ছবি: এএফপি।
সংক্রমণ তেমন ‘বাড়াবাড়ি নয়’, তাই তিনি হোয়াইট হাউসেই কোয়রান্টিনে থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডাক্তারেরাও তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কোভিড-রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে এয়ারলিফ্ট করে নিয়ে যাওয়া হল ওয়াল্টার রিড সেনা হাসপাতালে। সাউথ লন থেকে কপ্টারে ওঠার আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের দিকে ঢিমে তালে হাত নাড়ালেন প্রেসিডেন্ট। মুখে মাস্ক। হাসপাতালে পৌঁছনোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ট্রাম্প জানালেন, ‘‘মনে হচ্ছে, ভালই আছি। হোয়াইট হাউসে মেলানিয়াও ভাল আছেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’’ একটু যেন অবসন্ন মনে হল ট্রাম্পের গলাটা। হোয়াইট হাউসও পরে বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘‘একটু ক্লান্ত হলেও প্রেসিডেন্ট খোশমেজাজেই আছেন।’’ রাতের দিকে হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্প ‘ভাল’ আছেন, কিন্তু পরের ৪৮ ঘণ্টা ‘গুরুত্বপূর্ণ’।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সামান্য জ্বর-সর্দি রয়েছে ট্রাম্পের। নাক বন্ধ। কিন্তু তাঁর বয়স যে-হেতু ৭৪, সঙ্গে ওবেসিটিও রয়েছে, তাই বিশেষজ্ঞদের একাংশ কিছুটা হলেও চিন্তিত। হোয়াইট হাউসে কিছু ক্ষণ দিতে হলেও হাসপাতালে এখনও তাঁকে অক্সিজেন-সাপোর্ট দিতে হয়নি বলে খবর। অ্যান্টি-ভাইরাল রেমডেসিভিয়ার অবশ্য চালু হয়ে গিয়েছে। দেওয়া হচ্ছে ভিটামিট ডি, জ়িঙ্ক, ফ্যামোটিডিন, অ্যাসপিরিন। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, এরই সঙ্গে রেগেনেরন অ্যান্টিবডি ককটেলের ৮ গ্রামের সিঙ্গল ডোজ়ও দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টকে। কিন্তু এই ওষুধ তো এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে! বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয়নি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ কন্ট্রোল সংস্থা। আর কোনও ওষুধ বা থেরাপি কাজ না করলেই পরীক্ষামূলক ভাবে মৃত্যুপথযাত্রী কোভিড-আক্রান্তকে এই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে আমেরিকায়।
সেই ওষুধ তা-হলে ট্রাম্পকে কেন? প্রেসিডেন্ট কি গুরুতর অসুস্থ? জল্পনা শুরু হতেই ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধু ওই অ্যান্টিবডি ককটেল প্রস্তুতকারী সংস্থার সিইও লিয়োনার্দ এস জানালেন, এটা ‘স্পেশাল কেস’। তাঁর কথায়, প্রেসিডেন্টের বয়সের কথা মাথায় রেখেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না ডাক্তারেরা। ওই ওষুধ প্রয়োগে কাল তাই তড়িঘড়ি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। লিয়োনার্দের কথায়, ‘‘প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, এই ওধুধ সংক্রমণ কমানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করছে। আশা করছি, শীঘ্রই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন ট্রাম্প।’’
ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছিলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে তিনি ‘ওয়ান্ডার ড্রাগ’ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (ম্যালেরিয়ার ওষুধ) নিচ্ছিলেন। তবুও তিনি নিষ্কৃতি পেলেন না। ট্রাম্প দম্পতির আগে করোনা ধরা পড়েছিল প্রেসিডেন্টের শীর্ষ উপদেষ্টা হোপ হিকসের। আজ জানা গেল, আরও চার জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর। এঁরা হলেন— দুই রিপাবলিকান সেনেটর, হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন কৌঁসুলি কেলিয়ান কনওয়ে এবং ট্রাম্পের প্রচার ম্যানেজার বিল স্টেপিন। দুই সেনেটর আক্রান্ত হওয়ায় এই মাস সেনেটে কাজকর্ম হবে না। সূত্রের খবর, এঁরা প্রত্যেকেই ২৫ সেপ্টেম্বর রোজ় গার্ডেনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মনোনয়নের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যে অনুষ্ঠানে প্রায় কাউকেই মাস্ক পরে থাকতে দেখা যায়নি, ছিল না স্বাভাবিক দূরত্ববিধিও। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক সাংবাদিকও সংক্রমিত হয়েছেন বলে খবর। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন নোত্র দাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট রেভারেন্ড জন জেনকিন্স। তিনিও সংক্রমিত। মাস্ক না-পরাটা যে ভুল হয়েছিল, প্রকাশ্যে তা স্বীকারও করেছেন তিনি। জেনকিন্স জানান, হোয়াইট হাউসে র্যাপিড টেস্টে রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় মাস্ক খুলে ফেলতে বলা হয়েছিল তাঁকে।
আজ মার্কিন প্রেসিডেন্টের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। ট্রাম্পের সুস্থতা কামনা করেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিন্টন থেকে শুরু করে এ বারের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনও। সঙ্গে অবশ্য মাস্ক পরা, হাত ধোওয়া কিংবা দূরত্ববিধি মেনে চলার কথা বলে পরোক্ষে ট্রাম্পকে খোঁচাও দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy