এসএসকেএম হাসপাতালে একটি অনুষ্ঠানে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।
বারবার তিন বার। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বাস-মালিকেরা ধর্মঘটের হুঙ্কার দেন। পরিবহণমন্ত্রীর পাল্টা হুমকিতে আবার ধর্মঘট তুলেও নেন। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। একই ভাবে সরকারের হুমকির সামনে ধর্মঘট থেকে পিছু হটলেন বাস-মালিকেরা।
জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে ২৫ জুন থেকে ৭২ ঘণ্টা বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ছ’টি বেসরকারি বাস-মিনিবাস সংগঠন। বাস-মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, পরিবহণমন্ত্রী যদি ‘বাসভাড়া বাড়বে’ বলে আশ্বাস দেন, একমাত্র তা হলেই ধর্মঘট স্থগিত রেখে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। তার বদলে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ বার বলেন, মালিকদের বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবি যুক্তিসঙ্গত। এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসানোর আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী। এই দুই আশ্বাসেই ২৩ জুলাই পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে দিলেন বাস-মালিকেরা।
যদিও পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বাস-মালিকেরা পরিবহণমন্ত্রীর সর্বদলীয় কমিটিতে অনাস্থা প্রকাশ করার পরেই উপরে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের চাপ সৃষ্টি করা হয়। পরিবহণমন্ত্রী জানিয়ে দেন, রাস্তায় বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই আটক করা হবে। বাস-মালিক সংগঠনের অনেক নেতাই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ। ধর্মঘট তুলে নেওয়ার জন্য দলের তরফে তাঁদেরও চাপ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এক বাস-মালিক বলেন, “সরকারের সঙ্গে লড়াই করে আমরা পারব কেন! সরকার যে-ভাবে বাস আটক করার কথা বলছে, স্বভাবতই তাতে একটু হলেও ভয় পেয়েছি আমরা।”
বাস-মালিকেরা ধর্মঘট ডাকার পরে পরেই পরিবহণমন্ত্রী বাসভাড়া নিয়ে বিবেচনার জন্য সর্বদলীয় কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সিপিএম জানিয়ে দেয়, তারা সর্বদলীয় কমিটিতে যোগ দেবে না। ওই কমিটিতে যোগদান নিয়ে কংগ্রেস এখনও দোটানায়। এই অবস্থায় সর্বদলীয় কমিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। বাস-মালিক সংগঠনগুলি শনিবারেও জানিয়েছিল, তারা ধর্মঘটে অনড়। কারণ, সর্বদলীয় কমিটির উপরে তাদের আস্থা নেই। কিন্তু রবিবার কার্যত ডিগবাজি খেয়ে তারা জানিয়ে দেয়, ২৩ জুলাই পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত রাখা হচ্ছে। ওই দিন সর্বদলীয় কমিটির রিপোর্ট পেশ করার কথা। তার পরেই তারা বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ২৩ জুলাই সর্বদলীয় কমিটি বাসভাড়া বৃদ্ধির অনুকূলেই রিপোর্ট দেবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।
এ দিন বাস-মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “বাস-মালিকেরা যে-অসুবিধের কথা বলছেন, তা বাস্তবসম্মত। আমাদেরও সরকারি নিগমের বাস চালাতে গিয়ে একই রকম অসুবিধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন। আমি সে-কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”
বাস-মালিক সংগঠনগুলির নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বাসভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে তাঁদের দাবি যে যুক্তিসঙ্গত, এই প্রথম মন্ত্রী তা মেনে নিলেন। একই সঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। “সরকার ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। তার পরেও ভাড়া না-বাড়ালে আমরা তখন কোনও কথাই শুনব না। বাধ্য হব ধর্মঘট ডাকতে,” বললেন তপনবাবু।
তবে বাস-মালিকই জানান, ২৩ জুলাইয়ের পরেও নিজেদের দাবি আদায়ের ব্যাপারে সংগঠনগুলি কড়া অবস্থান নেবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy