মনিরুল ইসলাম
বীরভূমে লাভপুরের গ্রামে সালিশিসভায় তিন ভাইকে খুনের মামলায় আবেদনকারী ও তাঁর পরিবারের জন্য পূণর্র্ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। চার বছর আগের ওই ঘটনায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত হলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। গত জুলাইয়ে লাভপুরের কর্মিসভায় যাঁর দেওয়া বক্তৃতার ভিডিও-ফুটেজ পরবর্তী শুনানিতে কোর্ট চেয়ে পাঠায় প্রশাসনের কাছ থেকে। অভিযোগ, মনিরুল ওখানে নিজের মুখে জানিয়েছিলেন যে, ওই তিন ভাইকে তিনি পায়ের তলায় ফেলে মেরেছেন!
শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলার শুনানির সূচনায় আবেদনকারী সানোয়ার শেখের কৌঁসুলি সুব্রত মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, আবেদনকারী ও তাঁর পরিবার আতঙ্কের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ, মামলা শুরু হওয়া ইস্তক তাঁদের নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় ওঁদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। সুব্রতবাবুর আর্জি শুনে বিচারপতি দত্ত বীরভূমের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন, আবেদনকারীর পরিবারের জন্য যেন পূর্ণ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়।
মূল অভিযুক্ত মনিরুলের বিরুদ্ধে এখনও চার্জশিট জমা না-পড়ায় সানোয়ারই হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। প্রসঙ্গত, গত বুধবার বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সভামঞ্চে মনিরুলকে দেখা গিয়েছে। আর তার পর দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, মনিরুলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগের কোনও তদন্ত পুলিশ আদৌ করেছে কি? ঘটনার চার বছর বাদেও পুলিশ কেন মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারল না, হাইকোর্ট তা-ও জানতে চেয়েছে। উপরন্তু তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বৃহস্পতিবার পেশ করা পুলিশি রিপোর্টে সানোয়ারের জবানবন্দির উল্লেখ না-থাকায় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে। “রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে, কোনও তদন্তই হয়নি! যাঁর ভাইদের পিটিয়ে মারা হল, তাঁর জবানবন্দি কোথায়?” বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন বিচারপতি দত্ত। তিনি জানতে চান, ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি ছাড়া কী ভাবে রিপোর্ট তৈরি হল?
এবং এ সবেরই ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য এ দিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) ও ঘটনার তদন্তকারী অফিসারকে এজলাসে তলব করেছিলেন বিচারপতি দত্ত। এ দিন নির্দিষ্ট সময়ে তদন্তকারী অফিসার আদালতে হাজির হন। কিন্তু শুনানি শুরু হতে জানা যায় এজি বিমল চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ, তাই তিনি আসতে পারবেন না।
ফলে মামলার কাজ এগোয়নি। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২১ এপ্রিল। ২০১৩-র ২১ জুলাই লাভপুরের এক কর্মিসভায় মনিরুলের দেওয়া সেই বিতর্কিত বক্তৃতার ভিডিও-ফুটেজও সে দিন আদালতে জমা দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দত্ত। তিন ভাইকে ‘পায়ে পিষে মেরে ফেলা’র কথা ওই কর্মিসভায় মনিরুল নিজের মুখে ‘ঘোষণা’ করেছিলেন বলে আবেদনকারীর অভিযোগ।
চার বছর আগের হত্যাকাণ্ডটির বিবরণ দিতে গিয়ে গত ৩১ মার্চের শুনানিতে সুব্রতবাবু হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন, ২০১০-এর ৩ জুন মনিরুলের নেতৃত্বে অন্তত জনা পঞ্চাশ লোক সানোয়ার শেখদের বাড়িতে এসে বলে, একটি জমির বিবাদ নিয়ে গ্রামে সালিশি সভা হবে, যাতে ওঁদের চার ভাইকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ: সালিশিসভায় কথাবার্তা চলার মাঝেই মনিরুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র লোকজন চার ভাইয়ের উপরে চড়াও হয়। প্রচণ্ড পিটুনিতে ঘটনাস্থলে দু’ভাই মারা যান। এক ভাইয়ের মৃত্যু হয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে। চতুর্থ ভাই, অর্থাৎ সানোয়ার দীর্ঘ চিকিৎসার পরে বেঁচে ফেরেন। সেই সময় ওঁদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মনিরুলকে গ্রেফতার করেছিল। তিনি জামিনও পেয়ে যান।
২১ তারিখের শুনানিতে এজি উপস্থিত থাকলে সে দিন তাঁকে আদালতের সামনে ব্যাখ্যা করতে হবে, কেন চার বছরেও মনিরুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া গেল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy