মেলার মেজাজ। বুধবার আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে। -নিজস্ব চিত্র
কেউ মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললেন। কেউ একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন। বেজে উঠল হাজারো শাঁখ। হাতে হাতে ছড়িয়ে গেল ১ লক্ষ লাড্ডু। বুধবার আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ড মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জেলা হিসেবে আলিপুরদুয়ারের পথ চলা শুরু হল বলে ঘোষণা করতেই এমন আবেগে ভেসে গেল চারদিক।
হাততালি, কান্নাকাটি, বেলুন ওড়ানো মিলেমিশে এক আবেগনঘন দৃশ্যের সাক্ষী রইল উপচে পড়া ভিড়। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আজ নতুন এক ইতিহাসের জন্ম হল। যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আলিপুরদুয়ারকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের জোয়ার আনা হবে। চা-পর্যটনের মেলবন্ধন করা হবে। আলিপুরদুয়ারে ক্ষুদ্র শিল্প গড়তে প্রস্তাবও আহ্বান করেন তিনি। তাঁর আশ্বাস, “উদ্যোগীরা ক্ষুদ্র শিল্পের
জন্য প্রস্তাব দিন। আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করব।”
বেলা ২টোয় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সাতসকালে পথে নামে আলিপুরদুয়ার। প্রতিটি রাস্তা, অলিগলিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে। উদ্যোগী আমজনতাই। সকালের দিকে কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেও বেলা বাড়তেই আকাশ ঝকঝকে। তাই কেউ যেন ধৈর্য ধরে রাখতে চাইছিলেন না। অনেকে ভিড় করেন মুখ্যমন্ত্রী যেখানে মঙ্গলবার রাতে ছিলেন, সেই মেন্দাবাড়ি বনবাংলোর সামনে। দুপুরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে উপস্থিত জনতা ও পুলিশকর্মীদের মধ্যে চকলেট বিলি করেন তিনি। যখন অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছেছেন তখন জল-কাদা উপেক্ষা করে গ্রাম-শহর-বন লাগোয়া এলাকা থেকে আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডে কাতারে-কাতারে মানুষের ভিড়। ব্যবসায়ী সংগঠনের দেওয়া ৫ কেজি ওজনের কেক কেটে নতুন জেলার কথা ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী সভাস্থলে ওই কেক বিলি করেন।
ওই সময়ই মঞ্চে কেঁদে ফেলেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা জহর মজুমদার। নীচেও অনেকে কাঁদতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীই জহরবাবুকে শান্ত করেন। ইতিমধ্যে কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সমালোচকদের কটাক্ষ করেন। তাঁর দাবি, তিনি উত্তরবঙ্গকে সুইৎজারল্যান্ড গড়ে তোলার কথা বলায় অনেকেই সেই বক্তব্য নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “কিন্তু এখন দেখুন মুর্তি, জয়ন্তী, বক্সা,মংপং, চিলাপাতা সব কেমন নতুন করে সাজিয়ে তুলছি। কত লোক আসছে।” পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আলিপুরদুয়ার থেকে কলকাতা পর্যন্ত হেলিকপ্টার পরিষেবা চালুর চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা।
জঙ্গল মহলের পরেই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা হল আলিপুরদুয়ার, এ কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারকে দুই বোন বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনই জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার আলিপুরদুয়ার জেলার দায়িত্ব তুলে দেন অ্যালিস ভেজের হাতে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল আলিপুরদুয়ার জেলার দায়িত্ব তুলে দেন অনুপ জায়সবালের হাতে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, জলপাইগুড়ির মধ্যে থাকল মাল, মেটেলি, নাগরাকাটা, রাজগঞ্জ ও ভক্তিনগর ব্লক। আলিপুরদুয়ারের মধ্যে থাকল কুমারগ্রাম, আলিপুরদুয়ার ১, আলিপুরদুয়ার ২, কালচিনি, ফালাকাটা ও বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লক। আলিপুরদুয়ার জেলার লোক সংখ্যা ১৫ লক্ষ। কুমারগ্রাম থেকে জলপাইগুড়ি যেতে ৫ ঘন্টার বেশি সময় লাগে। দূরত্ব ১৪৫ কিলোমিটার। কুমারগ্রাম আলিপুরদুয়ার জেলার অংশ হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের তাই অনেক সুবিধে হল। অবশ্য নতুন জেলার পরিকাঠামো তৈরিতে একটু সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। এখনই আলিপুরদুয়ারে আলাদা জেলা আদালত হবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy