একেই বলে বজ্র-আঁটুনি ফস্কা গেরো।
সরকারি দফতরে কর্মসংস্কৃতির হাল ফেরাতে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কর্মীদের যথাসময়ে হাজিরা সুনিশ্চিত করতে হাজিরা খাতার বদলে বিভিন্ন সরকারি অফিসে বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক কার্ড ব্যবস্থা। কিন্তু তার পরেও কি কর্মসংস্কৃতির গতানুগতিক ধারায় কিছু বদল এসেছে?
বায়োমেট্রিক কার্ডের পরিসংখ্যান বলছে, হাজিরা বেড়েছে। কিন্তু তার মানেই কি কর্মসংস্কৃতির অগ্রগতি? তা যে নয়, সম্প্রতি খোদ ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ)-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের একটি নির্দেশিকাতেই তার প্রমাণ মিলেছে। সেই নির্দেশিকায় ওই কর্তা জানান, অফিসের সময়ে মাঝেমধ্যেই পদস্থ কর্তাদের একাংশকে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে কাজের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই শৃঙ্খলাও নষ্ট হচ্ছে। ওই চিঠিতে আধিকারিকের আরও অভিযোগ, বিভিন্ন কাজে ওই সব অফিসারকে ডেকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কাজ না হওয়ায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে নিয়মিত অভিযোগও জমা পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট দফতরের অফিসারদের ওই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পরিকল্পনা বিভাগের (এর মধ্যে ডেপুটেশনে থাকা প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও রয়েছেন) দায়িত্বে থাকা অফিসারদের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আগামী দিনে কোনও অফিসার তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অফিস চলাকালীন অন্য কোথাও যেতে পারবেন না। অন্যথায় কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বায়োমেট্রিক কার্ড বসানো হল যে কারণে, সেই কর্মসংস্কৃতি তা হলে কী ভাবে ফিরবে? যেখানে বারংবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সময়ে কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেখানে এমন নির্দেশিকা দিতে হচ্ছে কেন?
আমলাদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন সরকারি দফতর রয়েছে। অনেককেই সরকারি কাজে বাইরে যেতে হয়। বায়োমেট্রিক কার্ড বা পাঞ্চিং কার্ডে স্রেফ অফিসে ঢোকা বা বেরোনোটা নিশ্চিত করা যায়। তার বেশি কিছু নয়। ফলে এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেই কর্মীদের গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ রাখতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।
উপায় না-থাকার কথা মানতে নারাজ আমলাদের একাংশ। এক আমলা জানান, ২০০৯ সালে গুজরাতে এই ধরনের একটি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে অফিসটাইমে কর্মীদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেত।
গুজরাত পারলে এ রাজ্যের না পারার তো কিছু নেই।
সরকারি অফিসের বেহাল কর্মসংস্কৃতি নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। তাঁদের বক্তব্য, মানসিকতা না বদলালে যে যন্ত্রই বসানো হোক না কেন, কাজের কাজ কিছুই হবে না। যে কাজ দু’দিনে হয়, তা মেটাতে এখানে মাসের পর মাস পেরিয়ে যায়। তা হলে সরকারি কর্মীদের বায়োমেট্রিক কার্ড দিয়ে লাভ কী? রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের তৃণমূলপন্থী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাম আমলে কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী তা ফেরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আজও সেই বেহাল অবস্থার রেশ রয়ে গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কর্মীদের একাংশ যেমন ইচ্ছা অফিস করছেন। এতে মানুষের হয়রানি বাড়ছে আর সরকারের বদনাম হচ্ছে। অবিলম্বে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করুক।’’
সমস্যার কথা স্বীকার করে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বাম আমলের রেশ কিছুটা রয়ে গিয়েছে। তবে অনেকটাই সামলানো গিয়েছে। বায়োমেট্রিক কার্ডে হাজিরা নিশ্চিত করা যাচ্ছে। কর্মীদের অনেকের বাইরে ডিউটি থাকে, সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়। তাই বিভাগীয় প্রধান বা ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অফিস থেকে না বেরোনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy