লোকসভার সাফল্যে ভর করে পুরভোটের আগে ঘর গোছানোর কাজে পুরোদমে নেমে পড়ল রাজ্য বিজেপি। নজরে অবশ্যই পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন।
মূলত কলকাতা পুরভোটে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিতে সংগঠন সাজাতে এবং দলের প্রভাব বাড়াতে রাহুল সিংহেরা মাঠে নেমে পড়েছেন। আগামী বছরের পুরভোট তাঁদের কাছে উপলক্ষ মাত্র। আসল লক্ষ্য, ২০১৬-র বিধানসভা ভোট।
পুরভোটকে সামনে রেখে কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডকে তাঁরা চারটি অঞ্চলে ভাগ করেছেন কলকাতা উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ ও বন্দর অঞ্চল হিসাবে। এই চার এলাকা এখন থেকেই দেখভাল করার জন্য বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবু দলের চার পদাধিকারীকে নিয়ে বিশেষ কমিটি গড়ে দিয়েছেন।
এই কমিটির সদস্যেরা আবার স্থানীয় দলীয় কর্মীদের নিয়ে ‘টিম’ করে কাজ শুরু করছেন। লোকসভা ভোটে এ বার কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপির ভোট গত বারের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা যার জন্য ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেছেন। বিশেষত, যে সব এলাকায় বিজেপি ভোট বেশি পেয়েছে, সেই এলাকার বাসিন্দাদেরই নিশানা করেছে শাসক দল। বর্তমানে কলকাতায় বিজেপি-র কাউন্সিলর আছেন মাত্র তিন জন।
কিন্তু ‘মোদী-হাওয়া’য় এ বার লোকসভা ভোটে কলকাতার দুই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীরা দ্বিতীয় হয়েছেন। প্রাপ্ত ভোট হিসাবে করে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৬টিতে তাঁরা এখন এগিয়ে রয়েছেন।
কলকাতা সংলগ্ন সল্টলেকেও দলের ভোট বেড়েছে।
দলের এই ‘ভোটব্যাঙ্ক’ অটুট রেখে তাকে আরও সংহত করতে বিজেপি নেতৃত্ব আগাম সতর্কতা নিতে শুরু করেছেন। স্থানীয় স্তরে দলীয় সমর্থক ও ‘দরদী’দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার নির্দেশ ওই ‘টিম’কে দেওয়া হয়েছে। মাথার উপরে যখন মোদী সরকার রয়েছে এবং রাজনৈতিক হাওয়াও অনুকূল, তখন সময় নষ্ট না করে পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা উন্নত করতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিভিন্ন সমস্যায় মানুষ যাতে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন, তার জন্য কলকাতা তো বটেই, রাজ্যের জেলা স্তরেও স্থানীয় দফতর বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন রাহুলবাবুরা। মুরলীধর লেনে দলের রাজ্য কমিটির দফতর তো আছেই। দক্ষিণে হরিশ মুখার্জি রোডে, বেহালা, উত্তরে মানিকতলা-সহ এখন কলকাতা জেলা হিসাবে শহরে ২২টি দলীয় দফতর আছে। পুরভোটের আগে কলকাতায় অন্তত ৪০টি দফতর করে ফেলতে চাইছে বিজেপি। জেলা শহরগুলিতেও স্থানীয় স্তরে দফতর খোলার ব্যবস্থা হচ্ছে।
সিপিএমের যেমন শাখা কমিটি, লোকাল, জোনাল, জেলা এবং রাজ্য কমিটি আছে, বিজেপিরও তেমনই শহরে ওয়ার্ড কমিটি, গ্রামে অঞ্চল কমিটি, তার পরে বিধানসভা ভিত্তিক মণ্ডল কমিটি আছে। এর পরে জেলা এবং রাজ্য কমিটি। এত দিন জেলা স্তরে বিজেপি-র বেশির ভাগ স্থানীয় দফতর চলত দলের কার্যকর্তাদের বাড়ি থেকেই। এ বার দলের নিজস্ব দফতর তৈরি করে সেখান থেকেই কাজ হবে। রাহুলবাবুর ব্যাখ্যা, “বাম দলগুলি থেকে তো বটেই, কংগ্রেস ও তৃণমূল থেকেও অনেকে আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। এঁদের সঙ্ঘবদ্ধ করে কাজ যেমন করাতে হবে, তেমনই এঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে। সেই কাজ আগের মতো আমাদের কার্যকর্তাদের বাড়িতে বসে হবে না!” শমীক ভট্টাচার্য, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দলের রাজ্য নেতাদের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত এই ব্যাপারে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। প্রতাপবাবুরা জানিয়েছেন, বহু এলাকায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাঁদের বাড়ি বা ঘর বিজেপি-কে দফতর খোলার জন্য ভাড়া দিতে চাইছেন। সেগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত দফতর খোলার নির্দেশ দিয়েছেন রাহুলবাবু।
বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, তাঁদের দলের প্রভাব এলাকায় এলাকায় যত বাড়বে, ততই স্থানীয় দলীয় সমর্থকদের উপরে আক্রমণ ও হেনস্থা বাড়বে। পুলিশ ও আইনের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি জনমত সংগঠিত করতে এলাকায় এলাকায় দলীয় দফতর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া যাবে বলে মনে করেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, এ বার ভোটে জোড়াসাঁকো এলাকায় বিজেপি-র দিকে ভাল ভোট পড়ছিল। বিষয়টি আঁচ করেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ওখানে বোমাবাজি করে। কিন্তু গোলামাল করেও বিজেপি-র ভোট ব্যাঙ্কে চিড় ধরাতে পারেনি তৃণমূল। কার্যত জোড়াসাঁকোর মানুষ এককাট্টা হয়ে ভোট দিয়েছেন। এখানে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পিছিয়ে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী রাহুলবাবুর কাছে। বিজেপি-র এক নেতার আশঙ্কা, ১৯৯০-র পুরভোটে মধ্য কলকাতা জুড়ে তৎকালীন শাসক দল সিপিএম ব্যাপক বোমাবাজি করেছিল। এ তাণ্ডব আগামী পুরভোটেও হতে পারে। তা আটকাতে এখন থেকেই বিজেপি এলাকাবাসীকে নিয়ে ‘নিরাপত্তা বলয়’ গড়ার কাজ করতে চায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy