জন্মসূত্রে কলকাতার বাসিন্দা, বর্তমানে সিঙ্গাপুরের এক নাগরিকের মাধ্যমে সারদার টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে দাবি করছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তাঁরা এমন তথ্যই পেয়েছেন। সূত্রটির দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের খোঁজে সিবিআই তদন্ত করছে, এটা তারই অংশ। এ ব্যাপারে ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি।
সিবিআইয়ের দাবি, সিঙ্গাপুরের ওই এজেন্ট আদতে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এবং রাজ্যের এক সাংসদের ঘনিষ্ঠ। রাজ্যেরই অন্য এক সাংসদের স্ত্রী গোটা বিষয়টি দেখভাল করতেন। মূলত ওই মহিলাই সিঙ্গাপুরের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিদেশে সম্পত্তি কেনার বিষয়ে তদারকিও করেন তিনিই। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে গিয়ে ওই এজেন্টের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন সিবিআই তদন্তকারীরা। তাঁরা বলছেন, সিঙ্গাপুরের ডেফু লেন এলাকায় ওই এজেন্টের অফিস রয়েছে। সিঙ্গাপুরের লিট্ল ইন্ডিয়া এলাকায় এক মালয়েশীয় নাগরিক ২০১১ সালের জুলাই মাসে একটি হোটেল বিক্রি করেছিলেন। সেই হোটেল বিক্রিতে ওই এজেন্টের হাত রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে সিবিআই। সৌদি আরবের জেড্ডাতেও একটি হোটেল বিক্রিতে ওই এজেন্টের হাত ছিল। দু’টি লেনদেনেই ওই এজেন্ট মারফত সারদার টাকা ঢুকেছে বলে সিবিআইয়ের দাবি।
সিবিআইয়ের আরও দাবি, ডেফু লেনে ওই এজেন্টের অফিস থেকেই হাওয়ালার মাধ্যমে সারদার টাকা সিঙ্গাপুর-সহ আরব দেশগুলিতে পাচার হয়েছে। টাকা গিয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও। সিঙ্গাপুরে যেমন ওই টাকা মূলত হোটেল ব্যবসায় লাগানো হয়েছে, তেমনই আরব দুনিয়া এবং ইউরোপে মূলত পর্যটন ব্যবসায় খাটছে সারদার টাকা। তদন্তে এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সিবিআইয়ের অনুমান, কমপক্ষে ৫০০-৬০০ কোটি টাকা তো বিদেশে পাচার হয়েছেই। তদন্ত এগোলে আরও বড় অঙ্কও সামনে আসতে পারে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ২০১১ এবং ২০১২ সালেই ওই টাকা বিদেশের ব্যবসায় লগ্নি করা হয়। তবে এই হিসেব প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তৈরি। ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই এজেন্টের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সিবিআই জানাচ্ছে, সম্প্রতি কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ কিছু লোককে জেরা করে সিঙ্গাপুরে টাকা পাচারের কথা জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। সপ্তাহ দুয়েক আগে তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। তিনিও বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে অনেক তথ্য দেন বলে দাবি। ওই সব তথ্য সঙ্গে নিয়েই সিবিআই অফিসারেরা সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে যান। সিঙ্গাপুরে গিয়ে তাঁরা যে তথ্য পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সারদার টাকা কী ভাবে বিনিয়োগ করা হবে, তার জন্য ওই এজেন্ট ১২ জন সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছিলেন। ওই ট্রাস্টি বোর্ডের নামেই বিভিন্ন দেশের পর্যটন ব্যবসায় টাকা লগ্নি করা হয়।
সিবিআইয়ের এক কর্তা জানাচ্ছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের আর একটি দল আরব দেশগুলিতে যাবেন। ২০১১ এবং ২০১২ সালে ওই ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে কানাডা, চিন, ইউরোপ, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভিয়েতনাম ও পশ্চিম এশিয়া এলাকায় হোটেল জমি ও আবাসন কেনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিবিআই জানাচ্ছে, ওই এজেন্ট এবং তাঁর তৈরি ট্রাস্টি বোর্ড সব কিছুই কলকাতা থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ কয়েক জন।
নানা দেশে তদন্তকারী দল পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশে টাকা পাঠানো নিয়ে সারদার সফ্টওয়্যারে কোনও তথ্য রয়েছে কি না, সেটাও জানার চেষ্টা চলছে। ওই সফট্ওয়্যারটির প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দুই প্রতিনিধিকে সোমবার ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। তাঁরা বেশ কিছু নথিও জমা দিয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই সফট্ওয়্যারটি সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে পারলে সারদার উধাও হওয়া টাকা কোথায় গিয়েছে এবং কারা সেই টাকা সরিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা যাবে। সিবিআইয়ের এই সব দাবির প্রেক্ষিতে শাসক দলের বক্তব্য জানার চেষ্টা হয়েছিল। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy