Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Iran

ব্রিটিশ তেল সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করলেন ইরাকি বাবা

মৃত তরুণের বাবা হুসেন জুলুদ আদালতে দাবি করেছেন, গ্যাস পোড়ানোর ধোঁয়ার ক্ষতিকারক রাসায়নিকের জন্যই ক্যানসারে আক্রান্ত হন তাঁর ছেলে আলি। এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে ওই ব্রিটিশ তেল সংস্থাটির বিরুদ্ধে।

—প্রতীকী চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:২২
Share: Save:

ক্যানসারে আক্রান্ত এক তরুণের মৃত্যুর জন্য ব্রিটিশ তেল সংস্থা বিপি-র বিরুদ্ধে মামলা করলেন তাঁর বাবা।

দক্ষিণ ইরাকের বন্দর শহর বসরা। তার উত্তরে ইরাকের বৃহত্তম তেলের খনি রুমেলা। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম তেলের খনিও সেটি। রুমেলার উত্তর অংশে তেল খনন করে ব্রিটিশ তেল সংস্থাটি। খনিজ তেল উত্তোলনের সময় যে প্রাকৃতিক গ্যাস নিঃসৃত হয়, উত্তর রুমেলায় প্রতিদিন তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সর্বাধিক প্রাকৃতিক গ্যাস দহন করা হয় রুমেলা খনিতে।

মৃত তরুণের বাবা হুসেন জুলুদ আদালতে দাবি করেছেন, গ্যাস পোড়ানোর ধোঁয়ার ক্ষতিকারক রাসায়নিকের জন্যই ক্যানসারে আক্রান্ত হন তাঁর ছেলে আলি। এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে ওই ব্রিটিশ তেল সংস্থাটির বিরুদ্ধে। তবে হুসেনই প্রথম কোনও ব্যক্তি, যিনি ক্ষতিপূরণের জন্য সংস্থাটির বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করলেন।

হুসেন জানিয়েছেন, উত্তর রুমেলা তেলখনির গা ঘেষেই তাঁদের গ্রাম। খনিজ গ্যাস দহনের ফলে সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এই ধোঁয়ায় নানা ধরনের বিষাক্ত কার্সিনোজেনিক অর্থাৎ, ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ থাকে। শুধু তাঁর ছেলে নয়, গ্রামের বেশ কয়েক জন কিশোর-কিশোরীও ক্যানসারে আক্রান্ত বলে একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন হুসেন। এক বছরের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে গ্রামের আরও পাঁচ জনের।

২০২০ সালে অ্যাকিউট লিম্ফোম্যাটিক লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয় আলি। দু’বছর ধরে কেমোথেরাপি, হাড়ের মজ্জার প্রতিস্থাপন ও রেডিয়োথেরাপির মতো কষ্টকর ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা চলছিল তার। ২০২১-এ একটু সুস্থ হয়েছিল আলি। চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, সেরে উঠছে ছেলেটি। তখন আলির নামে তহবিল বানিয়ে অনুদান সংগ্রহ করতে শুরু করেন হুসেন। ইচ্ছে ছিল, ভারতে নিয়ে গিয়ে ছেলের আরও চিকিৎসা করাবেন। কিন্তু ২০২২-এ আলি ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত বছর ২১ এপ্রিল মৃত্যু হয় তার।

আলির ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর জন্য ব্রিটিশ তেল সংস্থার দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছেন হুসেন। তাঁর দাবি, প্রাকৃতিক গ্যাস দহনে দূষণের জন্যই মৃত্য হয়েছে তাঁর ছেলের। সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা করার অনেক আগে থেকেই এই দূষণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন হুসেন। গ্যাস দহন না করার আর্জি জানিয়ে বারবার ব্রিটিশ তেল সংস্থাটির কাছে গিয়েছেন। তাঁর কথা শুনে রুমেলায় এসে অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিং করে এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমও। তারাও দেখে যে, গ্যাস জ্বালানোর ধোঁয়ায় বেনজ়িনের মতো নানা ক্ষতিকারক ও কার্সিনোজেনিক রাসায়নিক প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু কোনও কিছুতেই গ্যাস পোড়ানো বন্ধ করেনি বিপি। পরিস্থিতির বদল না হওয়ায় সরাসরি সংস্থাটির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন পুত্রহারা বাবা।

বিপি যে-হেতু ব্রিটিশ সংস্থা, তাই ব্রিটেনের আদালতেই মামলা করে ছেলের মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন হুসেন। তিনি জানিয়েছেন, আলির চিকিৎসা করাতে বিপুল অর্থব্যয় হয়েছে তাঁর। সেই অর্থ ছাড়া ছেলের মৃত্যুতে যে ‘অপূরণীয় নৈতিক ক্ষতি’ হয়েছে, তার জন্যও ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন তিনি। বিপি-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সংস্থাটির তরফে দাবি করা হয় যে, রুমেলা খনির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বসরা এনার্জি কম্পানি লিমিটেড নামের একটি ইরাকি সংস্থা।

হুসেনের কথায়, ‘‘আশা করি আমার কথা বাকিদের কাছে পৌঁছবে ও তাঁরা আমার পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন। এটা শুধু আমার একার সমস্যা নয়। এই অঞ্চলে যাঁরা বাস করেন, সবাই একই সমস্যার সম্মুখীন।’’ হুসেন আরও জানিয়েছেন, তাঁর আইনি পদক্ষেপ করার উদ্দেশ্য, রুমেলা খনিতে নিয়মিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দহন বন্ধ করা। যাতে আর কোনও পরিবার এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার না হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy