শুধু গুলি নয়। বীরভূমের পাড়ুই গ্রামে বোমাও ছোড়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও পাড়ুই মামলার চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনের কোনও ধারা দেওয়া হয়নি বলে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে। বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস ও বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাসের ডিভিশন বেঞ্চে এই অভিযোগ করেন পাড়ুইয়ে নিহত অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষের পুত্রবধূ শিবানীদেবীর আইনজীবী।
পাড়ুইয়ের ওই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে পুলিশের একাংশ জড়িত বলে হাইকোর্টে অভিযোগ করেছিলেন অন্যতম আবেদনকারী নেপালকৃষ্ণ রায়ের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। প্রশাসন কী ভাবে মামলাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, এ দিন ডিভিশন বেঞ্চে তা তুলে ধরেন শিবানীদেবীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। পাড়ুই কাণ্ডের তদন্তভার কেন সিবিআই-কে দেওয়া উচিত, তা-ও ব্যাখ্যা করেন তিনি। এডুলজির অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা সাগরবাবুকে গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি। তাঁর বাড়ি লক্ষ করে একাধিক বোমাও ছোড়ে। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্ত দল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটিও উদ্ধার করেনি। বোমাবাজি সত্ত্বেও বিস্ফোরক আইনে অভিযোগ আনা হল না কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন এডুলজি। তাঁর অভিযোগ, কারা বোমা ছুড়েছিল, তার কোনও তদন্ত হয়নি। কারা বোমা সরবরাহ করেছিল, তদন্তকারীরা তা-ও যাচাই করেননি।
আইনজীবী আদালতে জানান, শিবানীদেবীর স্বামী অর্থাৎ সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ তাঁদের বাড়ি থেকে ফাঁকা কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছিলেন। সেই বুলেট সাগর-হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছিল বলে হৃদয়বাবুর অভিযোগ। ওই বুলেট কোথা থেকে আনা হয়েছিল, তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন অনুভব করেননি। কৌঁসুলির বক্তব্য, বীরভূমের নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা শিবানীদেবী এবং অন্য ছ’জনের গোপন জবানবন্দি নেন। নিয়ম অনুযায়ী চার্জশিটে মামলার সাক্ষী হিসেবে ওই সব ম্যাজিস্ট্রেটের নামও রাখার কথা। কিন্তু তাঁদের নাম আদৌ উল্লেখ করা হয়নি। আইনজীবীর অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন কী ভাবে পাড়ুই মামলা ধামাচাপা দিতে চাইছে, এটা তার অন্যতম প্রমাণ।
ম্যাজিস্ট্রেটদের নাম এড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষীদের বিবৃতি নিয়েও তদন্ত রিপোর্টে তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় ডিভিশন বেঞ্চে। আইনজীবী এডুলজি জানান, হাইকোর্টে সিটের প্রধান হিসেবে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রিপোর্ট দিয়ে দাবি করেছেন, মন্টু শেখ, দীপঙ্কর দাস বৈরাগ্য, পূর্ণচন্দ্র দাস বৈরাগ্য ও শেখ সলমনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন নিহতের বৌমা। কিন্তু অন্য কোনও সাক্ষী ওই চার জনের উল্লেখ করেননি। এডুলজির বক্তব্য, সাগরবাবুর ছেলে হৃদয়বাবুও তাঁর বিবৃতিতে ওই চার অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করেছেন। হৃদয়বাবুও এই মামলার এক জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তাই ডিজি-র দাবি মোটেই ঠিক নয়।
সাগরবাবু খুন হন ২০১৩ সালের ২১ জুলাই রাতে। সেই ঘটনার তদন্তের জন্য ডিজি-র নেতৃত্বে বিশেষ দল (সিট) গড়ে দিয়েছিল হাইকোর্টই। কিন্তু সিটের তদন্ত উচ্চ আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পুলিশের উপরে অনাস্থা প্রকাশ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পাড়ুই মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-কে দেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। মূল অভিযুক্তকে বাঁচাতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার।
বিচারপতি বিশ্বাস ও বিচারপতি দাসের ডিভিশন বেঞ্চে সেই আপিল মামলার শুনানিতে এডুলজি জানান, পাড়ুই-তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি গত ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন। তদন্তের প্রয়োজনে পলিগ্রাফ (লাই ডিটেক্টর) পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল সেই রিপোর্টে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই পরীক্ষা করাই হয়নি। সাগর-হত্যায় পাড়ুই থানার ওসি সম্পদ মুখোপাধ্যায় ও সাব-ইনস্পেক্টর দীপরাজ সাহানির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলেও প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়নি বলে শিবানীদেবীর আইনজীবী অভিযোগ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy