প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার ৭ মাস পরে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশল বিনিময় হয়েছে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার প্রধানমন্ত্রীর দরবারে হাজির হলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁদের দাবি, সারদা-কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও জেরা করতে হবে। সারদার মতো ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সব কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা সমন্বয় রেখে তদন্ত করুক, এই দাবিও জানিয়েছেন সূর্যবাবুরা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। ইডি, এসএফআইও, সেবি-র তদন্তও জোর কদমে চলছে। হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে দিল্লি এসে বিমান-সূর্যদের মোদীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্যে অবশ্য রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রথমত, তাঁরা চেয়েছেন সারদা-কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়ে তৃণমূলের উপরে আরও চাপ তৈরি করা। এবং দ্বিতীয়ত, বিজেপি-র মোকাবিলায় তৃণমূল-বাম কাছাকাছি আসার যে জল্পনা মাঝেমধ্যেই উঁকি দিচ্ছিল, তার বিনাশ ঘটানো। মাত্র কয়েক দিন আগেই যে মমতা বিজেপি-কে রুখতে কোনও শক্তিই অচ্ছুৎ নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন, তাঁরই নির্দেশে সোমবার তৃণমূল নেতারা সিপিএমের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে পথে নামার কথা বলেছেন। বাম-শাসিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আগরতলায় মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বসায় মমতা যে ভাবে কটাক্ষ করেছিলেন, এ দিন বিমান-সূর্যদের দরবারেও তেমনই রুষ্ট হয়েছেন। যার ফলে তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের নৈকট্যের জল্পনায় আপাতত জল ঢেলে দেওয়া গেল বলেই সিপিএম নেতারা মনে করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু চিঠি লিখে এই সময়েই দেখা করার আর্জি জানিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক রীতি মেনে সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন তিনি। সংসদের অধিবেশন চলছে বলে সংসদ ভবনেই দেখা করেছেন মোদী।
সারদা তদন্তে উঠে আসা তথ্যকে হাতিয়ার করে অমিত শাহ, অরুণ জেটলিরা তৃণমূলকে নিশানা করছেন। তদন্তে মুখ্যমন্ত্রীর নাম উঠে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও দাবি জানিয়েছেন সূর্যবাবুরা। বিমানবাবুর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীই কিছু নাম বলেছিলেন। এক ‘ম’ এখন জেলে। আরও দুই ‘ম’ মমতা এবং মুকুল রায়কেও জেরা করা উচিত!”
এ দিকে, বিমানবাবুরা যখন মদন-মুকুলকে জেরার দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাচ্ছেন, বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া সে দিনই মন্তব্য করেছেন, “তৃণমূলের তিনটে উইকেট গিয়েছে। আরও দু’টোও যাবে!” এ সবের জেরে বাম-বিজেপির এক সুরই দেখতে পাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যে শাসক দলের মুখপাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা শুনলাম, সূর্যবাবুরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন সিবিআই মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করুক। এটা খুবই কুরুচিকর এবং খারাপ দৃষ্টান্ত!” তাঁর হুঁশিয়ারি, আগামী দিনে তাঁরা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করবেন। একই ভাবে দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। এখানে কারও হস্তক্ষেপ চেয়ে মমতার বিরোধিতার অর্থ বিজেপির হাত শক্ত করা।” তৃণমূলের এমন আক্রমণের জবাবে ইয়েচুরি বক্তব্য, “এর মধ্যে বিজেপি বা রাজনীতির প্রশ্ন নেই। কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে। তাই কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছি।”
সিপিআইয়ের পল্লব সেনগুপ্ত, আরএসপি-র অবনী রায়দের নিয়েই এ দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন ইয়েচুরিরা। আজ কলকাতায় দলের যুব সমাবেশ থেকে আর এক বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের নবতিপর নেতা অশোক ঘোষ বলেছেন, “ভাবতে দুঃখ হয়, এক সময় মমতার কিছু বিষয়কে আমি সমর্থন (বামফ্রন্টে থেকেও) করেছিলাম! একই দিনে পথে নেমেছে যুব কংগ্রেসও।
অখিলেশ যাচ্ছেন, কিন্তু নারাজ মমতা
রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজের পরেও নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের যে কোনও উন্নতি হয়নি, তা আজ আবার স্পষ্ট হয়ে গেল। জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখ গুজরাতে প্রবাসী ভারতীয় দিবস অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি লিখে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কেন্দ্র। আজ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, সেই আমন্ত্রণ স্বীকার করে গুজরাতে আসছেন না মমতা। তবে মমতা না থাকলেও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডির মতো অ-বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা উন্নয়ন এবং বিদেশি লগ্নি টানার উদ্দেশ্যে ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy