সারদা-কাণ্ড নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যখন নাড়াচাড়া শুরু করেছে, ঠিক তখনই এ রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলেন রাহুল গাঁধী। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে। সারদা নিয়ে গত এক বছর ধরেই সরব প্রদেশ কংগ্রেস। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শনিবারই প্রথম এ নিয়ে মুখ খুললেন কংগ্রেস সহ সভাপতি।
এ দিন মালদহের সামসি এবং মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, দু’জায়গার জনসভাতেই সারদা প্রসঙ্গ তোলেন রাহুল। সামসি কলেজ মাঠে সমবেত জনতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “সারদা দুর্নীতি সম্পর্কে সকলেরই জানা। কি, জানেন তো?” ভিড়ের থেকে সদর্থক জবাব পেয়ে রাহুলের অভিযোগ, “প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি গরিব মানুষ সারদা-কাণ্ডে সর্বস্ব খুইয়েছেন। সেবি ও দুর্নীতি দমন বিভাগ রাজ্য সরকারকে বারবার কড়া পদক্ষেপ করতে বললেও গত ২ বছর ধরে মমতাজির সরকার কিছুই করেনি। উল্টে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে।” বহরমপুরের সভায় তিনি বলেন, “মমতাজি এখানে কী করেন? চিটফান্ড আর সারদার কথা বলেন। কিন্তু উনি সিবিআই চাইছেন না। সিবিআই হলে অনেকের মুখোশ খুলে যাবে যে!”
এ রাজ্যে ভোটের মূল পর্ব শুরু হওয়ার ঠিক আগে ইডি সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করার পিছনে কংগ্রেসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আগেই অভিযোগ করেছে অস্বস্তিতে পড়া তৃণমূল। শুক্রবারই তৃণমূলের তরফে বিদায়ী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। এ দিন চিদম্বরমকে খোলাখুলিই আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহেরই অমৃতি এলাকায় সিকান্দারপুরের মাঠে এক সভায় মমতা বলেন, “যদি সাহস থাকে আমার গায়ে টাচ করে দেখুন। আমি মায়াবতী নই। মুলায়ম সিংহ নই। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিদম্বরমকে বলি, নিজের গদিটা তো আগে সামলান। ভয়ে তো ভোটেই দাঁড়ালেন না। ছেলেকে দাঁড় করিয়েছেন। সেও তো জিতবে না।”
রাজ্যে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমার জন্য বামফ্রন্ট সরকার ও কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন মমতা। এ দিনও তাঁর অভিযোগ, “৩০ বছর আগে চিটফান্ড তৈরি হয়েছিল। চিটফান্ড কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবির আওতায়। কেন্দ্র, সেবি কেন তাদের দায়িত্ব পালন করেনি? আমাদের নজরে যখন পড়ল, তখন কাশ্মীর থেকে সারদার মালিককে গ্রেফতার করে এনেছি। আমাদের সাংসদকে গ্রেফতার করে জেলে পুরেছি। ৬ লক্ষ লোকের টাকা ফেরত দিয়েছি। এখন চোরের মায়ের বড় গলা।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও ভোটের মুখে ইডির তৎপরতার সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, “ইডি সূত্র বলে কোনও একটি সংবাদপত্র গোষ্ঠী বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সুবিধা করে দিতে ‘পেড নিউজ’ করছে। ইডির হাতে এই তদন্ত ভার রয়েছে এক বছর হল। তা হলে ঠিক ভোটের আগে এটা প্রকাশের মানে কী? এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।”
তৃণমূলই অবশ্য সারদা নিয়ে তদন্ত এড়িয়ে যাচ্ছে বলে শনিবার ফের অভিযোগ করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। এ দিন কলকাত প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা গোড়া থেকেই বলে আসছি, আদালতের তত্ত্বাবধানে ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক। সিবিআই তদন্ত হলে কান টানলে মাথা আসবে। তৃণমূল নেত্রী রাজি নন। সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে ওঁদের দলের অনেক নেতা-মন্ত্রী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের কথাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আসলে ওঁরা কেলেঙ্কারি চাপা দিতে চান।” ইডির তদন্তেও রাজ্য সরকার বাধা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিমানবাবু।
এ দিন মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম ও জঙ্গিপুরের নির্বাচনী সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও সারদা-কাণ্ড নিয়ে শাসক দলকে তুলোধনা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টারে প্রচারের প্রসঙ্গ তুলে নবগ্রামের সভায় তিনি বলেন, “হেলিকপ্টারের টাকা আসছে কোথার থেকে? সব চিটফান্ডের টাকা।”
জঙ্গিপুরের সভায় তাঁর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী তো মা-মাটি-মানুষের কথা বলেন। চিটফান্ডগুলিই তো এই সব মাটির মানুষদের কোটি কোটি টাকা লুঠ করেছে।” রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবও এ দিন বর্ধমানের পানাগড়ে বলেন, “মানুষের টাকা লুঠ করার জবাব ওঁদের (তৃণমূল নেতৃত্ব) দিতে হবেই। ওঁদের কয়েকটা নেতা জেলে গেল বলে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy