একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার ভাষা-শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপস্থিত থাকতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ঢাকা সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পৌঁছয় মমতার কাছে। ডেপুটি হাই কমিশনার জকি আহাদ ও আরও দুই অফিসার বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলির তরফে এই আমন্ত্রণ নবান্নে মমতার হাতে তুলে দেন। নবান্ন সূত্রের খবর মুখ্যমন্ত্রী কার্যত সেই আবেদন লুফে নিয়ে জানিয়ে দেন, একুশে ভাষা আন্দোলনের দিনেই তিনি ঢাকায় থাকতে চান। তার পরে প্রাথমিক আলোচনার পরে এক রকম নিশ্চিত ভাবেই জানিয়ে দেন ১৯ ফেব্রুযারি ঢাকায় গিয়ে তিনি ২১শে রাতের বিমানে কলকাতা ফিরতে চান।
কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দিনক্ষণ দু’-এক দিনের মধ্যেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে নবান্ন সূত্রের খবর, বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনায় একুশের ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে তাঁর আগ্রহের বিষয়টিই বার বার উল্লেখ করেন মমতা। মমতা বলেন তিনি বরাবর এই দিনটি ঢাকায় কাটাতে চেয়েছেন। এ বছর এই সময়ে রাজ্যে তাঁর কোনও কর্মসূচি থাকলে তিনি তা পরিবর্তন করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়ে দেন। আগাগোড়া খোশমেজাজে থাকা মমতা বাংলাদেশি অতিথিদের চা এবং ফিস কাটলেট দিয়ে আপ্যায়ন করেন।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের খবর, গত তিন মাস ধরেই ঢাকা সফরের আগ্রহ দেখিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলেন মমতা। নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে আসা সংসদীয় প্রতিনিধি দলের কাছেও তিনি এই সফরের বিষয়ে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। ডিসেম্বরে দিল্লি ও কলকাতা সফরে আসা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকেও তিনি জানিয়েছিলেন ঢাকা যেতে চান। হামিদ ঢাকা ফিরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। হাসিনা জানান, মমতা ঢাকায় আসুক তিনিও চান। সম্প্রতি স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলে নেওয়ার পরে তিস্তার জল চুক্তির বিষয়েও মমতা যাতে রাজি হন, সফরে সেই আর্জি বাংলাদেশের তরফে জানানোর সুযোগ মিলবে।
ঢাকার বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, মমতার সফরের বিষয়টি নিয়ে তাঁদের কর্তারা দিল্লির সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। দিল্লি জানিয়ে দেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আগে প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, সম্ভব হলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েই ঢাকা সফরে যেতে চান। মমতা যদি এর আগে ঢাকায় যান, দু’দেশের বকেয়া সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনার আরও একটি সুযোগ মিলবে। ঢাকা তার পরই মমতাকে সফরে আসার আমন্ত্রণ পত্র পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, সোমবার সরকারি ভাবে মমতাকে আমন্ত্রণ জানানোর আগে গত সপ্তাহেই নবান্নের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হয়েছিল। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “তিস্তা চুক্তি-সহ বকেয়া বিষয়গুলি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে আলোচনা প্রক্রিয়া চলছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় এলে তা আরও গতি পাবে। বাংলাদেশ সব সময়েই চেয়েছে ভারতের এই বাংলাদেশ-লাগোয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসুন। এতে মৈত্রী বাড়বে।”
বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-সহ নানা ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে একটা বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর কথায়, “এই রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে জামাতে ইসলামির সম্পর্ক নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বেশ কিছু খবর প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি যদি সত্যিও হয়, মমতা ঢাকা সফরে এলে তাঁর দলের জামাত-ঘনিষ্ঠ নেতাদের মধ্যে এর বিরুদ্ধে একটা বার্তা পৌঁছবে। সেটাও বা কম কী?”
নবান্ন সূত্রের খবর, ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে কলকাতা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে আসবেন মমতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি চেয়ার চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসিনাকে তার সূচনায় থাকার জন্য বলতে পারেন মমতা। কিন্তু বাংলাদেশ হাই কমিশনার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের আলোচনায় এ প্রসঙ্গ ওঠেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy