সংসদে এখন দলের শক্তি তলানিতে। তবু সংসদীয় রীতি-নীতির উপরে ক্লাস নিতে ডাক পড়ল সিপিএম সাংসদদের! ঘটনাচক্রে, আবার সেই শিক্ষার্থী শিবিরেই গরহাজির থাকল তৃণমূল!
রাজ্যসভার নতুন সাংসদদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল সংসদের উচ্চ কক্ষেরই সচিবালয়। উদ্বোধক দেশের উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি। সংসদের অ্যানেক্স ভবনের মেন মিটিং রুমে এমন শিবিরের আয়োজনই রেওয়াজ। শনি ও রবিবার, দু’দিন ধরে এ বারের নতুন সাংসদদের জন্য সেই ক্লাসেই ডাক পড়েছিল সিপিএমের সংসদীয় নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং কেরল থেকে তাঁর দলেরই সাংসদ পি রাজীবের। সংসদে প্রশ্ন তুলে কী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, তাঁর ক্লাসে সেই কৌশল ব্যাখ্যা করেছেন রাজীব। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ইয়েচুরি পাঠ দিয়েছেন সংসদের কমিটিগুলি কী ভাবে কাজ করে, তার উপরে। মোট ৬ জন শিক্ষকের মধ্যে দু’জন সিপিএমের। এই তালিকায় তৃণমূলের কেউ নেই।
দু’দিনের এমন শিবিরে অবশ্য দেখা মেলেনি মিঠুন চক্রবর্তী, যোগেন চৌধুরী বা আহমেদ হাসান ইমরানের মতো রাজ্যসভায় প্রথম বারের জন্য নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদদের। উদ্বোধনী বার্তায় চেয়ারম্যান আনসারি বলেছেন, সংসদের ভিতরে হইচই করে বিতর্কে বাধা দেওয়া, সংসদের কাজ পণ্ড করা গণতন্ত্রে কাঙ্খিত নয়। ঘটনাচক্রে, সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বামেদের চেয়ে বেশি সরব প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে তৃণমূলেরই। অথচ রাজ্যসভার গুরুত্ব বোঝানোর ক্লাসে তৃণমূল সাংসদদেরই থাকা হল না!
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, মিঠুন আগেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ১৪ অগস্ট পর্যন্ত বিদেশে থাকায় সংসদে আসতে পারবেন না। যোগেনবাবুও শিবির শুরুর আগেই দেশের বাইরে গিয়েছেন। আর ইমরানের রোজা চলছে। তবে আজ, সোমবারই রাজ্যসভায় ইজরায়েল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় তৃণমূলের বক্তা হিসাবে থাকার কথা ইমরানের। কলকাতায় ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে দলের অধিকাংশ সাংসদই দিল্লি ছেড়ে চলে আসায় আজ, সোমবার সংসদের কাজের জন্য রাজধানীতে থাকতে বলা হয়েছে সুখেন্দুশেখর রায়, ইমরান ও দীনেশ ত্রিবেদীকে।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েনের ব্যাখ্যা, “নির্দিষ্ট কারণেই ওঁরা শিবিরে থাকতে পারেননি। তবে ইতিমধ্যেই আমাদের দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার নতুন সাংসদদের হাতে-কলমে রীতি-নীতি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন আমাদেরই সংসদীয় দলের বর্ষীয়ান নেতারা।” ইয়েচুরি অবশ্য কটাক্ষ করছেন, “তৃণমূলের সাংসদদের আবার শেখার কী আছে? ওঁদের দলনেত্রী আছেন তো! তবে এই ধরনের ঘটনায় বোঝা যায়, সংসদীয় রীতি-নীতিকে একটা দল কী রকম গুরুত্ব দেয়।”
শিক্ষকদের মধ্যে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার ক্লাস নিয়েছেন ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজ্যসভার সামগ্রিক গুরুত্বের বিষয়ে। উদাহরণ দিতে গিয়ে যিনি বুঝিয়েছেন, ১৯৬২-র চিন যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে কী ভাবে বিতর্কে জর্জরিত করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যসভার তরুণ সাংসদ অটলবিহারী বাজপেয়ী, তার রেকর্ড প্রত্যেক সাংসদের জেনে রাখা উচিত! বিজেপি-র সদ্যপ্রাক্তন সাংসদ বলবীর পুঞ্জ ব্যাখ্যা করেছেন রাজ্যসভার সদস্যদের স্বাধিকারের ব্যাপারে। কংগ্রেসেরই আর এক প্রবীণ নেতা অস্কার ফার্নান্ডেজের ক্লাস ছিল সভার নেতা এবং বিরোধী দলনেতার ভূমিকার বিষয়ে। এ ছাড়াও শিক্ষক ছিলেন সুদর্শন নাচিয়াপ্পন।
কী ভাবে প্রশ্ন সাজাতে হয়, বিতর্কে অংশগ্রহণের সময় কোন কোন দিকে খেয়াল রাখা উচিত, বিলের উপরে আলোচনায় আদর্শ আচরণবিধি কী, সাংসদ তহবিলের টাকা খরচের সময়ই বা অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত এ সব খুঁটিনাটি নিয়েই নতুন সাংসদদের ক্লাসে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষকেরা। নোটবই হাতে শুনেছেন বিহারের পবনকুমার বর্মা, ওড়িশার ভূপেন্দ্র সিংহ, বাংলার ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শিক্ষার্থী-সাংসদেরা। এমনকী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেও রাজ্যসভায় প্রথম বার বলে ক্লাস ছেড়ে ওঠেননি সত্যনারায়ণ জেটিয়ার মতো প্রবীণও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy