আদালত খোঁচা না-দিলে পুলিশ নড়েচড়ে বসার তাগিদ দেখায় না বলে চলতি মাসের শুরুতেই তোপ দেগেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। সোমবার গৃহবধূ-নির্যাতনের একটি মামলায় তিনি জানালেন, পুলিশ ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তদন্ত করেছে। খুনের চেষ্টার ধারা এড়িয়ে লঘু ধারায় মামলা এনেছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বারবার তিরস্কার করেছে উচ্চ আদালত। মধ্যমগ্রামে কিশোরীকে গণধর্ষণ ও ধর্ষিতার পুড়ে মৃত্যু, বীরভূমের পাড়ুইয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীর বাবা সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ড-সহ সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন মামলায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছে তারা।
এ দিন বধূ-নির্যাতনের ওই মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ নিয়ে শুনানির সময় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, পুলিশ আর অভিযুক্তেরা যে যোগসাজশ করেই এই ঘটনার তদন্ত করেছে, সেই বিষয়ে হাইকোর্টের কোনও সংশয় নেই। অভিযোগের নথিপত্র দেখলেই বোঝা যায়, যেখানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ নম্বর ধারায় খুনের চেষ্টার মামলা হওয়া উচিত, সেখানে পুলিশ ৫০৬ ধারায় মামলা করেছে। এই ধারা দেওয়ায় অভিযুক্তেরা অনায়াসেই জামিন পেয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারদের কাজ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি।
অভিযোগকারী গৃহবধূর বাপের বাড়ি বাঁকুড়ায়। তাঁর মামলায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তার তদন্ত করে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, “যথেষ্ট হয়েছে! এফআইআরে এক বার নয়, দু’-দু’বার ৩০৭ ধারা কেটে ৫০৬ ধারা করা হয়েছে।” কেন এটা করা হল, পুলিশ সুপারের রিপোর্টে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। ২৩ এপ্রিল ফের মামলাটির শুনানি হবে।
২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি মধুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে বাঁকুড়ার ২২ বছরের এক তরুণীর সঙ্গে শিলিগুড়ির সুরেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়। অভিযোগ, বিয়ের পরে দুর্গাপুরে শ্বশুরবাড়ি গিয়েই মধুপর্ণা বুঝতে পারেন, তাঁর স্বামী অত্যন্ত রাগী এবং বদমেজাজি। গত বছর মে মাসে মধুপর্ণা স্বামীর সঙ্গে তাঁর কর্মস্থলে যান।
মধুপর্ণার অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পরেই তাঁর উপরে মাত্রাছাড়া দৈহিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বার করেও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই মধুপর্ণাকে বাপের বাড়ি ফিরে যেতে হয়। পরে পুরো বিষয়টি জানিয়ে ওই তরুণী বাঁকুড়া পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু ওই গৃহবধূর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যে-এফআইআর লিখেছে, বিচারপতি দত্ত এ দিন তা দেখে বিস্মিত হয়ে যান। তিনি বলেন, “মেয়েটিকে এমন ভাবে মারা হয়েছে যে, সে মরে যেতে পারত। অথচ পুলিশ ৫০৬-এর মতো একটু লঘু ধারায় এফআইআর দায়ের করে কাজ সেরে ফেলতে চেয়েছে!” তার পরেই বিচারপতি মন্তব্য করেন, পুলিশ ও অভিযুক্তদের যোগসাজশ আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy