Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
Tom and Jerry

আশিতে আসিয়া পড়িল টম অ্যান্ড জেরি!

মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা এমজিএম স্টুডিয়োর অ্যানিমেশন বিভাগে কাজ করতেন বিল হ্যানা এবং জো বারবেরা।

সংবাদ সংস্থা
টরন্টো শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৫
Share: Save:

ইঁদুরছানার জ্বালায় তিতিবিরক্ত বেড়ালটি। চিজ খাইয়ে তাকে বিপদে ফেলার ছক কষে যায়। বুদ্ধিমান ইঁদুর চিজ খেয়ে সেঁধিয়ে যায় নিজের গর্তে। বেড়ালের লেজও তার টিকি ছুঁতে পারে না!

খুব চেনা গল্প। আর খুব চেনা দু’টি কার্টুন চরিত্র— ‘টম অ্যান্ড জেরি’। সব চেনা হলেও চেনা নয় তাদের গড়ে ওঠার অনেক গল্প। আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার ঠান্ডা লড়াইয়ের আবহে তাদের জন্ম। অ্যানিমেটেড এই শর্ট কালে কালে জিতেছে অস্কারও। আট থেকে আশির পছন্দের এই কার্টুন-জুটি এই সপ্তাহে ৮০ বছরে পা দিচ্ছে।

মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা এমজিএম স্টুডিয়োর অ্যানিমেশন বিভাগে কাজ করতেন বিল হ্যানা এবং জো বারবেরা। অন্য সংস্থার পর্কি পিগ বা মিকি মাউসের জনপ্রিয়তার সঙ্গে তখন পাল্লা দিতে চাইছে তাঁদের সংস্থা। হ্যানা-বারবেরার বয়স সেই সময়ে ৩০-এর নীচে। ভাবতে বসলেন নিজেদের মতো করে। বারবেরা বললেন, সাধারণ ইঁদুর-বেড়ালের কার্টুন ভাবলে কেমন হয়? তাদের লড়াই-ছুটোছুটিটাই যদি গল্প হয়? খুব আনকোরা নয় ঠিকই, তা-ও ঝুঁকিটা নিয়েই ফেললেন দুই সহকর্মী। ১৯৪০ সালে ইঁদুর-বেড়াল নিয়ে প্রথম তৈরি হল ‘পাস গেটস দ্য বুট’। তখন তাদের নাম ছিল জ্যাসপার আর জিঙ্কস।

শুরুতেই বাজিমাত। তুমুল জনপ্রিয় হয় সেটি। অ্যানিমেটেড শর্ট-এর ক্যাটেগরিতে অস্কার মনোনয়নও জুটে যায় তার। সে সময়ে অবশ্য অ্যানিমেটরদের কোনও কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি। কারণ প্রযোজনা সংস্থা তখনও ওই জুটিকে নিয়ে ইতস্তত করছে। এই রকম সময়ে টেক্সাস থেকে এক জন প্রভাবশালী শিল্পপতির চিঠি এল। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, সেই মজার বেড়াল-ইঁদুরকে আবার কবে দেখা যাবে? জ্যাসপার আর জিঙ্কস এর পরেই পরিচিত হয় টম আর জেরি-র নামে।

তবে তাদের দুষ্টুমির মধ্যে কথাবার্তা রাখার ব্যাপারে আলাদা করে কিছু ভাবেননি স্রষ্টারা। আবহে ছিল স্কট ব্র্যাডলির তৈরি মিউজিক। চার্লি চ্যাপলিনের নিঃশব্দ ছবি দেখে বড় হওয়া বারবেরা বলেছিলেন, কথা ছাড়া শুধু মজা দিয়েই দর্শকের মন ভোলানো সম্ভব। টমের গলায় মানুষের মতো চিৎকারের শব্দ দিয়েছিলেন হ্যানাই।

এর পরের দুই দশক হ্যানা আর বারবেরা টম-জেরির ১০০টি শর্ট বানিয়েছিলেন। সপ্তাহের পরে সপ্তাহ লেগে যেত একটা শর্ট বানাতে। প্রযোজনার খরচ লাগত ৫০ হাজার ডলার। তাই বছরে খুব বেশি সংখ্যক শর্ট বানানো সম্ভব ছিল না। কার্টুন-বিশেষজ্ঞ জেরি বেকের কথায়, ‘‘ওদের কার্টুন ছোটবেলায় সবাই দেখে। আর বড় হয়েও। বড় হলে প্রশ্নটা জাগে, কী ভাবে ওদের তৈরি করা হয়েছিল! অ্যানিমেশন ব্যাপারটাই এমন। এভারগ্রিন।’’

এমজিএম স্টুডিয়োর প্রযোজনা থেকে ১৯৫০-এর মাঝামাঝি ফ্রেড কুয়িম্বি অবসর নেওয়ার পরে হ্যানা-বারবেরা দায়িত্ব নেন কার্টুন বিভাগের। বাজেটের টানাটানিতে ১৯৫৭ সালে সে বিভাগ বন্ধ হয়ে যায়। হ্যানারা নিজেদের প্রযোজনা সংস্থা খোলেন। তার কয়েক বছর পরে আবার এমজিএম টম-জেরিকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে স্রষ্টাদের হাত ধরে নয়, প্রাগের এক স্টুডিয়োকে ভার দেওয়া হয় এই কাজের। তারা তেমন জমাতে পারেনি। আরও হাত ঘুরেছে টমরা। শেষমেশ ১৯৭০ নাগাদ হ্যানা-বারবেরা ফেরেন টম-জেরিতে। তত দিনে টম-জেরির প্রথম দিককার এপিসোড নিয়ে নানা আপত্তি উঠেছে। এই কার্টুনে ‘ম্যামি টু শুজ’ বলে যে কৃষ্ণাঙ্গ পরিচারিকাকে দেখা যায়, প্রশ্ন ওঠে তাঁর কথা (যৎসামান্য যা আছে) বলার ধরন নিয়ে। কোমরের নীচের অংশ থেকে পা— কার্টুনে এইটুকুই দেখানো হয় এই চরিত্রের। জাতিগত বিদ্বেষ থেকে এই চরিত্রটি দেখিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে বলে দাবি ওঠে। এশিয়া এবং আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের ‘আপত্তিকর’ ভাবে দেখাতে কার্টুনে বিভিন্ন বিদ্রুপের মুহূর্ত তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। আজকাল চেষ্টা করা হয় আপত্তিকর এপিসোডগুলিকে না দেখাতে।

এ সবে অবশ্য টম-জেরির জনপ্রিয়তায় আঁচ লাগেনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্কের তুলনা দিতে অন্তত দু’বার টম-জেরিকে স্মরণ করেছেন!

অন্য বিষয়গুলি:

Tom and Jerry Cartoon Metro Goldwyn Mayer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy