Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Jeffrey Epstein

এপস্টাইন নথিতে নাম হিলারি ক্লিন্টন, লিয়োনার্দোর

জেফ্রি এপস্টাইন যৌন কেলেঙ্কারি মামলায় বুধ ও বৃহস্পতিবারের পর গতকাল তৃতীয় দফায় নথি প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। ১৩০০ পাতার সেই নথিতে রয়েছে এমনই সব বিস্ফোরক তথ্য।

An image of hillary clinton

হিলারি ক্লিন্টন। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৯
Share: Save:

ক্যারিবীয় সাগরের মাঝে ব্যক্তিগত মালিকানার একটি দ্বীপ। নাম তার পিডো আইল্যান্ড। আমেরিকান ধনকুবের জেফ্রি এপস্টাইনের গোপন সাম্রাজ্য ছিল সেখানেই। ব্যক্তিগত বিমানে পৃথিবী-বিখ্যাত অতিথিদের উড়িয়ে আনা হত দ্বীপের বুকে, বিলাসবহুল প্রাসাদে। বিমানের নাম ছিল ‘লোলিটা এক্সপ্রেস’। নাবালিকা আর শিশুদের দিয়ে ওই প্রাসাদে যৌনচক্র চালাত এপস্টাইন। অতিথিদের ‘বিশেষ মালিশ’ করে দিলে ২০০ ডলার করে দেওয়া হত প্রত্যেককে। নতুন মেয়ে জোগাড় করে আনতে পারলে মিলত আরও ইনাম। এ ছাড়া এপস্টাইনের ফ্লরিডার পাম বিচের বাড়িতেও নাবালিকাদের যৌনচক্র চলত।

জেফ্রি এপস্টাইন যৌন কেলেঙ্কারি মামলায় বুধ ও বৃহস্পতিবারের পর গতকাল তৃতীয় দফায় নথি প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। ১৩০০ পাতার সেই নথিতে রয়েছে এমনই সব বিস্ফোরক তথ্য। আর প্রায় ১৫০ জন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম। সকলেই যে এপস্টাইনের অপরাধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন তা নয়। অনেকের নাম উঠে এসেছে শুধু মাত্র এপস্টাইনের পরিচিত হিসেবে। তবে তাঁরা সকলেই কোনও না
কোনও সময়ে পিডো আইল্যান্ডের প্রাসাদে বা এপস্টাইনের বাড়িতে গিয়েছিলেন।

তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে দুই প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরে হিলারি ক্লিন্টনের নাম তৃতীয় নথিতে প্রকাশ্যে এসেছে। লোলিটা এক্সপ্রেসে চেপে তিনিও পিডো দ্বীপের প্রাসাদে গিয়েছিলেন। তবে হিলারির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তিনি সম্ভবত এপস্টাইনের কুকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এপস্টাইনের বিরুদ্ধে অন্যতম মামলাকারী ভার্জিনিয়া জিওফ্রে তাঁর মামলায় অন্যতম সাক্ষী হিসেবে হিলারির নাম উল্লেখ করেছেন। এই মামলার আর এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী, এপস্টাইনের তৎকালীন ম্যানেজার হুয়ান অ্যালেসি জানিয়েছেন, ক্লিন্টনের সঙ্গে তাঁর আলাপ এপস্টাইনের ব্যক্তিগত বিমানে। আর ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হয় পিডো দ্বীপের প্রাসাদে। তবে ট্রাম্পকে কখনও সেখানে রাত কাটাতে বা মালিশ নিতে দেখেননি অ্যালেসি। ট্রাম্প সেখানে যেতেন অল্প সময়ের জন্য। এক বার রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে নৈশভোজ সেরেছিলেন ট্রাম্প।

তবে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই অ্যান্ড্রু সেখানে প্রায়ই যেতেন। কয়েক সপ্তাহ টানা থাকতেন। রোজ নতুন নতুন নাবালিকাদের দিয়ে মালিশ করাতেন। একটি মামলায় এক মহিলার অভিযোগ, রাজকুমার অ্যান্ড্রু একসঙ্গে একাধিক নাবালিকার সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হতেন। এপস্টাইন নাবালিকাদের জোর করে তা করতে বাধ্য করত। অ্যান্ড্রুর প্রাক্তন স্ত্রী সারাকেও ওই দ্বীপে দেখেছিলেন অ্যালেসি। তবে এই অভিযোগ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। এ ছাড়াও তৃতীয় দফায় প্রকাশিত হয়েছে ১৫০ জন এপস্টাইন ঘনিষ্ঠের নাম। সেই তালিকায় রয়েছেন হলিউড অভিনেতা লিয়োনার্দো দি ক্যাপ্রিও, আমেরিকান যাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড, ব্রিটিশ মডেল নেওমি ক্যাম্পবেল, পরিচালক জর্জ লুকা, অভিনেত্রী ক্যামেরন ডিয়াজ়-সহ অনেকে।

২০০৮ সালে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে নাবালিকা ধর্ষণ ও নিগ্রহের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। ২০১৯ সালের অগস্টে গ্রেফতারির মাস খানেকের মাথায় জেলেই আত্মহত্যা করে এপস্টাইন। তার বান্ধবী গিসলেন ম্যাক্সওয়েল শিশু ও নাবালিকাদের নিয়ে যৌন পাচার চক্র চালানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০ বছরের জন্য জেলে গিয়েছে। এই ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন এপস্টাইনের হাতে নাবালিকা অবস্থায় নিগৃহীত ভার্জিনিয়া জিওফ্রে নামে এক মহিলা। সেই মামলাতেই নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক লোরেটা প্রেসকা রায় দেন, এপস্টাইন ও গিসলেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় যে সব খ্যাতনামা ব্যক্তির নাম আছে, তা প্রকাশ করতে কোনও বাধা নেই। এর পরেই পর পর তিন দিন নথি প্রকাশ করেছে আদালত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE