অশীতিপর জেলা সম্পাদক অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আর্জি মঞ্জুর হল। তাঁর জায়গায় ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনের হাল ধরলেন ৭৪ বছরের জেলা সম্পাদক! মুখ বদলেও রোগ বদলাল না কলকাতা জেলা সিপিএমে! রয়েই গেল বৃদ্ধতন্ত্র!
নজিরবিহীন টানাপড়েনের পরে রবিবার সম্পাদক বদল হয়েছে কলকাতা জেলা সিপিএমের। শারীরিক কারণেই অনেক দিন ধরে সরে দাঁড়াতে চাইছিলেন রঘুনাথ কুশারী। কিন্তু তাঁর জায়গায় মানব মুখোপাধ্যায়, অনাদি সাহু বা কল্লোল মজুমদারের মতো তুলনায় তরুণ মুখ বাদ দিয়ে জেলা সম্পাদক হিসাবে উঠে এসেছেন প্রবীণ নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য যে নিরঞ্জনবাবুকে কলকাতায় সিপিএমের সভা-সমাবেশে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্ব সামলাতেই দেখতে অভ্যস্ত বাম জনতা! স্বভাবতই দলে প্রশ্ন, রাজধানী শহরে সংগঠন যেখানে মৃতপ্রায়, তৃণমূল এবং বিজেপি-র ঝাপ্টা সামলে আসন্ন পুরভোটে নতুন জেলা নেতৃত্বের পক্ষে সঞ্জীবনী সুধা খুঁজে পাওয়া আদৌ সম্ভব? নতুন সম্পাদক এবং কমিটি গঠন নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে টানাপড়েন চলেছে, তাতে বিরক্ত হয়েই এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে আর সম্মেলনমুখো হননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য!
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। পরিবর্তন ধাপে ধাপে হয়। এটা একটা ধাপ হল।” সূত্রের খবর, পুরভোটের আগে কলকাতায় দলের ঐক্য ধরে রাখতে সম্পাদক পদে নিরঞ্জনবাবুকে বসানো ছাড়া কোনও পথ মেলেনি! নেতৃত্বের ঘোষিত নয়া কমিটির প্যানেলের বাইরে অন্তত ৯টি নাম পেশ করে শেষ দিনে ভোটাভুটি প্রায় অনিবার্য করে তোলেন দলের একাংশ। রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের আশঙ্কা ছিল, এমনিতেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জেরবার কলকাতা সিপিএমে ভোটাভুটি হলে দল ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়াতে পারে। তাই অন্য দুই জেলায় ইতিমধ্যে ভোট হলেও কলকাতায় সম্পাদক পদে মানব-অনাদির কাউকে না এনে রফাসূত্র বার করা হয়েছে। তার ফলে ৭০ সদস্যের নতুন কলকাতা জেলা কমিটিতে এখন নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর এক প্রবীণ নেতা দিলীপ সেনের। সঙ্গে কিছুটা প্রভাব থাকছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদ্য রবীন দেবেরও।
ভোট এড়িয়ে যাতে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে নতুন সম্পাদক ও কমিটি করা যায়, তার জন্য শনিবার রাত থেকেই শুরু হয় সক্রিয়তা। শেষ দিন দফায় দফায় চলে বৈঠক। দুপুর পর্যন্ত জেলা কমিটির সদস্য নন, এমন প্রতিনিধিদের সম্মেলন-স্থল প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়! অথচ সম্মেলন শেষ হওয়ারই কথা ছিল দুপুরের মধ্যে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের জন্য বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা হায়দরাবাদের বিমান ধরতে বেরিয়ে যাওয়ার পরে সন্ধ্যায় যে কমিটি তৈরি হয়, তার গড় বয়স ৫৭।
রাজদেও গোয়ালা, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ নিজামুদ্দিন, আবু সুফিয়ান, তপন চক্রবর্তীদের মতো নেতাদের নতুন জেলা কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। নতুন অন্তর্ভুক্তির ১৬ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফৈয়াজ আহমেদ খান, মধুজা সেন রায়, কাউন্সিলর দীপু দাস প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy