—ছবি রয়টার্স।
মারণ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতেই বাতিল হয়েছিল ক্লাস। আইয়োয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে আধ ঘণ্টা দূরত্বে বাড়ি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ১৮ বছরের জেরাল্ড বেল্জের। বাইরে প্রবল তুষারঝড় হচ্ছে দেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ গাড়ি নিয়ে বেরোলে মাঝপথে আটকে যেতে পারেন। ছেলের উপস্থিত বুদ্ধিকে মনে-মনে সায় দিয়েছিলেন মাইকেল। পরের দিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের বাইরে জেরাল্ডকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, প্রবল ঠান্ডাতেই মৃত্যু হয়েছে জেরাল্ডের। এখনও পর্যন্ত ঠান্ডায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে।
হাসপাতালগুলোয় থিকথিক করছে রোগীর ভিড়। বেশির ভাগই ভর্তি হয়েছেন তুষারক্ষত নিয়ে। উত্তর-মধ্য আমেরিকা জুড়ে চলতে থাকা মেরু ঘূর্ণাবর্তে এক এক জনের ক্ষত এতই ভয়াবহ যে, হাত-পা বাদও যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কুক কাউন্টির স্বাস্থ্য পরিষেবার বার্ন ইউনিটের প্রধান স্টেথিস পলাকিডাস বলেন, ‘‘ভয়াবহ পরিস্থিতি এ বছরে।’’ তাঁর হাসপাতালে এই পর্যন্ত দেড়শো জন তুষারক্ষত নিয়ে ভর্তি। তাঁদের বেশির ভাগই ঘরহীন মানুষ। আর না হলে পেশাসূত্রে অনেকটা সময় বাড়ির বাইরে রাস্তায় কাটাতে হয়। পলাকিডাস বলেন, ‘‘এক-এক জনের হাত-পায়ের ক্ষত মারাত্মক।’’ তা ছাড়া বয়স অনুযায়ী, কে কোথায় থাকেন, কী কাজ করেন, ভেজা গ্লাভস, মোজা পরে থাকতে হয় কি না, এই সবের উপরে নির্ভর করছে অবস্থা। ডাকোটা, মিনেসোটা, ইলিনয়, আইয়োয়া, ইন্ডিয়ানা, মিশিগান, নিউ হ্যাম্পশায়ার, উইসকনসিন, নিউ ইয়র্ক এবং পেনসিলভ্যানিয়ায় তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। যা মেরুবৃত্তের মধ্যে অবস্থিত আলাস্কার বারো শহরের থেকেও কম।
এরই মধ্যে পোলার ভার্টেক্স বা মেরু ঘূর্ণাবর্তের জেরে উত্তর-মধ্য আমেরিকায় আকাশ-জুড়ে এক অদ্ভূত সৌর-কারসাজি দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘সানডগ’ বলে। হাওয়ায় ভাসতে থাকা বরফের কুচির মধ্যে দিয়ে সৌররশ্মি যাওয়ার সময়ে সূর্যের ২২ ডিগ্রি বাম ও ডান বা দু’দিকেই রঙিন আলোর খেলা দেখা যাচ্ছে। ‘সানডগ’ শব্দটির উৎপত্তি যদিও পরিষ্কার নয়। শিকাগোর এক আবহবিদ জানাচ্ছেন, গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী দেবরাজ জিউস তাঁর পোষ্য কুকুরদের নিয়ে হেঁটে যান। সূর্যের দু’পাশে ওই আলোর চমক আসলে জিউসের কুকুর। অনেকেই সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
তবে খুব শিগগিরই শেষ হবে মেরু ঘূর্ণাবর্তের খেল্। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, যে সব এলাকায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নীচে নেমে গিয়েছিল, আচমকাই সেখানে তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে যাবে। এবং খুব দ্রুত গতিতে। যার জেরে হয়তো নতুন করে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বাসিন্দাদের। যেমন শিকাগোয় তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে বলে চিন্তায় আবহবিদরা। শীতের কামড় যেতে না যেতে গরমে পড়বে আমেরিকা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy