সারদার মতো রাজ্যের অন্যান্য লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত মানুষজনও যাতে ক্ষতিপূরণের একই রকম সুবিধা পান, শ্যামল সেন কমিশনকে তা বিবেচনা করে দেখতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। এক আমানতকারীর আবেদনের ভিত্তিতে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ওই নির্দেশে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সারদায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে যে তহবিল গড়েছে, তা থেকেই অন্যান্য সংস্থার ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা কমিশনকে করতে হবে।
আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন বলেন, “রায় না-দেখে বলতে পারব না, কী নির্দেশ হয়েছে।” যদিও শ্যামলবাবুর দাবি, সারদা ছাড়া অন্যান্য সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা ঠকেছেন, তাঁদের আবেদন নিয়ে শুনানি আগেই শুরু করেছে কমিশন। ওঁদের টাকা কি রাজ্যের ওই বিশেষ তহবিল (৫০০ কোটির) থেকে দেওয়া হবে?
শ্যামলবাবুর জবাব, “ওই তহবিল শুধুমাত্র সারদার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থা নিজের নিজের আমানতকারীদের ভার বহন করবে। সে ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা চেয়ারম্যানদের কমিশনে ডেকে পাঠানো হবে।” অর্থাৎ চেয়ারম্যানের দাবি অনুযায়ী, বিশেষ তহবিলকে আলাদা রাখলেও অন্যান্য সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টি কমিশনের বিবেচনায় বিলক্ষণ আছে। তবে এ দিন হাইকোর্টের শুনানিতে সেই আশ্বাসের সমর্থন সরকারপক্ষের আইনজীবীর মুখে মেলেনি। পরে অবশ্য কমিশন-সূত্রে সরকারি কৌঁসুলির বয়ানের বিরোধিতা করা হয়েছে।
আদালত-সূত্রের খবর: হাইকোর্টের এ দিনের নির্দেশের মূলে মেহমুদ আলম নামে এক ব্যক্তির আবেদন। তিনি প্রিমিয়ার গ্রুপ অফ কোম্পানি নামের এক সংস্থায় ৪৭ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। পরে কোম্পানিটি পাততাড়ি গুটিয়ে পালিয়ে যায়। মেহমুদ বিষয়টি লিখিত ভাবে জানান সারদা কমিশনকে। তাতে তাঁর আর্জি ছিল, রাজ্য সরকারের তৈরি পাঁচশো কোটির বিশেষ তহবিল থেকে তাঁর ক্ষতিও পুষিয়ে দেওয়া হোক।
কিন্তু আর্জি বিফলে যায়। মেহমুদের কৌঁসুলির বক্তব্য: কমিশন তাঁর মক্কেলের আবেদন গ্রহণ করলেও তথ্যের অধিকার (আরটিআই) আইনে চিঠি দিয়ে মেহমুদ জানতে পারেন, সারদা ছাড়া অন্য কোনও সংস্থার ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীকে বিশেষ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে না। তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন। সোমবার যার শুনানির সময় বিচারপতি দত্ত জানতে চান, অন্য সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্তেরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না কেন?
আবেদনকারীর কৌঁসুলি অরিন্দম দাস ও অয়নাভ রাহা আদালতকে বলেন, ২০১৩-র ২৪ এপ্রিল শ্যামল সেন কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের বিধিতে বলা হয়েছিল, সারদা ও অন্যান্য সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন খতিয়ে দেখে সকলের জন্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ আরটিআইয়ে মেহমুদকে অন্য কথা বলা হয়েছে। শুনে বিচারপতি সরকারপক্ষের কাছে জানতে চান, কমিশনের নির্দেশনামায় ‘সারদা ও অন্যান্য সংস্থা’ বলে যা লেখা হয়েছে, তার মানে কী?
সরকারি কৌঁসুলির ব্যাখ্যা, এখানে ‘অন্যান্য সংস্থা’ বলতে সারদা গোষ্ঠীরই মালিকানাধীন অন্যান্য কোম্পানিকে বোঝানো হয়েছে। সারদা ছাড়া অন্য কোনও সংস্থার কথা বলা হয়নি। তাই সারদা ব্যতীত অন্য সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন কমিশনের বিবেচ্য নয় বলে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়। এ বার বিচারপতি দত্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “নির্দেশিকায় যা লেখা রয়েছে তার অর্থ, যে কোনও সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের একই ভাবে দেখতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে, পাঁচশো কোটি টাকার তহবিল থেকে যাতে সকলেই সাহায্য পান।”
সাত দিনের মধ্যে কমিশনকে বিষয়টি বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ দিকে অন্যান্য সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের আবেদন শ্যামল সেন কমিশন আদৌ বিচারই করবে না সরকারি কৌঁসুলির এ দিনের এ হেন বয়ানের সঙ্গে খোদ কমিশন-কর্তারাই একমত নন। সূত্রের দাবি, ২৪ এপ্রিল শ্যামল সেন কমিশন গঠিত হওয়ার পরে গত ৪ মে কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে, সারদা ছাড়াও অন্য সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ক্ষতিপূরণের জন্য তাঁরাও আবেদন জমা দিতে পারবেন।
এবং গত ২৯ জুনের মধ্যে এমন প্রায় ৫ লক্ষ আমানতকারী (সারদা মিলিয়ে ১৭ লক্ষ) আবেদন করেছেন বলে কমিশন-সূত্রে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy