মঙ্গলকোটের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে ডান দিকে মনিরুল ইসলাম। বুধবার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে তিন দিন ধরে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী বিধি ভেঙেছেন কি না, এ বার তা খতিয়ে দেখছে ওই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
নির্বাচন কমিশন রাজ্যের আট আমলাকে সরিয়ে দেওয়ার পরে গত তিন দিন বিভিন্ন প্রকাশ্য সভায় মমতা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিশনের নির্দেশ মানবেন না বলে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার জেরে বৃহস্পতিবার নবান্নের বাইরে তৃণমূল সমর্থকেরা ওই আমলার কুশ পুতুল পুড়িয়েছেন।
কমিশনের একটি সূত্র বলেন, সব খবরই দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরে পৌঁছে গিয়েছে। কোন সভায় মমতা কী বলেছেন তা সিডি দেখে লিপিবদ্ধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। বুধবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-এর কাছে মমতার বক্তব্যের সিডি, ভিডিওগ্রাফি এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রতিলিপি চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। সেই মতো সিইও দফতর থেকে হুগলি, বর্ধমান এবং বাঁকুড়ার জেলাশাসকের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সবিস্তার তথ্য অতি দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই সভাগুলিতে মমতা ঠিক কী কী বলেছিলেন, তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্যের সিইও-র দফতর।
কমিশন সূত্রের ইঙ্গিত, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য খতিয়ে দেখে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ঠিক করবে কমিশন। যে ভাবে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করা হচ্ছে, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তা বন্ধে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। কমিশনের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রে বিদায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শরদ পওয়ারকে ভর্ৎসনা করে বিবৃতি দিয়েছে কমিশন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও সেই পথেই তারা হাঁটবে কী না, সব তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে তা ঠিক করবে কমিশন।
রাজ্যের সিইও সুনীল গুপ্ত বুধবার বলেন, “কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার বিষয়বস্তু জানতে চেয়েছে। তিন জেলার জেলাশাসককে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।”
কমিশন কী কী পদক্ষেপ করতে পারে? সূত্রের ইঙ্গিত, জেলাশাসকদের কাছ থেকে রিপোর্ট আসার পর কমিশন প্রাথমিক ভাবে সিইও-র রিপোর্ট চাইতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবমাননাকর মনে হলে তারা মমতাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিতে পারে। তাঁর উত্তর পাওয়ার পর কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। কমিশনের এক কর্তা জানান, শরদ পওয়ার দলীয় কর্মীদের একাধিক বার ভোট দেওয়ার কথা বলায় কমিশন তাঁকে শো-কজ করেছিল। জবাবে তিনি ক্ষমা চেয়ে নিলেও কমিশন তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও কমিশন একই পথে হাঁটতে পারে, জানান ওই কর্তা।
কমিশনের একাংশ অবশ্য বলছে, নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা কমিশনের সাংবিধানিক কর্তৃত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে কমিশনও বিবৃতি দিয়ে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের এমন প্রবণতার কড়া নিন্দা করতে পারে।
এ দিনও বর্ধমানের মঙ্গলকোটে নাম না করে কমিশনকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দিল্লির নির্দেশে বাংলাকে অসম্মান, অপমান করা হচ্ছে। তার বদলা চাই।” তাঁর সাফাই, “পাঁচ জন পুলিশ অফিসারকে বদলি করে দিয়েছে। আর বোমা-গুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সিপিএম। রাজ্য সরকারকে তো আর বদলি করা যায় না। আমি ছিলাম, আছি, থাকব।”
পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভারতী দাঙ্গা রুখেছিল। এটাই ওর দোষ।” এ দিন পঞ্চায়েত ভোটে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কথাও তোলেন তৃণমূল নেত্রী। এর পর মেমারির সাতগেছিয়ায় মমতা বলেন, “এই পুলিশেরা তো তোমাদের (সিপিএমের) সময়ে কাজ করতেন। তখন এঁরা ভাল ছিলেন। দু’দিনে খারাপ হয়ে গেলেন! মানুষকে অপমান করতে জানেন? তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে পারেননি? কাছে টানতে পারেননি? ভাবছেন, একটি এসপি, একটি ডিএম-কে সরিয়ে দিলে কাজ হয়ে যাবে?” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জানেন না, যাঁরা গিয়েছে আর যাঁরা আসছে, তাঁরা সকলেই আমার লোক। এসপি, ডিএম-দের অসম্মান করেছ, তার বদলা নেবই নেব। পাঁচটা এসপি-কে সরিয়ে কী হবে? আমাকে কি সরাতে পারবেন? পারবেন না।”
মমতার কথায়, “আমাকে যদি কেউ মাথায় বন্দুক ধরে বলে, তোমাকে খুন করা হবে, তাতে আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু বাংলার অপমান সহ্য করব না। দিল্লি যে ভাবে বাংলাকে অপমান, অসম্মান করছে, তাতে দিল্লিকে কিন্তু আগামী দিনে বাংলার পায়ে ধরতে হবে, পায়ে ধরতে হবে, পায়ে ধরতে হবে!”
কমিশনের নির্বাচনী আচরণ বিধি কার্যকর (এমসিসি) সংক্রান্ত দল এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রেকর্ড করেছে। বর্ধমান জেলা প্রশাসন এই বক্তব্যের কপিও কমিশনে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy