চালর্স ও লয়েস ও’ব্রায়েন। ছবি: সংগৃহীত।
বইপত্তর বা ডাকটিকিট নয়, তাঁদের নেশা পোকামাকড় সংগ্রহ করা। সে নেশার টানেই বহু বছর আগে তাঁরা একে অপরের কাছে এসেছেন। ঘর বেঁধেছেন। আর পোকামাকড়ের নেশাতেই ছুটে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে। কখনও কখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের সংগ্রহ। এ ভাবে গত ষাট দশক ধরেই তাঁদের সংগ্রহে জমেছে দশ লাখেরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়। মার্কিন মুলুকে অ্যারিজোনার টাসকন শহরের অশীতিপর দম্পতি চালর্স ও লয়েস ও’ব্রায়েনের সেই সংগ্রহের বর্তমান বাজারদর প্রায় এক কোটি ডলারে। সম্প্রতি নিজেদের সারা জীবনের সেই ভান্ডার ও’ব্রায়েন দম্পতি তুলে দিলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভারসিটি কর্তৃপক্ষের হাতে। এত বড় মাপের কোনও ব্যাক্তিগত সংগ্রহ গোটা দুনিয়াতেই বিরল।
আরও পড়ুন
প্রশাসন ও গোরক্ষা বাহিনীর জুলুমে যোগী রাজ্যে বন্ধ পাঁঠা, মুরগিও
চালর্স ও লয়েস ও’ব্রায়েনের পোকামাকড়ের সংগ্রহ। ছবি: সংগৃহীত।
অ্যারিজোনার বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞানী নিকো ফ্রান্জের মতে, ও’ব্রায়েন দম্পতি এই সংগ্রহ গবেষকদের কাছে সোনার খনি হাতে পাওয়ার মতোই মূল্যবান। সংগ্রহে রয়েছে ছাড়পোকা, গুবরেপোকা-সহ ছা্ড়াও অনেক বিরল প্রজাতির পোকামাকড়। আর প্রতিটি পোকামাকড়ের নমুনার এক একটির দাম হতে পারে ৫ থেকে ৩০০ ডলার। এর মধ্যে রয়েছে এমন হাজারের বেশি পতঙ্গ যা হয়তো গবেষকদের কাছেও বিরল প্রজাতির। পতঙ্গদের বৃহত্তর বংশলতিকা তৈরি ছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় এই সংগ্রহ খুবই কাজে আসবে বলে মত নিকো ফ্রান্জের। আপাতত এই বিপুল ভান্ডারের ক্যাটালগ তৈরিতে তিনি কাজে লাগিয়েছেন পার্ট-টাইমার হিসাবে কাজ করা ছাত্র-ছাত্রীদের। এক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পার্ট-টাইমার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ও’ব্রায়েন দম্পতি। কেমিস্ট হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের টক্সিকোলজি বিভাগেও পার্ট-টাইম কাজ করতেন লয়েস। সেই সময়ই পতঙ্গবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করেন। তখনই আলাপ সহ-শিক্ষক চালর্সের সঙ্গে। এর পর চালর্সের সঙ্গে সঙ্গে পোকামাকড়েরও প্রেমে পড়েছিলেন লয়েস। সেই শুরু। এর পর প্রায় দশকের পর দশক ধরে কখনও অ্যান্টার্কটিকায় বিরল প্রজাতির উইভিল বা কখনও নিউজিল্যান্ড বা সলোমন আইল্যান্ডে মাসের পর মাস খুঁজে বেড়িয়েছেন পোকামাকড়।
পোকামাকড়ের সংগ্রহ নিয়ে লয়েস। ছবি: সংগৃহীত।
পোকামাকড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভরে উঠেছে তাঁদের ভান্ডার। নিকারাগুয়ায় গিয়ে দেখা মিলেছে এমন এক জনের যিনি তোতাপাখির বুলি ছাড়া কখনও কোনও মানুষের সঙ্গে কথা বলেননি। এক রাতে ভেনেজুয়েলায় জঙ্গলে তাঁদের কুমিরচোর ভেবে বন্দুকের সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল। এ সমস্ত বিপদআপদ কাটিয়েই শুধুমাত্র পোকামাকড় সংগ্রহ করে গিয়েছেন চালর্স ও লয়েস। লয়েস বলেন, “কেমন যেন ইন্ডিয়ানা জোন্সের মতো চার্লের (চালর্স ও’ব্রায়েন)জীবন। আর আমি এক অসাধারণ সময় কাটিয়েছি।” কেমন করে পোকামাকড় সংগ্রহ করেন তাঁরা? লয়েস বলেন, “পদ্ধতিটা খুই সোজা। প্রথমে একটা গাড়িভাড়া করি। তার পর আমরা ছুটে বেড়াই জলে-জঙ্গলে-মরুভূমিতে, যেখানে দু’চোখ যায়।” এ ভাবেই এই নেশার টানেই অবিরত ছুটে চলেছেন তাঁরা। সন্তানহীন ও’ব্রায়েন দম্পতি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে বয়স থাবা বসাচ্ছে তাঁদের শরীরে। গত ছ’মাসে দু’বার নিজের পিঠের হাড় ভেঙেছেন চালর্স। বেশির ভাগ সময় কাটছে ঘরের মধ্যেই। আর ১৪ ঘণ্টার পরিবর্তে কাজ করতে পারছেন দিনে ১০ ঘণ্টা। নিজেদের গোটা সংগ্রহ দান করার পর এখন তাঁদের সঙ্গী সারা ঘর-বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পোকামাকড়ের খালি বাক্স-শোকেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy