়ে কথা বলেন, হাল্কা হাসি ঠাট্টাও করেন। ওই তরুণ জানিয়েছেন, বাবার মৃত্যুর পরে দু’বছর লেগে যায় তাঁদের বাড়ির ফোনে রেকর্ড করে রাখা বাবার গলার স্বর ডিলিট করতে। তাঁর মা-ই ডিলিট করতে দেননি।
তাই শুধু রেকর্ড করে রাখা স্বর শোনার বদলে জেমস তৈরি করতে চাইছেন আরও উন্নত ও সহজে ব্যবহারযোগ্য ভার্চুয়াল মডেল। যার সাহায্যে কথোপকথন চলতে পারে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে। প্রথমে কারও মুখ দিয়ে বলিয়ে তাঁর জীবনের ইতিহাস একটি অ্যাপের মাধ্যমে ধরে রাখা হবে। তার পরে সেই গলার স্বর ‘অডিয়োবট’-এ বদলে দেওয়া হবে। মাসিক অর্থের বিনিময়ে সেই ‘অডিয়োবটের’ গ্রাহক হতে পারবেন প্রিয়জনেরা। এ ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরামর্শ নেওয়া যাবে প্রয়াত বাবার। দিদার বিয়ের গল্প শুনবে অষ্টাদশী নাতনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy