রাজনৈতিক প্রচার হোক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী মদন মিত্রকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরে যে ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি কর্মীরা প্রায় উৎসব পালন করছেন, ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কায় তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
মদন গ্রেফতার হওয়ার পরে গত কালই অমিত বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি পথে নামেন, তা হলেও তার পাল্টা কোনও আন্দোলন করে রাস্তায় নামার প্রয়োজন নেই। সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়ালেই মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে, মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করছেন। তাতে এমনিতেই তাঁর মুখোশ খুলবে। কিন্তু মদনের গ্রেফতারের পরে কাল রাত থেকে এক দিকে যেমন তৃণমূলের বিক্ষোভ শুরু হয়, তেমনই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি কর্মীরা উচ্ছ্বাস দেখাতে শুরু করেন বলে খবর এসেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কানে। কোথাও বাজি পোড়ানো হয়েছে, কোথাও বা আবির নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিজেপি কর্মীরা।
বিজেপি সূত্রের মতে, মন্ত্রীর গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে দলের কর্মী মহলে উচ্ছ্বাসের আবহ দেখা গেলে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে, সিবিআই আসলে বিজেপির স্বার্থই চরিতার্থ করছে। অথচ বাস্তব ঘটনা
তা নয়। আগাগোড়া সিবিআই তদন্ত করছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। তদন্তে যদি মমতা-ঘনিষ্ঠেরা একে একে গ্রেফতার হন, তার পিছনে দলীয় ভাবে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই। অদূর ভবিষ্যতে তদন্তের গতিপথ মমতার দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছলেও কেন্দ্রীয় শাসক দল বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা তাতে থাকবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই নিজের দল এবং সরকারে কড়া হুঁশিয়ারি জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এক বার সিবিআইয়ের সারদা তদন্ত নিয়ে খোঁজখবরের চেষ্টা করলেও প্রধানমন্ত্রীই তাঁকে আটকেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক তারা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমন বার্তাই দেওয়া আছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে।
এর উল্টো দিকে, মদনের গ্রেফতারির পরে মমতা সুকৌশলে চেষ্টা করছেন সব রকম ভাবে সিবিআই এবং বিজেপির যোগসাজশের অভিযোগকে উচ্চ গ্রামে নিয়ে যেতে। এই অবস্থায় বিজেপি কর্মীরা উৎসবে মাতলে মমতার ‘ফাঁদে’ই পা দেওয়া হবে বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন। মদন গ্রেফতার হওয়ার পরে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরের কাছাকাছিই সল্টলেকে বিজেপি-র প্রায় ‘বিজয় মিছিল’ হয়েছিল! পরিবহণমন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ায় আনন্দে পুরুলিয়ার পুঞ্চায় গত সন্ধ্যায় বিজেপি মিছিল করে পটকা ফাটায়। হুড়ার লালপুর মোড়েও বিজেপি কর্মীরা পটকা ফাটিয়েছিলেন। বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে দলীয় কর্মীদের এমন আচরণ এবং স্থানীয় স্তরে কিছু নেতার বক্তব্যে উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া দেখেই সতর্কতা জারি করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, অমিত স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইন্দিরা গাঁধী জমানা থেকে সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহ জমানা পর্যন্ত কংগ্রেসই বরাবর সিবিআইয়ের ‘অপব্যবহার’ করে এসেছে। বিরোধী দলে থাকার সময় বিজেপি-ই বরং বারবার সিবিআইকে ‘কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’ বলে অভিযোগ করে এসেছে। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে কোনও তদন্তে সরকার হস্তক্ষেপ করে না বলেই বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য। তাঁদের দাবি, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ও তিনি কোনও তদন্তে নাক গলাননি। ইউপিএ জমানায় সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে ‘খাঁচার তোতা’ বলেছিল। কিন্তু আজ সিবিআইয়ের অধিকর্তাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক চাপে তাঁরা কাজ করেন না। সারদা তদন্তেও সব চেয়ে দক্ষ অফিসাররাই কাজ করছেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নেতৃত্ব কোন পথে চলবেন, সে নির্দেশও আজ দিয়ে দিয়েছেন অমিত। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, যে ভাবে মদনের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন মমতা, তাতেই তাঁর আশঙ্কা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিজেপি এর ভরপুর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে। বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্ত শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ওড়িশা, অসমের মতো রাজ্যেও হচ্ছে। অথচ মমতা যে ভাবে আক্রমণাত্মক হচ্ছেন, নবীন পট্টনায়ক বা তরুণ গগৈ কিন্তু তা করছেন না। এর থেকেই স্পষ্ট, মমতার উদ্বেগ কত বেশি! মানুষ সবই বুঝতে পারছেন। ফলে, কোনও বাড়তি উচ্ছ্বাস না দেখিয়ে বিজেপি যদি শুধুমাত্র বাস্তব ঘটনাগুলি মানুষের সামনে বিভিন্ন প্রচার-সভায় মেলে ধরে, তা হলেই কেল্লা ফতে হবে বলে অমিতেরা
মনে করছেন। দলের এক রাজ্য নেতারও বক্তব্য, “আমরা সর্বভারতীয় দল। সর্বভারতীয় স্তরে যেমন ঠিক হচ্ছে, সে ভাবে কর্মসূচি তৈরি করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy