সারদা-কেলেঙ্কারিতে সিবিআই-তদন্ত হবে কি না, সে বিষয়ে বুধবার হয়তো চূড়ান্ত রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। যে বেঞ্চ ওই রায় দেবে, সেই বিচারপতি টিএস ঠাকুর ও বিচারপতি সি নাগপ্পনের এজলাসে সোমবার একটি জনস্বার্থ-মামলা নিয়ে হাজির হয়েছিল অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট-আমানতকারীদের এক সংগঠন। সর্বোচ্চ আদালত তাদের বলে দিয়েছে মামলার চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।
‘অল ইন্ডিয়া স্মল ডিপোজিটর্স অ্যান্ড ফিল্ড ওয়ার্কার্স প্রোটেকশন কমিটি’ নামে সংগঠনটি কেন্দ্রের কাছে সুরক্ষার দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। আবেদনকারীদের বক্তব্য শুনে বিচারপতিরা বলেন, “মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা ক’দিনের মধ্যে সারদা-মামলার রায় দিতে চলেছি। আপনারা রায় দেখে নিন। তার পরে নতুন অংশ জোড়ার কথা মনে হলে দু’সপ্তাহের মধ্যে আবেদন জানাবেন।”
সারদা-তদন্তে সিবিআই চেয়ে শীর্ষ আদালতে মূল মামলাটি যাঁরা দাখিল করেছেন, তাঁরা অবশ্য আচমকা এ হেন জনস্বার্থ-আবেদনের পিছনে খুঁজে পাচ্ছেন অন্য অভিসন্ধি। প্রসঙ্গত, এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে দু’হাজার ‘আমানতকারী’র সই সংবলিত আবেদনপত্র সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়, যাতে স্বাক্ষরকারীদের বক্তব্য ছিল, সারদা-কাণ্ডে রাজ্যের গড়া বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর তদন্তে তাঁরা খুশি। কিন্তু ওই স্বাক্ষরকারীদের পরিচয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে। ঘটনাটি প্রসঙ্গে মূল মামলার এক কৌঁসুলি এ দিন বলেন, আসল মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই আবেদনপত্র দাখিল হয়েছিল। চেষ্টা তখন সফল হয়নি।
এ দিনের জনস্বার্থ-আবেদনটিকেও একই দৃষ্টিতে দেখছেন আইনজীবীদের একাংশও। সারদা-মামলায় বাদীপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি শুভাশিস ভৌমিকের প্রশ্ন, “যখন সুপ্রিম কোর্ট মূল মামলার যাবতীয় শুনানি সেরে রায়দানের অপেক্ষায়, তখন এ ধরনের মামলা কতটা যুক্তিযুক্ত?” এটা মূল মামলার ফয়সালা বিলম্বিত করারই অপচেষ্টা বলে তিনি মনে করছেন। সুপ্রিম কোর্টে সারদা-মামলার অন্যতম কারিগর, তথা কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানেরও এক আশঙ্কা। “রাজ্য বারবার চেষ্টা করছে, যাতে মামলা ক্রমাগত পিছিয়ে যায়। মনে হচ্ছে, এ-ও তা-ই।” প্রতিক্রিয়া তাঁর। তবে মান্নান বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের উপরে আমাদের আস্থা আছে। বিশ্বাস করি, শীর্ষ আদালত আমাদের মামলা সম্পর্কে যথাযথ রায় দেবে।”
অপর পক্ষের কী বক্তব্য? জনস্বার্থ-আবেদনকারীদের কৌঁসুলি পীযূষ রায়ের দাবি, “সারদা মামলার সঙ্গে এই আবেদনের কোনও সম্পর্ক নেই। সার্বিক ভাবে বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষাই এর উদ্দেশ্য।” তাঁরা কী চাইছেন?
‘অল ইন্ডিয়া স্মল ডিপোজিটর্স অ্যান্ড ফিল্ড ওয়ার্কার্স প্রোটেকশন কমিটি’র আবেদনটির অভিযোগ: কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ না-থাকার সুযোগে লগ্নি সংস্থাগুলো যথেচ্ছাচার চালাচ্ছে। কোনও সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়ে নিলে সাধারণ লগ্নিকারীরা পথে বসছেন, তেমন এজেন্টরা পড়ছেন জনরোষের মুখে। সুপ্রিম কোর্টকে কমিটি জানিয়েছে, লোকসভার স্টিয়ারিং কমিটির তথ্যানুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ৭২টি লগ্নি সংস্থা সক্রিয়, যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ। ঝাড়খণ্ড-উত্তরপ্রদেশ-বিহারের মতো রাজ্যেও তাদের কারবার চলছে।
এমতাবস্থায় সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় পর্যায়ের উচ্চস্তরীয় কমিটি গঠনের আর্জি জানিয়েছে সংগঠনটি। তাদের অভিযোগ, এমন ঘটনার পরে দায় এড়াতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সির মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ ও টালবাহানা শুরু হয়। এমন একটি কমিটি থাকলে তার আশঙ্কা থাকবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy