Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
American Association for Cancer Research

ক্যানসারকে হারাতে জোট-মঞ্চ আমেরিকায়

যে রোগে মানুষ একটু একটু করে ফুরিয়ে যায়, সর্বস্বান্ত হয়ে যায় বহু পরিবার, সেখানে ‘তুমি একা নও’ এ বার্তাই যেন বিশল্যকরণী। সম্মেলনে ছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার-গবেষক অরিন্দম বসু।

An image of the program

ফ্লরিডার অরল্যান্ডোয় ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যানসার রিসার্চ’-এর সম্মেলন। ছবি: অরিন্দম বসু।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
ফ্লরিডা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৩১
Share: Save:

কথায় বলে, একসঙ্গে দল বেঁধে চেষ্টা করলে জীবনের যে কোনও চড়াই-উতরাই পার করা সম্ভব। হোক না সে লড়াই যতই কঠিন। ক্যানসার-যুদ্ধে সেই জীবন দর্শনকে অনুসরণ করছে ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যানসার রিসার্চ’। সদ্য শেষ হয়েছে আমেরিকার সর্ববৃহৎ ক্যানসার-বিষয়ক সংগঠনের ছ’দিন ব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন। যেখানে ক্যানসার ইমিউনোলজি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, সংক্ষেপে এআই) উপরে জোর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আশা দেখিয়েছেন, এক দিন এই মারণ রোগের সমাধান মিলবে।

ফ্লরিডার অরল্যান্ডোয় ‘অরেঞ্জ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টার’-এ সুবিশাল আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের তাবড় বিজ্ঞানীরা। ‘ক্যানসার অ্যাডভোকেট’ হিসেবে ছিলেন ক্যানসার-জয়ীরা। যাঁরা খুব কাছ থেকে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই দেখেছেন, যাঁরা রোগীর সেবা করেছেন, হাজির ছিলেন তাঁরাও। চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি নার্স, প্যাথোলজিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ, সিস্টেম বায়োলজিস্টরাও ছিলেন। দেড়শো থেকে দু’শো ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা, চিকিৎসার যন্ত্রপ্রস্তুতকারক ও স্টার্ট আপ সংস্থাও যোগ দিয়েছিল সম্মেলনে। বহু মানুষ এসেছিলেন ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ছিলেন ক্যানসার বিষয়ক সাংবাদিকেরা। অল্পবয়সি গবেষকদের জন্য বিশেষ জায়গা রাখা হয়েছিল সম্মেলনে। কারণ, তাঁরাই পরবর্তী প্রজন্মের গবেষক।

যে রোগে মানুষ একটু একটু করে ফুরিয়ে যায়, সর্বস্বান্ত হয়ে যায় বহু পরিবার, সেখানে ‘তুমি একা নও’ এ বার্তাই যেন বিশল্যকরণী। সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার-গবেষক অরিন্দম বসু। তিনি বলেন, ‘‘এক ছাদের তলায় ক্যানসার-সম্পর্কিত এত বড় যজ্ঞ নিজের চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা সত্যিই মুশকিল। ক্যানসারকে কী ভাবে আমরা আরও ভাল করে বুঝতে পারি, তার একটা বৃহৎ প্রচেষ্টা। এখনও আমরা অনেকটাই জানি না। এখনও খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো অবস্থা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘২৫ বছর আগে ট্রাস্টুজ়ুম্যাব নামে একটি ওষুধ আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (এফডিএ)-এর অনুমোদন পেয়েছিল। সারা বিশ্বে ৩০ লক্ষের বেশি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলা এই ওষুধ গ্রহণ করেছেন ও উপকার পেয়েছেন। ট্রাস্টুজ়ুম্যাব-এর ২৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করা হল সম্মেলনে। ওই ওষুধ আবিষ্কারের পিছনে যে চার জন পথিকৃৎ ছিলেন, তাঁরা সম্মেলনে ছিলেন। কী ভাবে এই ওষুধকে আরও উন্নত করা যায়, সেই বিষয়ে বলেছেন তাঁরা।’’ এক দিকে যেমন পুরনোদের কীর্তিকে অভিবাদন জানানো হয়েছে, তেমনই পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের উৎসাহ দিতে নানা ফেলোশিপ শুরু করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়ুয়ারা এই ফেলোশিপের আবেদন জানাতে পারেন। অরিন্দম বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ক্যানসারের চিকিৎসায় সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হল সমবেত উদ্যোগ। যেখানে গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ এসে একসঙ্গে কাজ করবেন। এ ভাবেই উন্নততর চিকিৎসার রাস্তা বার করতে পারি আমরা।’’

একই বার্তা দিয়েছেন আমেরিকান ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, নাইট ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপিকা লিজ়া কউসেনস। ‘টিম-ওয়ার্ক’-এ জোর দিয়েছেন তিনিও। সেই সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বাকালীন ক্যানসার, শিশুদের ক্যানসারের গবেষণায় আরও বেশি নজর দেওয়ার কথা বলেছেন।

আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ এরিকা এম কিম বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের কথা। বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে বায়োপসির সময়ে রোগীদের থেকে সংগৃহীত যে বিপুল সংখ্যক ক্যানসার কোষের নমুনা স্লাইড আকারে জমে রয়েছে সংরক্ষণাগারে, সেগুলিকে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্লেষণ করা হোক। এতে ক্যানসারের চরিত্র সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য হাতে আসবে। ফলে রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই দ্রুত তা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তা ছাড়া ক্যানসারের ড্রাগ রেজ়িসট্যান্স (যখন কোনও রোগীর ওষুধ কাজ করে না) সম্পর্কেও বোঝা সম্ভব হবে।

আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে এই সম্মেলনে। —‘কোমর্বিডিটি’ বা আনুষঙ্গিক অসুস্থতা। অতিমারি পর্বে এই শব্দ খুবই পরিচিতি পেয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, কোনও রোগীর যদি আনুষঙ্গিক অসুস্থতা না থাকে, তাঁর নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল থাকে, তা হলে সেটাই ক্যানসার দমনে হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। কী ভাবে? ক্যানসার কোষগুলি কিছু বিপজ্জনক প্রোটিন তৈরি করে। যা কি না মুখোশ পরিয়ে রাখে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যানসার কোষগুলিকে চিনতেই পারে না। এ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে ওষুধ প্রয়োগ করে সেই মুখোশ টেনে খুলে দিলেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চিনতে পারে ক্যানসার কোষগুলিকে। তার পর তাদের মেরে ফেলে। কিন্তু এর জন্য শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হতে হবে। তবে তা হয়তো সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই রোগী-বিশেষে আলাদা চিকিৎসা (পার্সোনালাইজ়ড ট্রিটমেন্ট) প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

cancer awareness Cancer Research Center usa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE