Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মন্ত্রী, সাংসদের শাস্তি চান সব হারানো বাবা

সারদা-কাণ্ডে সন্তান-সম্মান-চাকরি গিয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই সব হারানো সারদার প্রাক্তন কর্মী এক পিতার নিশানায় এখন শাসক দলের মন্ত্রী-সাংসদেরা। ২০১৩-র ২২ মেদিনটা ভুলতে পারেন না বালুরঘাটের সারদার প্রাক্তন ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার বছর পঞ্চাশের সমীর দাস। ওই দিন শহরের মঙ্গলপুর-ব্রীজকালীপাড়ার বাড়ি থেকে মিলেছিল তাঁর ছেলে সুমিতের (২১) দেহ। বাবার সুবাদেই সারদার দফতরে পিওনের চাকরি হয়েছিল সুমিতের।

সুমিত দাস

সুমিত দাস

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৩
Share: Save:

সারদা-কাণ্ডে সন্তান-সম্মান-চাকরি গিয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই সব হারানো সারদার প্রাক্তন কর্মী এক পিতার নিশানায় এখন শাসক দলের মন্ত্রী-সাংসদেরা।

২০১৩-র ২২ মেদিনটা ভুলতে পারেন না বালুরঘাটের সারদার প্রাক্তন ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার বছর পঞ্চাশের সমীর দাস। ওই দিন শহরের মঙ্গলপুর-ব্রীজকালীপাড়ার বাড়ি থেকে মিলেছিল তাঁর ছেলে সুমিতের (২১) দেহ। বাবার সুবাদেই সারদার দফতরে পিওনের চাকরি হয়েছিল সুমিতের। বেতন থেকে বাঁচিয়ে সারদায় লগ্নি করা টাকা ডুবে যাওয়া এবং চাকরি হারানোর শোক সুমিত সামলাতে পারেননি দাবি করে সমীরবাবুর তোপ, “মন্ত্রী মদন মিত্র, সাংসদ কুণাল ঘোষদের ভাবমূর্তিতে ভরসা করে সারদার হয়ে আমানতকারীদের থেকে টাকা তুলেছি। ছেলে আর আমিও টাকা রেখেছি। সবাই ডুবেছি। ওই নেতাদের কেন চরম শাস্তি হবে না?”

২০০৭-এ বালুরঘাটে সারদা গোষ্ঠী অফিস খোলে। কিন্তু তাদের রমরমা হয় তৃণমূলের আমলে। সে সময় প্রতি মাসে গড়ে ৮০-৯০ লক্ষ টাকা তোলা হত দক্ষিণ দিনাজপুরের আমানতকারীদের থেকে। এক সময় এজেন্ট হিসেবে শুরু করলেও পরিচিতির সুবাদে অল্প সময়ে বহু আমানতকারী জোগাড় করে সারদার অফিসার পদ পান সমীরবাবু। অষ্টম শ্রেণি পাশ ছেলে সুমিতকে ২০১১-তে নিয়ে আসেন একই সংস্থায়। সমীরবাবুর কথায়, “সে সময়টা দারুণ ছিল। কলকাতা থেকে নির্দেশ এলেই দু-তিন দিন অন্তর লক্ষ-লক্ষ টাকা তুলে ফেলছি। ছেলেটা চাকরি করছে। জমাচ্ছে। ঠিকঠাক চলছিল সব কিছু।”

তাল কাটল ২০১৩-র ২০ এপ্রিল। বালুরঘাটে সারদার অফিস বন্ধ হয়ে যায়। সমীরবাবুর কথায়, “সব কিছু আচমকা হল! কলকাতায় যোগাযোগ করেও দিশা পাইনি। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেব কী করে, তখন শুধু সে-ই চিন্তা।” স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় উত্তেজনার আঁচ পেয়ে এর পরেই গা ঢাকা দেন সমীরবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু আমানতকারী প্রতারণার অভিযোগ করেন বালুরঘাট থানায়। সেপ্টেম্বরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। তবে নিয়ম করে মামলার শুনানিতে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

সমীরবাবুর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ডলিদেবী জানান, সুমিত ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন। বলতেন, “আমার চাকরি, টাকাসব গেল! আর বাঁচব না।” ডলিদেবীর কথায়, “সব ঠিক হয়ে যাবে বলে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু হল কই!” ছেলের ছবি আঁকড়ে এর পরেই মায়ের ক্ষোভ, “রাজ্য সরকার যদি বিষমদ খেয়ে মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করতে পারে, তা হলে এ রকম দুর্নীতির পাকে পড়ে আমাদের ছেলের অকালমৃত্যুতে কেন ক্ষতিপূরণ দেবে না? সারদার কর্তাদের সঙ্গে তো তৃণমূলেরই অনেক নেতা-মন্ত্রীর ওঠাবসা!”

পাঁচ বছরের মেয়ে টুম্পা, ডলিদেবী এবং নিজের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য সমীরবাবুর এখন ভরসা এক ঠিকাদারের অধীনে সামান্য বেতনের চাকরি। রয়েছে মামলার খরচ। তার উপরে রয়েছে আমানতকারীদের মুখোমুখি হওয়ার অস্বস্তি। সেই অস্বস্তি রয়েছে বলেই নিজের এবং ছেলের গচ্ছিত টাকা সারদা-কাণ্ডে চলে যাওয়ার পরেও সারদা কমিশনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম লেখাননি বলে দাবি প্রৌঢ়ের।

দৃশ্যতই বিধ্বস্ত সমীরবাবু বলে চলেন, “সুমিত গিয়েছে। মানসম্মান গিয়েছে। পুঁজি গিয়েছে। সারদা আমার সব খেয়েছে। কিন্তু যারা কলকাঠি নাড়ায় আমার বা অনেকের সর্বনাশ হয়েছে, তাদের শাস্তি হলে কিছুটা শান্তি পাব।”

অন্য বিষয়গুলি:

sumit das sardha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE