Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মদন-গ্রেফতারের ছায়া, শ্যাম বলছেন, আমায় ছেড়ে দিন

‘ব্রেকিং নিউজ’-এ ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে টিভি-র পর্দা‘গ্রেফতার মদন মিত্র’। —যাঃ বাবা... টেবিল থেকে রিমোট’টা নিয়ে একটু ঝুঁকে পড়ে আওয়াজটা কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে দিলেন কালো প্যান্ট-নীল জামা। আর, নিমেষে মদনের ছায়া যেন গ্রাস করল ‘শ্যামের কার্যালয়’! বস্ত্রবয়নমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই এক প্রস্ত জেরা করেছে ইডি।

চেয়ার খালি। অফিসে দেখা নেই বস্ত্রমন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামবাবুর। টিভির পর্দায় নজর তৃণমূলকর্মীদের। ছবি: শুভ্র মিত্র।

চেয়ার খালি। অফিসে দেখা নেই বস্ত্রমন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামবাবুর। টিভির পর্দায় নজর তৃণমূলকর্মীদের। ছবি: শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share: Save:

‘ব্রেকিং নিউজ’-এ ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে টিভি-র পর্দা‘গ্রেফতার মদন মিত্র’।

—যাঃ বাবা...

টেবিল থেকে রিমোট’টা নিয়ে একটু ঝুঁকে পড়ে আওয়াজটা কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে দিলেন কালো প্যান্ট-নীল জামা।

আর, নিমেষে মদনের ছায়া যেন গ্রাস করল ‘শ্যামের কার্যালয়’!

বস্ত্রবয়নমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই এক প্রস্ত জেরা করেছে ইডি। বাঁকুড়ার বেলবনির সিমেন্ট কারখানা চড়া দামে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করায় ছেড়ে কথা বলেনি সিবিআই। দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার সাঁড়াশি চাপে, বার কয়েক তাঁকে হাজিরা দিতে হয়েছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে।

মাস কয়েক আগে, জেরা-ফেরত বিধ্বস্ত শ্যামবাবুকে স্বগতোক্তির মতো বলতেও শোনা গিয়েছিল, “কোথাকার জল কোথায় যে গড়ায়...।”

বাস্তবিকই তাই। শুক্রবার রাঢ়বঙ্গের ওই মন্দির শহর জুড়ে সন্তর্পণে ছড়িয়ে পড়েছে প্রশ্নটা--মদনের পরে এ বার কি শ্যাম?

মন্ত্রী শ্যামবাবু বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধানও। এ দিন দুপুরে পুরসভায় তাঁর ঘরে উঁকি মেরে দেখা গেল, গালে হাত দিয়ে মগ্ন হয়ে মদন-গ্রেফতার দেখছেন দুই কর্মী।

শ্যামবাবু নেই?

—কপালে ভাঁজ ফেলে উত্তর এল, “দেখতেই তো পাচ্ছেন নেই। আবার প্রশ্ন কেন?” পরিবহণমন্ত্রী গ্রেফতারে শ্যাম অনুগামীরাও যে অসহিষ্ণু কথাবার্তায় তা স্পষ্ট।

থানাগোড়ায় দলীয় কার্যালয়েও উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। বিস্ফারিত চোখে, মিনিট দশেক ধরে এ চ্যানেল, ও চ্যানেল ছুটে বেরিয়ে, ‘মদন-পর্ব’ দেখে দলীয় কার্যালয় থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে এক শ্যাম-অনুগামী কাউন্সিলর স্পষ্টই কবুল করছেন, “কিচ্ছু ভাল লাগছে না। কি জানি কী হবে...।” জাঁকিয়ে ঠান্ডাও পড়েছে। বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দফতরে সোয়েটার-চাদর-মাঙ্কি ক্যাপে মোড়া এক দল কর্মী টিভিতে খবর দেখছিলেন। অফিসে ঢুকতেই টিভির সামনে থেকে উঠে পড়ছেন তাঁরা। কী হল? কোনও রাখঢাক না রেখেই শাসক দলের এক কর্মীর উত্তর, “মদনদাকে গ্রেফতার করে নিল, সিবিআই এ বার কী করবে কে জানে?”

বিষ্ণুপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়কে ফোন করা হল। মদনের পরে কি শ্যামবাবু?

—“বিয়ে বাড়িতে রয়েছি”, লাইন কেটে দিলেন বুদ্ধবাবু। শহরের অন্য প্রান্তে তৃণমূলের অন্য এক দলীয় কার্যালয়ে প্রশ্নটা শুনে, এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সবুজ প্লাস্টিকের চেয়ারটা পিছনে ঠেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন বিষ্ণুপুর পুরসভার আর এক কাউন্সিলর। মদনের ছায়া অবশ্য শ্যামবাবুর বাড়ির সামনে পড়ার উপায় নেই। বাড়ির সামনেটা ঘোর অন্ধকার। গেটের আলো নেভানো। ঝুলছে মস্ত তালা। ডাকাডাকির পরে চাদর মুড়ে বেরিয়ে এলেন বটে এক জন, তবে রুখু গলায় জানিয়ে দিলেন, “কেউ নেই।”

আর মন্ত্রী?

ধরা গলায় বলছেন, “আমাকে ছেড়ে দিন। আমি বাইরে আছি। আমি কিছু বলব না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE