Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাই ভবিষ্যৎ, ইস্তাহারে বলবে তৃণমূল

পাঁচ বছর আগে বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ইস্তাহার লিখেছিল তৃণমূল। দু’বছর বাদে বাংলায় সেই পরিবর্তন এসেছিল। এ বার ভোটে পশ্চিমবঙ্গকে ‘মডেল’ করে দিল্লিতে সরকারের বদল চেয়ে দলের ইস্তাহার করেছে তৃণমূল। সেই ইস্তাহার আজ, শনিবার কালীঘাটে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সঞ্জয় সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৪
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ইস্তাহার লিখেছিল তৃণমূল। দু’বছর বাদে বাংলায় সেই পরিবর্তন এসেছিল। এ বার ভোটে পশ্চিমবঙ্গকে ‘মডেল’ করে দিল্লিতে সরকারের বদল চেয়ে দলের ইস্তাহার করেছে তৃণমূল। সেই ইস্তাহার আজ, শনিবার কালীঘাটে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দিল্লিতে সরকারের বদল তৃণমূল কেন চায়, তা সবিস্তার ব্যাখ্যা করা হয়েছে ইস্তাহারে। তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ইস্তাহারের খসড়া চূড়ান্ত করেছেন মমতা। ইস্তাহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ার উপর। ইস্তাহারের মূল সুর ‘দিল্লি চলো, ভারত গড়ো’। ইস্তাহারে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, অর্থনৈতিক সুস্থিতি, উন্নয়ন-প্রগতি, প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি গড়ে তোলা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জনস্বার্থে কাজ করবে এমন এক সরকার তৈরি করার উপরেই প্রধান জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মমতা-সরকারের হাজার দিনের সাফল্য তুলে ধরে ইস্তাহারে স্লোগান: ‘নতুন দিশা, নতুন পথ, বাংলা দেশের ভবিষ্যৎ।’

দেশে কংগ্রেসের ‘দুর্নীতি ও জনবিরোধী নীতি’, বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ ও সিপিএমের ‘ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসে’র রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে জনগণের সমর্থন দাবি করা হয়েছে ইস্তাহারে। এ বারের ভোটে তৃণমূল যে দিল্লিতে সরকার গঠনে নির্ণায়ক শক্তি এবং জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে, তা ইস্তাহারের শুরুতেই বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি সব এক হয়ে লড়ছে বাংলায়। এই তিন দলের বিরুদ্ধে বাংলা থেকে তৃণমূলকে সব আসনে জয়ী করে লোকসভায় তাদের আসন বৃদ্ধি কেন জরুরি, তা-ও ইস্তাহারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

রাজ্যের হাজার দিনের কাজের সাফল্যকে সামনে রেখে ‘দিল্লি চলো’র ডাক কেন, তা জানাতে গিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, পরিবর্তনের পরে রাজ্যে সরকার চালাতে গিয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে দিল্লির কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের কাছ থেকে অর্থনৈতিক দিক থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ কোনও রাজ্যকে দিল্লি কী ভাবে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে এবং ৩৪ বছরের বাম শাসনে বিপর্যস্ত বাংলাকে কী ভাবে বঞ্চনা করা হয়েছে, তা ইস্তাহারে বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, বিশেষত, বামফ্রন্ট সরকারের আমলের ঋ

ণের বোঝা মেটাতে গিয়েই জেরবার হতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। ইস্তাহারে অভিযোগ তোলা হয়েছে, গত তিন বছরে সুদ-আসল মিলিয়ে দিল্লির সরকার রাজ্যের কোষাগার থেকে ৭৪ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে গিয়েছে। মাত্র তিন বছরের জন্য সুদ মকুবের যে দাবি মুখ্যমন্ত্রী তুলেছেন এবং কেন্দ্র যে সেই দাবিকে আমল দেয়নি, তা-ও ইস্তাহারে তুলে ধরা হয়েছে বলে ওই নেতারা জানান।

কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার মধ্যেও মমতা-সরকার যে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব বৃদ্ধি করেছে, তারও উল্লেখ থাকছে ইস্তাহারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের উন্নয়নের নিরিখে বাংলা যে উন্নয়নের শীর্ষে, ইস্তাহারে নিজেদের সেই দাবিকেও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। ইস্তাহারে জানানো হয়েছে, সারা দেশে চলতি আর্থিক বছরে উৎপাদন বৃদ্ধির হার যখন ৪.৯%, বাংলায় সেই সূচক ৭.৭১%। পাশাপাশি মমতার তিন বছরের সরকার জনকল্যাণে, বিশেষ করে মহিলা ও অনুন্নত শ্রেণি, সংখ্যালঘু উন্নয়নে যে সমস্ত প্রকল্প করেছে, তার ফিরিস্তিও থাকছে। বলা হয়েছে, তৃণমূল সরকার পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মহিলা স্বনিযুক্তি প্রকল্পের প্রসার ঘটিয়ে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে রাজ্যে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি করতে একশো দিনের কাজে গত তিন বছরে তৃণমূল সরকারের সাফল্যের দাবিরও কথাও জানানো হয়েছে এই ইস্তাহারে।

পাঁচ বছর আগে ‘ভূমি নীতি’ নিয়ে ইস্তাহারে যে দাবি তোলা হয়েছিল, এ বারেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই তৃণমূলের ইঙ্গিত। জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না নিজেদের এই নীতির কথা ঘোষণার পাশাপাশি তারা যে ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ চালু করেছে, তার উল্লেখও ইস্তাহারে করা হয়েছে। সেই সঙ্গে খুচরো ব্যবসায় দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশ রোখার কথা থাকছে এ বারের ইস্তাহারেও।

অন্য বিষয়গুলি:

sanjay singha tmc manifesto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE