আদালত তাড়া না-দিলে পুলিশের গয়ংগচ্ছ ভাব কাটে না বলে কলকাতা হাইকোর্ট বারবার তোপ দাগছে। কিন্তু পুলিশের তরফে নড়ে বসার লক্ষণই নেই। এই নিয়ে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। দেগঙ্গায় এক গৃহবধূর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর মামলায় উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারের সামনেই তদন্তকারী অফিসারকে ভর্ৎসনা করল হাইকোর্ট। তদন্তে গড়িমসি ও গাফিলতি নিয়ে নতুন করে তদন্ত করার জন্য এসপি-কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস।
বিভিন্ন মামলায় পুলিশের দায়সারা তদন্ত নিয়ে বারে বারে সরব হচ্ছে উচ্চ আদালত। দেগঙ্গার মামলাটিতে শুধু গাফিলতি নয়, মিথ্যে বলার জন্যও সোমবার তিরস্কৃত হলেন তদন্তকারী অফিসার। বিচারপতি ওই অফিসারকে প্রশ্ন করেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি কে লিখেছেন? তদন্তকারী অফিসার সটান বলে দেন, তিনি নিজেই সব জবানবন্দি লিখেছেন। সন্দেহ হওয়ায় বিচারপতি ওই অফিসারকে বলেন, “আমার সামনে আপনি পুরো বিষয়টি লিখে দেখান তো।” তদন্তকারী অফিসার বিপাকে পড়ে যান। ধরা পড়ে গিয়ে হাতজোড় করে তিনি বলেন, “ভুল হয়ে গিয়েছে, স্যার। জবানবন্দি অন্য লোক লিখেছে, আমি সই করেছি মাত্র।”
এই জবাব শুনে বিচারপতি পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চান, এই অফিসার কি কনস্টেবল থেকে উন্নীত হয়ে অফিসার হয়েছেন?
পুলিশ সুপার উত্তর দেন, “হ্যাঁ।”
বিচারপতি ক্ষোভের সুরে বলেন, “এই রকম তদন্ত চলছে!” তার পরেই বিচারপতি নির্দেশ দেন, নতুন করে সব সাক্ষীরই জবানবন্দি নিতে হবে।
২০১২ সালের দেগঙ্গা থানার নুরনগর এলাকার বাসিন্দা হানিশা বিবির বিয়ে হয়। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর হানিশার বাবা মুর্শেদ আলি খবর পান, তাঁর মেয়ের অবস্থা খারাপ। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তিনি দেখেন, মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। পরে তিনি পুলিশের কাছে মেয়ের শ্বশুর ইদ্রিস আলি মোল্লা-সহ চার জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, পণ হিসেবে বারবার তাঁর মেয়ের কাছে টাকা চাওয়া হতো। বেশ কয়েক বার টাকা দেওয়াও হয়েছে। মুর্শেদ আলির অভিযোগ, তাতেও তাঁর মেয়ের উপরে অত্যাচারের মাত্রা কমেনি, বরং বেড়েছে।
অভিযুক্ত ইদ্রিস আলি মোল্লা সম্প্রতি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। তাঁর আইনজীবী অর্ণব চট্টোপাধ্যায় জানান, ইদ্রিসের বয়স ৬৯। তাঁর নানা ধরনের অসুখ রয়েছে। শুনানির সময় বিচারপতি কেস ডায়েরি খুলে দেখেন, হানিশার মৃত্যুর পরে ছ’মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু পুলিশ ময়না-তদন্তের রিপোর্টও সংগ্রহ করেনি। বিস্মিত বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, এটা কী রকম তদন্ত? ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ছাড়াই তদন্তকারী অফিসার তদন্ত করছেন? এর পরেই তিনি তদন্তকারী অফিসার ও জেলার পুলিশ সুপারকে তলব করেন।
পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী এ দিন আদালতে জানান, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এর পরে বিচারপতি জানিয়ে দেন, তদন্তের গাফিলতি নিয়ে তদন্ত করতে হবে পুলিশ সুপারকে। ৭ এপ্রিল, সোমবার আবার এই মামলার শুনানি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy