পুলিশ আর দমকলের অসহযোগিতায় লাইসেন্স পেতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা। এই নিয়ে এত দিন ব্যবসায়ীদেরই ক্ষোভ ছিল। সরব হতেন মূলত তাঁরাই। এ বার তাঁদের সুরে একই অভিযোগ করলেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেও। কোনও রকম রাখঢাক না-করে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পুলিশ ও দমকলের এক শ্রেণির কর্মীর জন্য সরকারেরই বদনাম হচ্ছে।” সাধনবাবুর তোপের জবাবে পুলিশ দফতর বা দমকলমন্ত্রী অবশ্য কিছুই বলতে চাননি।
লাইসেন্স বার করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের যে কালঘাম ছুটে যায় এবং টাকা ফেললে তা যে মিলেও যায়, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই তা মেনে নিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে টাউন হলে একটি অনুষ্ঠানে তিনি লাইসেন্স দেওয়ার নামে টাকার দেদার লেনদেনের কথা বলেছিলেন। ব্যবসায়ীদের হয়রানির মোকাবিলা করতে এবং সেই অব্যবস্থা রুখতে তিনি নির্দেশও দিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তাদের। কিন্তু তাতে অনিয়ম বন্ধ হয়নি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এ দিন ক্রেতা সুরক্ষা সচেতনতা নিয়ে বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী সাধনবাবুর সামনেই এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রকুমার পাল। তিনি বলেন, “দোকানের ট্রেড লাইসেন্স করাতে সংশ্লিষ্ট অফিসে গেলে সটান বলে দেওয়া হচ্ছে, আগে দমকলের লাইসেন্স দেখাতে হবে। আবার দমকল দফতরে গেলে বলা হচ্ছে, ট্রেড লাইসেন্স না-থাকলে দমকলের লাইসেন্স মিলবে না।”
হাতিবাগান ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক জগন্নাথ ঘোষের সংযোজন, খাবারের দোকানের জন্য বাড়তি হিসেবে পুলিশি লাইসেন্স নিতে হয়। ওই লাইসেন্স না-থাকলে ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু দমকল এবং ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে না-পারলে পুলিশ তাঁদের লাইসেন্স দিতে চায় না। ব্যবসায়ীরা এক বার পুলিশের কাছে যান। তাদের কাছে সুরাহা না-মেলায় যেতে হয় দমকলের কাছে। দমকল ফের যেতে বলে পুলিশের দরজায়। এ যেন এক অনিঃশেষ গোলকধাঁধা! কোন লাইসেন্স যে আগে করাতে হবে এবং কী ভাবে তা পাওয়া যাবে, ব্যবসায়ীরা তা বুঝেই উঠতে পারেন না। প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে সমন্বয় থাকলেই যে-কাজটা হয়ে যায়, তার জন্য কেন এ ভাবে হয়রান হতে হবে, বুঝে উঠতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। এই অব্যবস্থার স্থায়ী সুরাহা করার জন্য তাঁরা মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
সাধনবাবু এর পরেই বলেন, “পুলিশ মোটেই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। আবার ওদের সঙ্গে যোগ রয়েছে দমকল দফতরের কিছু কর্মীরও। এটা উভয়েরই খেলা।” আসলে তিনি যে এর পিছনে টাকার খেলার কথাই বলতে চাইছেন, সাধনবাবু তা-ও স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, “এমন করার উদ্দেশ্য হল রোজগার বাড়ানো। যখন দরকার হয়, পুলিশ গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যায়। ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে থাকে।”
তা হলে ব্যবসায়ীরা কী করবেন?
এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে ব্যবসায়ীদের সটান ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাধনবাবু। তিনি বলেন, “সরকার জন-পরিষেবা আইন চালু করেছে। কোন পরিষেবা পেতে কত সময় লাগবে, ওই আইনে তা স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া আছে। তার বেশি সময় নিলে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মী বা অফিসারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।”
মন্ত্রিসভারই এক সহকর্মী তাঁর দফতর সম্পর্কে প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ করলেও দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান এই বিষয়ে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাননি। সাধনবাবু দমকলের এক শ্রেণির কর্মী-অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করলেও জাভেদ শুধু বলেন, “উনি বর্ষীয়ান মন্ত্রী। ওঁর বক্তব্যের ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তবে দমকলের ছাড়পত্র পাওয়ার ব্যাপারে কারও অভিযোগ থাকলে সরাসরি তাঁর সঙ্গে বা দমকলের ডিজি-র সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন দমকলমন্ত্রী।
শুধু দমকলের এক শ্রেণির কর্মী নয়, সাধনবাবুর অভিযোগের তির পুলিশের একাংশের দিকেও। কিন্তু দমকলমন্ত্রীর মতোই কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের তরফে কেউ এই বিষয়ে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “এই ব্যাপারে কেউ নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy