প্রেসিডেন্সির মান উন্নয়নে গড়া মেন্টর গ্রুপের মধ্য থেকেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের পূর্বতন অধিকর্তা, পদার্থবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য ওই দায়িত্ব নেবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, সব্যসাচীবাবু ব্যক্তিগত কারণে উপাচার্যের দায়িত্ব নিতে চান না। তবে প্রেসিডেন্সিতেই জগদীশচন্দ্র বসু চেয়ার অব ন্যাচারাল সায়েন্সের চেয়ার প্রফেসরের পদে থাকতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।
সব্যসাচীবাবু নিজে অবশ্য এই ব্যাপারে কিছুই বলতে চাননি। আর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলে দিয়েছেন, বিষয়টি তাঁরা জানা নেই। সোমবার দু’টি অনুষ্ঠানের পরে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন বলেন, “উনি (সব্যসাচীবাবু) কিছু জানাননি।”
তবে সরকারি সূত্রের খবর, সব্যসাচীবাবু গত শনিবার রাজভবনে গিয়ে আচার্য-রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে প্রেসিডেন্সির উপাচার্য-পদের দায়িত্ব নিতে তাঁর অনীহার কথা জানিয়েছেন। রাজ্যপাল তাঁকে এই ব্যাপারে আর একটু চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ দেন। তার পরে অবশ্য এখনও পর্যন্ত সব্যসাচীবাবু তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজভবনকে জানাননি বলে ওই সূত্রে জানা গিয়েছে।
যাত্রা শুরুর পর থেকে দু’জন অস্থায়ী উপাচার্য পেয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী উপাচার্য বাছাই করতে সার্চ বা সন্ধান কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। তাতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র চেয়ারম্যান বেদ প্রকাশ, প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা তথা প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রপের সদস্য নয়নজ্যোত লাহিড়ী। গত ১০ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রেসিডেন্সির প্রথম স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে সব্যসাচীবাবুকে বেছে নিয়েছেন আচার্য-রাজ্যপাল। এবং সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এই নির্বাচন। সব্যসাচীবাবু প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী এবং বর্তমানে মেন্টর গ্রুপেরও সদস্য।
নাম ঘোষণার পরেও উপাচার্য হতে কেন রাজি নন সব্যসাচীবাবু?
সব্যসাচীবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, প্রশাসনিক কাজের থেকে তিনি শিক্ষকতা এবং গবেষণাতেই বেশি উৎসাহী। সেই জন্য তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে হয়। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য হলে ওই সব দায়িত্বের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন না বলে মনে করেন তিনি।
সার্চ কমিটির এক সদস্য গত ১০ এপ্রিল বলেছিলেন, বাছাই-তালিকার তিন জনের মধ্যে সব্যসাচীবাবুই প্রবীণতম। এমনকী উপাচার্য হলে তিনি পুরো চার বছর কাজ করতেও পারতেন না। কারণ, আর আড়াই বছরের মধ্যে তাঁর ৬৫ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে। ওই বয়সের পরে সাধারণত উপাচার্য-পদে থাকা যায় না। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য হিসেবে সব্যসাচীবাবুর নাম জানিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতর যে-বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তাতেও বলা হয়, চার বছর বা প্রার্থীর ৬৫ বছর বয়স যেটি আগে হবে, সেই সময়েই তাঁর মেয়াদ শেষ হবে। তবে তাঁর নাম বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি সুপারিশ করেন। যোগ্যতার নিরিখেও তিনি এগিয়ে।
প্রেসিডেন্সির বর্তমান উপাচার্য মালবিকা সরকারের কার্যকাল শেষ হচ্ছে ১৫ মে। তার মধ্যেই সব্যসাচীবাবু দায়িত্ব নেবেন বলে আশা করছিল সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু তিনি অনীহা জানানোয় হয়তো নতুন করে উপাচার্য বাছাইয়ের প্রয়োজন হবে। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, উপাচার্য হিসেবে সার্চ কমিটি তিন জনের নাম প্রস্তাব করেছিল। তাতে সব্যসাচীবাবুর নাম ছিল এক নম্বরে।
সব্যসাচীবাবু শেষ পর্যন্ত উপাচার্য হতে রাজি না-হলে কী হবে?
নিয়ম অনুযায়ী বাছাই-তালিকার অন্য দু’টি নামের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারেন আচার্য-রাজ্যপাল। সরকারি সূত্রের খবর, সার্চ কমিটির দেওয়া তালিকার অন্য দু’টি স্থানে রয়েছে বোস ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষিকা এবং বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের এক শিক্ষকের নাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy