পরের পর নির্বাচনে খাতায়-কলমে নিরঙ্কুশ সাফল্য। তবু বিপুল জয়ের আলোর মাঝেও অন্ধকার খুঁজে নিয়ে তৎপর হতে চাইছে শাসক দল। উত্তর দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ রাজ্যের এই তিন জেলায় আপাতত বিশেষ নজর দিতে চাইছে তৃণমূল। তাদের লক্ষ্য, আগামী বিধানসভা ভোটের আগে তিন জেলায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা।
কয়েক মাস আগের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৩৪টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। অথচ ওই তিন জেলার ৬টি আসনই গিয়েছে কংগ্রেস ও বাম, অর্থাৎ বিরোধীদের দখলে! তিন জেলাতেই কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি ভাল, কিছুটা হলেও অস্তিত্ব বজায় রয়েছে বামেদেরও। তিন জেলার মধ্যে দু’টিতেই আবার শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব প্রবল। এই সব সমস্যা কাটিয়ে তিন জেলায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকেই এখন নজর দিতে চাইছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তিন জেলাই সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত। রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান এবং মেরুকরণের রাজনীতি মাথাচাড়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের উপরেই বেশি ভরসা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত, গত লোকসভা ভোট এবং পুজোর আগে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সংখ্যালঘু সমর্থনই ছিল প্রায় তৃণমূলের জীবনরেখা! আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এই সংখ্যালঘু ভিতকে আরও সংহত করাই তৃণমূল নেতৃত্বের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে দলের অন্দরের ব্যাখ্যা।
দলে সাম্প্রতিক রদবদলের সঙ্গে সঙ্গেই তিন জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বেও কিছু পরিবর্তন এনেছেন তৃণমূল নেত্রী। মুর্শিদাবাদের পর্যবেক্ষক হিসাবে অবশ্য এখনও মমতা-ঘনিষ্ঠ গায়ক ইন্দ্রনীল সেনই আছেন। পাশাপাশিই প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেনকে কংগ্রেস থেকে এনে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষকে। আর মালদহের দায়িত্বে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। যিনি আগে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার দায়িত্ব নিয়ে সংগঠন সামলে দেওয়ার ‘সাফল্য’ দেখিয়েছেন।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, কোন কোন জেলায় আমাদের দল এখনও প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হতে পারেনি। সেই সব জায়গায় প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” লক্ষ্যণীয়, সাম্প্রতিক কালে বড়সড় দল ভাঙানোর ঘটনার সিংহভাগ ঘটেছে এই জেলাগুলির মধ্যেই! লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এসেছেন মুর্শিদাবাদের সূতি ও মালদহের গাজোলের দুই বিধায়ক। আবার লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেস থেকে এসেছেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক। অতি সম্প্রতি, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সদস্যদের ভাঙিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদেরই দখল নিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে যে জেলা পরিষদে তৃণমূল ছিল তিন নম্বর দল!
দল ভাঙানোর রাজনীতি নিয়ে এখন তৃণমূলের মধ্যেই গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। তার পরেও উত্তর দিনাজপুরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের পৌরহিত্যে জেলা পরিষদ ভাঙিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটল কী ভাবে? তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, “ওখানে আমরা প্রধান রাজনৈতিক শক্তি নই বলে অন্য রকম কিছু কৌশল নিতে হয়েছে। আগে বিধায়ক হামিদুল রহমানকে নিজেদের দিকে টানা হয়েছে, অমল আচার্য এসেছেন। অন্য কোথাও হলে এখন হয়তো আর এ রকম (দল ভাঙানো) ঘটত না!” তবে দল ভাঙাতে গিয়েও বিড়ম্বনা যে থেকেই যাচ্ছে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলেছে মুর্শিদাবাদে। সদ্য তৃণমূলে এসেই পুলিশকে হুঙ্কার দিয়ে দলীয় নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছেন প্রাক্তন সাংসদ মান্নান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরোধিতার জন্যই যাঁকে তৃণমূলে নেওয়া হয়েছে! একই সঙ্গে তিনি সংখ্যালঘু মুখও।
মুর্শিদাবাদে তৃণমূল যেমন গোষ্ঠী-কোন্দলে জর্জরিত, মালদহেও তেমন দুই মন্ত্রীর লড়াই শাসক দলের মাথাব্যথা। পর্যবেক্ষকদের এখন এ জাতীয় সমস্যা মোকাবিলা করে এগোতে হবে। উৎসবের মরসুম বলে কোনও জেলাতেই অবশ্য নতুন করে কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি।
দলের এক সাংসদের কথায়, “পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব কিন্তু বাইরে থেকে গিয়ে মাতব্বরি করা নয়! সংগঠন কেমন জায়গায় থাকবে, স্থানীয় নেতৃত্বের উপরেই অনেকটা নির্ভর করে। জেলার সব নেতাদের সঙ্গে বসেই পথ বার করতে হবে।”
সালিশি সভা ডাকা নিয়ে প্রশ্ন আদালতের
ধূপগুড়ি-কাণ্ডে ধৃত ৪ তৃণমূল নেতার সালিশি সভা ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে আইনজীবী সন্দীপ দত্ত ধৃতদের জামিনের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, “ওই নেতারা সালিশি সভায় থাকলেও ছাত্রী মৃত্যুর সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নন।” বিচারক জানতে চান, “ওঁদের সালিশি সভা ডাকার অধিকার কে দিয়েছে?” জবাবে আইনজীবী জানান, গ্রামের সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্যই নেতারা ওখানে গিয়েছিলেন। বিচারক বলেন, “সে তো অফিসেই করা যেত।” এর পরেই ধৃতদের জামিনের আর্জি খারিজ করে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন তিনি। ১ সেপ্টেম্বর সালিশি সভা থেকে নিখোঁজ হয় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। পরের দিন তার বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয় রেল লাইনের ধার থেকে। ওই সালিশি সভায় ওই ছাত্রীকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায় সহ দলের চার নেতার বিরুদ্ধে। ১৮ অক্টোবর তাদের গ্রেফতার করে রেল পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy